আপডেট :

        দুই শতাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিলো যুক্তরাষ্ট্র

        প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ৪৪তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস

        সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন প্রার্থীরা

        দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী

        উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় আরও চার নেতাকে বহিষ্কার

        এআই কি প্রতারণায় দক্ষ হয়ে উঠছে

        নিউইয়র্কে বাংলা বইমেলা শুরু ২৪ মে, থাকছে দশ হাজার নতুন বই

        ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভবন বিক্ষোভকারীদের দখলে, ক্লাস বাতিল

        দেশের ৬৪ জেলায় তাপপ্রবাহ বেড়েছে,হচ্ছে মৃত্যু

        ইন্টারনেট বন্ধে ষষ্ঠবারের মতো শীর্ষে ভারত

        দুই দফায় বিতর্কে মুখোমুখি হচ্ছেন বাইডেন ও ট্রাম্প

        পুতিন এবং শি’র একে অপরকে পুরনো বন্ধু বলে অভিহিত করলেন

        সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য মানসম্মত শিক্ষার ব্যবস্থায় সমঝোতা স্মারক সই করেছে ইমো ও জাগো ফাউন্ডেশন

        চলতি বছরের আসন্ন বাজেটে জুলাই থেকে মেট্রোরেলের টিকিটের মূল্যে পরিবর্তন

        কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে তীব্র গরমে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অসুস্থ

        রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমবার চীন সফর

        হাতে ছয় আঙুল থাকায় ৪ বছরের এক কন্যা শিশুকে অপারেশনের সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে ঘটলো বিপত্তি

        প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটার উপস্থিতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ

        রিয়েলমি সি৬৫ বনাম ভিভো ওয়াই২৭এস: কোন ফোনের ফিচার বেশি উন্নত?

        প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে পাঁচ বছরের আয়কর রিটার্ন ও রেজিস্ট্রার ঘষামাজা করে আয়

৭ই নভেম্বরের চেতনায় জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন

৭ই নভেম্বরের চেতনায় জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন

১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর বাংলাদেশের সংগ্রামী জনগণ এক বিপ্লব সংঘটন করে। পুঞ্জিভূত ক্ষোভ বঞ্চনার অবসান ঘটাতে ও সুখী সমৃদ্ধ এক নতুন বাংলাদেশ গঠনের দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে তারা এই বিপ্লব ঘটান। জাতীয় ইতিহাসে এই বিপ্লব এক গৌরবজনক অধ্যায় সূচনা করে। এই বিপ্লব ছিল সিপাহী-জনতার সম্মিলিত প্রতিরোধ। এই বিপ্লব ছিল স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের রক্ষাকবচ।

৩রা নভেম্বর থেকে ৭ই নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে চলছিল। খালেদ মোশারফের সামরিক অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয় ও খালেদ মোশারফ নিহত হন। ৩রা নভেম্বর থেকে ৭ই নভেম্বর, পাঁচদিন বাংলাদেশে কোন সরকার ছিল না বললেও অত্যুক্তি হয় না। প্রশাসন, আইন-আদালত, বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সর্বত্র চলছিল স্থবিরতা। আধিপত্যবাদী আন্তর্জাতিক চক্রান্ত নস্যাৎ করে এ দেশের জনগণ ৭ নভেম্বর বিপ্লব ঘটান। এই বিপ্লব বাংলাদেশকে নতুনভাবে জাগিয়ে তোলে। আমরা যেন আপন সত্তা ফিরে পেলাম। স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা পেল। পরনির্ভরশীল তাবেদারসূলভ দৃষ্টিভঙ্গি ও মনোভাবের অবসান ঘটে সত্যিকার স্বাধীন জাতি হিসেবে বাংলাদেশের চেহারা বিশ্ব দরবারে ফুটে ওঠে। ঐদিন বাংলাদেশের জনগণ সেনাবাহিনীর সাথে সংহতি প্রকাশ করে সিপাহী জনতা মিলিত হয়ে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করেন।

জিয়াউর রহমান ছিলেন একজন খাঁটি মানুষ, খাঁটি মুক্তিযোদ্ধা। তিনি মুক্ত হয়ে এদেশের মানুষ, সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি সর্বক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আনয়নে আত্মনিয়োগ করেন। জিয়াউর রহমান ক্ষমতা লাভের পর দেখতে পান বিশৃঙ্খলাপূর্ণ ও শান্তি-শৃঙ্খলাহীন একটি রাষ্ট্র যেখানে মানুষের অধিকার, মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত। গণতন্ত্র নির্বাসিত। যে আশা নিয়ে মানুষ স্বাধীনতাযুদ্ধে ৩০ লাখ জীবন বিসর্জন দিয়েছিলেন, সে আশায় গুড়ে বালি। ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও গণআকাক্সক্ষা নিরসনে সরকার বাস্তবসম্মত কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় মানুষ হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে। জিয়াউর রহমান মানুষের নারী-নক্ষত্রের সংবাদ নিয়ে কার্যকর ও যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে এগিয়ে যান। একটি আত্মনির্ভরশীল ক্ষুধামুক্ত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনে সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। স্বাধীনতার ঘোষক মহান মুক্তিযোদ্ধা শহীদ জিয়া সর্বক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন ও কঠোরহস্তে সমাজ বিধবংসী কর্মকান্ডকে নিয়ন্ত্রণে আনেন। মানুষ আবার ফিরে পায় তাদের অধিকার ও মর্যাদা। দেশকে শান্তি ও স্থিতিশীলতার আবাসভূমিতে পরিণত করতে কখনো কঠিন ও কখনো নরম হয়ে দেশকে এগিয় নিতে প্রচেষ্টা চালান।

১৫ই আগস্টের দুঃখজনক ঘটনার পর আওয়ামী লীগের নেতারা সরকার গঠন করে। খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে যে সরকার গঠিত হয় তারা সকলেই ছিলেন আওয়ামী লীগ। খালেদ মোশারফের সামরিক অভ্যুত্থানের পর খন্দকার মোশতাক পদত্যাগ করলে বিচারপতি সায়েম রাষ্ট্রপতি হন। পূর্বেই বলেছি, পাঁচদিন বাংলাদেশে যেন কোন সরকার ছিল না, মন্ত্রিপরিষদ ছিল না। সেনাবাহিনীর মধ্যে জিয়াউর রহমানের ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতার সাথে এদেশের সাধারণ জনগোষ্ঠীর সমর্থন ও সহযোগিতা তাকে ক্ষমতার সর্বোচ্চ শিখরে টেনে নেয়। জিয়ার দেশপ্রেম, সততা ও মানবাধিকারের প্রতি অনুরাগ তাকে মানুষের মনের মণিকোঠায় স্থান দেয়। ৭ নভেম্বরের মধ্যরাতে সেনাসদস্যরা ব্যারাক থেকে বেরিয়ে পড়েন। তারা জিয়াকে গৃহবন্দি থেকে মুক্ত করেন ও সম্মিলিত স্লোগান দিতে থাকেন। প্রত্যুষে ঢাকার রাস্তায় জনতার ঢল নামে। জনতা সিপাহীদের গাড়িতে চড়ে স্লোগানে স্লোগানে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করে তোলে। মানুষ যেন মুক্তির স্বাদ পায়। ট্যাংক, লড়ি ও অস্ত্রসন্ত্রে সজ্জিত হয়ে সিপাহীরা রাস্তায় টহল দিতে থাকেন। সিপাহী-জনতার মিলনে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য সৃষ্টি হয়।

মুক্ত হয়ে জিয়াউর রহমান দেশের শাসনভার ও সেনা বাহিনীর চিফ অব স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব নেন। বর্তমানে জিয়াউর রহমানকে নানারকম অপবাদ ও দোষ দেয়া হয়। কিন্তু এদেশের মানুষ প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী যে, তিনি সখ করে বা অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ক্ষমতা গ্রহণ করেননি। এক ঐতিহাসিক প্রয়োজনে এদেশের মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে তিনি দেশের দুঃসময়ে শাসনক্ষমতা হাতে নেন। তিনি তার সততা, দক্ষতা, যোগ্যতা ও সর্বোপরি সকল শ্রেণীপেশার মানুষের আকাক্সক্ষা ও প্রত্যাশা পূরণে দেশের দায়িত্ব হাতে নেন। নির্লোভ খাঁটি মানুষটির ক্ষমতার প্রতি কোন আকর্ষণ ছিল না। স্বাধীনতার পর তিনি রাজনীতিতে যুক্ত না হয়ে কর্মক্ষেত্রে ফিরে যান। রাজনীতির প্রতি আকর্ষণহীন এই ব্যক্তিত্ব মানবসেবার ব্রত নিয়ে দেশের শাসনভার হাতে নেন। তার মিশন ও ভিশন ছিল এদেশের ভাগ্যাহত দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। ক্ষমতা হাতে নিয়ে তার যুগান্তকারী ১৯ দফা কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেন। নিজে সম্পদের পাহাড় গড়ে না তুলে এদেশের মানুষকে সম্পদশালী, স্বাবলম্বী ও নিজ পায়ে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করেন। ১৯ দফা ছিল এদেশের গণমানুষের মুক্তির সনদ। সুষম উন্নয়ন পরিকল্পনা তিনি এদেশের গ্রামে গঞ্জে ছড়িয়ে দেন। ঢাকা কেন্দ্রিক উন্নয়ন ভাবনা ত্যাগ করে গ্রামীণ জনপদের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। এদেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর মহান ব্রত ছিল তার চালিকা শক্তি।

৭ই নভেম্বর যে বিপ্লব সংঘটিত হয় তার সুফল জিয়াউর রহমানের অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রচেষ্টায় স্বার্থকতা লাভ করতে থাকে। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটিকে তিনি আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রূপ দিতে কঠোর পরিশ্রম করতে থাকেন। দেশের মানুষ ভালোবেসে তাকে ক্ষমতায় বসিয়ে ছিল, যা ছিল আমানত স্বরূপ। ক্ষমতা নামক আমানত সাদরে গ্রহণ করে জিয়াউর রহমান সর্বোচ্চ বিশ্বস্ততা ও আন্তরিকতা সহকারে কাজ করে মানুষের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও সমর্থন আদায় করেন। তিনি সংকীর্ণতা পরিহার করে, ক্ষমতা কুক্ষীগত না করে রাজনীতিকে অবাধ ও সর্বব্যাপক করে তোলেন। তিনি একজন সত্যিকার রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে নিজেকে মেলে ধরেন। তিনি জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে ফেরত দিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেন। সকল শ্রেণীপেশার মানুষকে সংঘবদ্ধ করে ৭ নভেম্বরের বিপ্লব ও সংহতির চেতনা সমুন্নত করে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেন। জিয়া মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেন দেশকে এগিয়ে নিতে গণতান্ত্রিক সরকার পদ্ধতির বিকল্প নেই। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর শনৈ শনৈ উন্নতি অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি দেখে তিনি দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে কাজ শুরু করেন। একদলীয় বাকশাল পদ্ধতি অবলুপ্ত করে তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করেন। দেশের রাজনীতিকে স্বচ্ছ, নির্মল ও সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য করতে নিরলস পরিশ্রম করেন। রাজনৈতিক দলগুলোকে সম্পৃক্ত করে সংলাপ শুরু করেন। ধীরে ধীরে রাজনীতি রাহুমুক্ত হয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও সর্বজনীন রূপ লাভ করে। সকল দলের জন্য রাজনৈতিক কর্মকান্ড উন্মুক্ত করে দেন। তিনি মুসলিম বিশ্বের সাথে যেমন সৌহার্দ-সম্প্রীতি স্থাপনে কাজ করেন, তেমনি পশ্চিমা গণতান্ত্রিক বিশ্বের সাথেও নিবিড় সম্পর্ক স্থাপনে কাজ করেন। তিনি জানতেন, দেশের উন্নতি অগ্রগতির জন্য গণতান্ত্রিক পশ্চিমা বিশ্বের সাহায্য সহযোগিতা আবশ্যক। সেকারণে অতি দ্রুত বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক শাসন প্রবর্তনে জাতীয় নির্বাচন দেন।

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিজ আদর্শ ও বাংলাদেশের মানুষের প্রাণপ্রিয় রাজনৈতিক সংগঠন বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন-যার মূল চেতনা বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ। এটি ছিল তার হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা ও দেশপ্রেমের বহিপ্রকাশ। মানুষের ঐক্যবদ্ধ চেতনার বহিপ্রকাশ ঘটে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের মধ্যে দিয়ে। জাতিরাষ্ট্র গঠন করে শহীদ জিয়া গণমানুষের রাজনৈতিক পরিচয় সুস্পষ্ট করেন। বাঙালি, অবাঙালি, উড়াও, সাঁওতাল, চাকমা, মনিপুরি, খাসিয়া প্রভৃতি জনগোষ্ঠী একটি নামে পরিচিতি পায় আর তা হলো বাংলাদেশী। কোন সম্প্রদায়কে আহত না করে সকলের সম্মিলিত পরিচয় স্পষ্ট হয়। সকলের ধর্মীয় পরিচয় অক্ষুন্ন রেখে রাজনৈতিক পরিচয় ফুটে ওঠে। ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ বর্জন করে ভাষা, ধর্ম, সাহিত্য, সংস্কতি, বিশ্বাস ও ঐতিহ্য সমন্বয়ে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদকে সংবিধানে প্রতিস্থাপন করে দেশের মানুষের আকাক্সক্ষা ও প্রত্যাশাকে সম্মান জানান ও মানুষের ভালোবাসা ও সমর্থন আদায় করেন। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠার সাথে আমাদের নৃতাত্ত্বিক পরিচয়ও অক্ষুন্ন থাকে ও রাজনৈতিক পরিচয় স্পষ্ট হয়।

১৯৭৪ সালের ২৪শে জানুয়ারি বাকশাল গঠন করা হয়। এতে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে গণতন্ত্রের সমাধি রচিত হয়। ১৮৭১ সালে ব্রিটিশরা এদেশে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন চালু করেন। বাকশাল গঠনে শতবছরের পুরানো ইউনিয়ন পরিষদ উঠে যাবে বলে উল্লেখ করা হয়। জিয়াউর রহমান উপলব্ধি করেন, জনগণের হাতে ক্ষমতা দিতে হলে স্থানীয় সরকার পদ্ধতি চালু রাখা আবশ্যক। সেকারণে তিনি স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে কার্যকর করে গণতন্ত্রকে তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত করেন। গণতন্ত্রকে সুসংহত ও শক্তিশালী করতে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি বিকাশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার উপর জোর দেন। দলীয়করণ জাতীয় ঐক্য ও সংহতি বিনষ্ট করে; এটা উপলব্ধি করে জেনারেল জিয়া সকল প্রতিষ্ঠানকে নির্দলীয়করণ করে সকলের জন্য রাষ্ট্রীয় সেবাপ্রাপ্তির সুযোগ-সুবিধা উন্মুক্ত করেন।

সংবিধানে 'বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম' সংযুক্ত করে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটান। তবে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি অবিচার না করে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করেন। দেশকে অর্থনৈতিকভাবে ও খাদ্যে স্বয়ংস্পূর্ণ করতে সর্বোত্তম প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখেন। এদেশের মানুষের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার সুব্যবস্থা করতে মনোযোগ দেন। প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করে নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষমতায়নে অবদান রাখেন।স্বাধীনতার পরে যে লুটেরা ধনীক গোষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটে জিয়াউর রহমানের ক্ষমতালাভের পর তাদের বিকাশরুদ্ধ হয়। ঐসব লুটেরা গোষ্ঠী শহর, বন্দর, গ্রাম, গঞ্জে দখলের রাজনীতি চালু করে বেপরোয়া লুটপাট, দখলদারী ও ক্ষমতা অপব্যবহার অবদমিত হয়। চোরাচালানী, মুনাফাখোরী, ব্রিফকেস ব্যবসা, রিলিফ সামগ্রী চুরি প্রভৃতি অবৈধ ও অনৈতিক কর্মকান্ড কঠোর হস্তে দমন করা হয়। দেশ রক্ষা পায় আত্মীয়করণ, দলীয়করণ, স্বজনপ্রীতি, আঞ্চলিকতা ও ব্যক্তিপূজার হাত থেকে। মানুষ প্রাণভরে নিশ্বাস নিতে শুরু করে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, বাংলাদেশী জাতীয়বাদ ও সংবিধানে বিসমিল্লাহ সংযোজন, ১৯ দফা কর্মসূচির মধ্যে খালখনন কর্মসূচি ও ওআইসির সাথে ঘনিষ্ঠতা, ফিলিস্থিনিদের সাথে সংহতি প্রকাশ, সার্কের প্রতিষ্ঠায় কার্যকর অবদান, আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগঠন, দেশে শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে দুর্নীতি মুক্তকরণ, তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ ঘুচিয়ে স্বাবলম্বীকরণে প্রচেষ্টা, রক্ষীবাহিনী গণবাহিনীর অত্যাচার, নির্যাতন, গুম, খুনের রাজনীতির অবসান ঘটিয়ে দেশে শান্তিশৃঙ্খলা পুনস্থাপন করে বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে নতুন রূপে উপস্থাপন করেন। মানুষ তার হৃতগৌরব ও মর্যাদা ফিরে পায়।

বর্তমান বাংলাদেশ নানামুখী সংকটের সম্মুখীন। রাজনৈতিক অবক্ষয়, সমাজ কাঠামো ভেঙে পড়েছে, মানবিক মর্যাদা ও মূল্যবোধগুলো ধ্বংসপ্রাপ্ত, মানবাধিকার ও রাজনৈতিক অধিকার পদদলিত, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, লুটপাট, দখলবাণিজ্য, খুন, গুম, রাহাজানি, চাঁদাবাজি, প্রভৃতি অবলীলায় চলছে। শিশু নির্যাতন ও পিটিয়ে খুন করা হচ্ছে। শিশুদের ধর্ষণ চলছে অবলীলায়। নিয়োগ বাণিজ্য ভয়ঙ্কররূপ ধারণ করছে। পিয়ন, দারোয়ান, মালি, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশের কনস্টেবল, বিজিবি জোয়ান প্রভৃতি ছোটখাটো চাকরি পেতে হলেও ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়; কোন কোন ক্ষেত্রে যা বর্তমানে ৮/১০ লাখে দাঁড়িয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, নতুন পে-স্কেলে বেতন দ্বিগুণ হয়েছে। প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষক নিয়োগে ৭ থেকে ১২/১৪ লক্ষ টাকা লাগছে। নিয়োগ বাণিজ্যে কেউ কোটিপতি হচ্ছে আবার কেউ ভূমিহীনে পরিণত হচ্ছে। সাধারণ মানুষের অবস্থা অত্যন্ত সঙ্গীন। মধ্যবিত্তরা নিম্নবিত্তে ও নিম্নবিত্তরা নিঃস্ব, নিঃসম্বল হচ্ছে। গণতন্ত্রের অভাবে সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে এখনকার বাংলাদেশ। স্বনির্বাচিত সরকার ও সংসদ চলছে খেয়াল খুশিমত। বিরোধীদল সরকারি দল একাকার হয়ে এক কিম্ভূতকিমাকার সরকার দেশ চালাচ্ছে। টিআইবি যাকে পুতুল নাচের নাট্যশালা বলেছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। মানুষের জানমালের নিরাপত্তার সাথে বিদেশীদের নিরাপত্তাও দারুণভাবে বিঘ্নিত। অতি সম্প্রতি দুজন বিদেশী খুন হয়েছে, যে কারণে ১২টি দেশ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। পশ্চিমা ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোর নিষেধাজ্ঞা দেশকে নাজুক অবস্থায় ফেলেছে। ধর্ষণ, নির্যাতন, নিপীড়ন আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। মানুষ ঘরে-বাইরে অনিরাপদ ও বিপদসঙ্কুল। ঢাকায় আশুরার মিছিলে বোমা হামলায় ১ জন নিহত ও মানিকগঞ্জে আশুরায় মেলায় বিস্ফোরণে ১ জন নিহত। ব্লগার ও প্রকাশক খুনের ঘটনা ঘটছে। দেশে সব বেনজির ও ভয়াবহ ঘটনা ঘটে চলেছে। আইনের শাসনের অভাবে দুষ্কৃতশারী, সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। একের পর এক হত্যা, গুম, খুন ঘটেই চলেছে। এর আশু সমাধান আবশ্যক। সরকার সমস্যা, সংকট সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ না নিয়ে দোষারোপের রাজনীতি চালু রাখায় দেশের মানুষ বিপদগ্রস্ত।

সরকারি তরফ থেকে এসব ঘটনায় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র খুঁজে বেড়ানো হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও দেশের মানুষ সরকারের কর্মকান্ডে খুশি নয়। সকলের প্রত্যাশা, উপদেশ ও তাগিদ উপেক্ষা করে সরকার গায়ের জোরে শাসন করে চলেছে। ৫ জানুয়ারির অংশগ্রহণহীন একদলীয় ভোটারবিহীন ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের পর সকলে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে চলেছে। সরকার দেশের মানুষের আকাঙ্খা ও প্রত্যাশা উপেক্ষার সাথে আন্তর্জাতিক মহলের উপদেশ ও আহবানকে বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করে প্রশাসনের সহায়তায় দেশ পরিচালনায় বদ্ধপরিকর। দু-চারটি দেশের সাথে সম্পর্ক রেখে সারা দুনিয়ার মতামত, উপদেশ ও তাগিদ উপেক্ষা করায় আন্তর্জাতিক মহল বিরক্ত। গণতন্ত্রের অভাবে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ক্রমান্বয়ে মাথা চাঁড়া দিয়ে উঠেছে।

সমগ্র জাতি আজ পরিষ্কার দুভাগে বিভক্ত। এই ভয়াবহ সঙ্কট থেকে দেশকে বাঁচাতে হলে জাতীয় ঐক্য ও সংহতি আবশ্যক। দেশের ভয়াবহ সংকটে শহীদ জিয়ার মতো সৎ, আদর্শ, দুরদর্শী, নির্ভিক দেশপ্রেমিক রাষ্ট্রনায়ক আবশ্যক। আজ তিনি নেই তবে তার আদর্শ চির অম্লান, জাগরুক হয়ে আছে। তার সুযোগ্য উত্তরসূরি বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান শহীদ জিয়ার আদর্শ বাস্তবায়নে আগুয়ান। আন্তর্জাতিক মহলের তাগিদ, দেশের মানুষের আকাঙ্খা ও টিআইবির প্রেসক্রিপশান অনুসারে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনই পারে দেশকে সংকট থেকে উত্তরণ ঘটাতে। অবিলম্বে সরকারের উচিত হবে নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একটি সর্বগ্রহণযোগ্য সরকার পদ্ধতি উদ্ভাবনে সংলাপ আয়োজন। জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য সংলাপ আবশ্যক। সংলাপের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা ছিল ৭ই নভেম্বরের নিগুঢ় চেতনা। জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠায় বিএনপি তথা বেগম খালেদা জিয়া বারবার যে আহবান জানাচ্ছে, সে আহবানে সাড়া দিন, মানুষকে বাঁচতে দিন।

লেখক: মারুফ খান - প্রবাসী সংগঠক, সাবেক ছাত্রনেতা।

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত