আপডেট :

        দুই শতাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিলো যুক্তরাষ্ট্র

        প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ৪৪তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস

        সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন প্রার্থীরা

        দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী

        উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় আরও চার নেতাকে বহিষ্কার

        এআই কি প্রতারণায় দক্ষ হয়ে উঠছে

        নিউইয়র্কে বাংলা বইমেলা শুরু ২৪ মে, থাকছে দশ হাজার নতুন বই

        ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভবন বিক্ষোভকারীদের দখলে, ক্লাস বাতিল

        দেশের ৬৪ জেলায় তাপপ্রবাহ বেড়েছে,হচ্ছে মৃত্যু

        ইন্টারনেট বন্ধে ষষ্ঠবারের মতো শীর্ষে ভারত

        দুই দফায় বিতর্কে মুখোমুখি হচ্ছেন বাইডেন ও ট্রাম্প

        পুতিন এবং শি’র একে অপরকে পুরনো বন্ধু বলে অভিহিত করলেন

        সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য মানসম্মত শিক্ষার ব্যবস্থায় সমঝোতা স্মারক সই করেছে ইমো ও জাগো ফাউন্ডেশন

        চলতি বছরের আসন্ন বাজেটে জুলাই থেকে মেট্রোরেলের টিকিটের মূল্যে পরিবর্তন

        কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে তীব্র গরমে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অসুস্থ

        রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমবার চীন সফর

        হাতে ছয় আঙুল থাকায় ৪ বছরের এক কন্যা শিশুকে অপারেশনের সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে ঘটলো বিপত্তি

        প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটার উপস্থিতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ

        রিয়েলমি সি৬৫ বনাম ভিভো ওয়াই২৭এস: কোন ফোনের ফিচার বেশি উন্নত?

        প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে পাঁচ বছরের আয়কর রিটার্ন ও রেজিস্ট্রার ঘষামাজা করে আয়

হলিউড সাইনের শতবছরের ইতিহাস

হলিউড সাইনের শতবছরের ইতিহাস

হলিউড সাইনবোর্ডকে সংক্ষেপে হলিউড সাইন বলা হয়। সাইনটি হলিউডকে পরিচিতি এনে দিয়েছে সারা পৃথিবীতে। যে সাইনটি দেখলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে হলিউড চলচ্চিত্রের চোখ ধাঁধাঁনো কোন এ্যাকশান বা লাস্যময়ী কোনো অভিনেত্রীর মিষ্টি চেহারা কিংবা কোনো হার্টথ্রব নায়কের নাম। কিন্তু নজর কাড়া এই সাইনবোর্ডের পেছনে রয়েছে লম্বা ইতিহাস, রয়েছে শত সহস্র মানুষের প্ররিশ্রম, রয়েছে আত্মত্যাগ।
 

মাউন্ট লির শীর্ষে অবস্থিত যে সাইনটি দেখলে মানুষের চোখ আটকে যায় মাছির মতো আসুন জেনে নেই সেই সাইনটি স্থাপনের শতবর্ষী ইতিহাস।

 যুক্তরাষ্ট্রের একটি রাজ্য ক্যালিফোর্নিয়া, যা আয়তনে বাংলাদেশের প্রায় তিন গুণ। যথাযথ ব্যবস্থপনার সুবিধার্থে এই রাজ্যটিকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। নর্দান এবং সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া। লস এঞ্জেলেস সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার বৃহত্তম শহর এবং যুক্তরাষ্ট্রের  দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। নিউইয়র্ক সিটির পরেই এর অবস্থান। দৃষ্টিনন্দন রাজ্য ক্যালিফোর্নিয়ার সবচেয়ে মন ভোলানো শহর হিসেবে লস এঞ্জেলেস কিছুটা বিশেষ অবস্থান নিয়েই আছে। এ শহরেই রয়েছে চলচ্চিত্র শিল্পের স্বর্গ হলিউড, আছে ডিজনিল্যান্ড,  অস্কার আয়োজনকারী কোডাক থিয়েটার, ইউনিভার্সাল স্টুডিওসহ নামকরা সব স্টুডিও, আর অনন্য সৌন্দর্যের আধার প্রশান্ত মহাসাগর।

 লস এঞ্জেলেসকে বলা হয় বিশ্বের সৃজনশীল রাজধানী। এখানকার অধিবাসীদের প্রতি ছয়জনের একজন কোনো না কোনো সৃজনশীল কাজের সঙ্গে যুক্ত। এত এত দর্শনীয় নিদর্শন এই শহরে যে ‘কোনটা রেখে কোনটা দেখি’ অবস্থা।

 গোটা লস এঞ্জেলেসে যেসব দর্শনীয় নিদর্শন রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম চিত্তাকর্ষক হচ্ছে হলিউড সাইন। ১৯২৩ সালে তৈরি করা সাইনটির নির্মাণকালীন নাম ছিলো হলিউড ল্যান্ড। পৃথিবীর অন্যতম বিশাল এই সাইনবোর্ডটির নেপথ্যে রয়েছে বহু পিলে চমকানো তথ্য। গ্রিফিথ পার্কের মাউন্ট লি নামের পাহাড়ের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত এ সাইনবোর্ডটির প্রতিটি অক্ষরের উচ্চতা ৪৫ ফুট অর্থাৎ ছয়তলা উঁচু দালানের সমান এবং প্রস্থ ৩১ থেকে ৩৯ ফুট। দৈত্যাকৃতির এই সাইনবোর্ডটি পাহাড়ারের শীর্ষে স্থাপিত হওয়ায় বহুদূর থেকে দেখা যায়। রাতের বেলায়ও এটি যাতে দিনের মতো স্পষ্ট দেখায় সেজন্য ৪ হাজার বৈদ্যুতিক বাতি লাগানো আছে! হলিউড সাইনের ইতিহাস বেশ চমকপ্রদ।

 ১৯২০ সালের গোড়ার দিকে `দ্যা লস এঞ্জেলেস টাইমস` পত্রিকার মালিক হ্যারি চ্যান্ডলার কয়কেজন ধনাঢ্য ব্যবসায়ীকে নিয়ে ডেভেলপার ব্যবসায় নেমেছিলেন। ব্যবসায়ী গ্রুপটি মাউন্ট লির পাদদেশে বিপুল পরিমাণে জায়গা কিনে বাড়ি তৈরির কাজে হাত দেন। প্রকল্পের নামকরণ করা হয় `হলিউড ল্যান্ড`। নিজেদের কোম্পানির নামকে অক্ষয় ও ক্রেতাদের কাছে আকর্ষণীয় করতে বেশ জমকালো একটি সাইনবোর্ড তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় কোম্পানিটি। ওই সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ১৯২৩ সালে বিখ্যাত ডিজাইনার থমাস ফিস্কের ডিজাইনকৃত হলিউড ল্যান্ড লেখা ১৩ অক্ষরের সাইনবোর্ড তৈরি করে পাহাড়ের শীর্ষে স্থাপন করা হয়। মাত্র বছর দুয়েকের জন্য স্থাপন করা হলেও সাইনবোর্ডটি আর সরানো হয়নি।

 হলিউড সাইনটিকে এক সময় অপয়া হিসেবে বিবেচনা করা হতো। অবশ্য এর পেছনে কিছু কারণও ছিল। ১৯৩২ সালে হলিউড অভিনেত্রী `পেগ এন্টউইসটল` হলিউডের এইচ অক্ষরের ওপর থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন। এরপর ১৯৪০ সালে ওই সাইনের কেয়ারটেকার আলবার্ট কোথ পাহাড়ের ওপর দিয়ে গাড়ি চালানোর সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ওই এইচ অক্ষরের ওপর পড়েছিলেন। ওই দুর্ঘটনায় মি. কোথ বেঁচে গেলেও এইচ অক্ষরটি দুমড়ে মুচড়ে পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল অনেক দিন।


১৯৪৯ সালে হলিউড চেম্বার অব কমার্স `ল্যান্ড` শব্দটি বাদ দিয়ে এটিকে হলিউড সাইন হিসেবে প্রতিষ্ঠার উদ্যেগ নেয়। কাঠ এবং টিনের শিট দিয়ে তৈরি করা হয় সাইনটি । তবে অল্পদিনেই হলির `ও` ভেঙে ইউ আকার ধারণ করে এবং `উড`-এর একটা `ও` গায়েব হয়ে যায়।

 ১৯৭৮ সালে হলিউড চেম্বার মোটা অঙ্কের ডলার খরচ করে অস্ট্রেলিয়া থেকে স্টিল শিট এনে সাইনটি নতুন করে স্থাপনের কাজ শুরু করে। আর ওই বছর ১৪ নভেম্বর হলিউডের ৭৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে হলিউড সাইন উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু অত্যন্ত বেদনাদায়ক যে উদ্বোধনের কয়েকদিন পরেই একজন স্কুল ছাত্রী এর ওপর থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করে। এরপর থেকে সাইনটির কাছে যাওয়া একেবারেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

 এক ডেভেলপার কোম্পানি ঘরবাড়ি নির্মাণসহ এলাকা উন্নয়নের নামে বিশ্বখ্যাত হলিউড সাইন সরিয়ে ফেলার পরিকল্পনা করে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিত্ব করা হলিউড সাইনটি রক্ষার জন্য স্থানীয়রা উদ্যেগ গ্রহণ করেন। জায়গাটি কিনে নেওয়ার জন্য `দ্যা ট্রাস্ট ফর পাবলিক ল্যান্ড` নামে একটি ফান্ড গঠন করা হয়।

 অভিনেতা ও ক্যালিফোর্নিয়ার তৎকালীন গভর্নর আর্নল্ড শোয়ার্জনিগারের উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চাশটি রাজ্য ও কয়েকটি বিদেশি রাষ্ট্র থেকে সাহায্য আসে। চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িত শিল্পী এবং কলাকুশলীসহ হাজারো মানুষ এই সাইন রক্ষায় মাঠে নামেন। ওই সময় বিশ্বখ্যাত প্লেবয় ম্যাগাজিনের প্রতিষ্ঠাতা হিউ হেফনার এককভাবে ৯ লাখ ডলার অনুদান দেন। বিভিন্ন জনের কাছ থেকে অনুদান নিয়ে ১ কোটি ২৫ লাখ (১২.৫ মিলিয়ন) ডলারের সংস্থান করে ১৩৮ একর ভূমি রক্ষা করা হয়। একই সঙ্গে আগামী পৃথিবীর জন্যই রক্ষা করা হয় হলিউড সাইন।

 বর্তমানে হলিউড সাইন হলিউডের নিজস্ব সম্পত্তি। এখানে ঘর বাড়ি করার জন্য আর কোনো ডেভেলপার কোম্পানি ছুটে আসে না। হলিউড যতদিন থাকবে ততদিন হলিউড সাইনটিও হয়তো টিকে থাকবে।

 
লেখক : শিক্ষার্থী, টেলিভশন ও ফিল্ম স্ট্যাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত