আপডেট :

        কিছু জেলার স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা আগামীকাল বন্ধ

        লাউয়াছড়ায় শতাধিক গাছ বিধ্বস্ত

        শহীদ লেফটেন্যান্ট শেখ জামালের ৭১তম জন্মদিন উপলক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন

        কোনো জেলা তাপমাত্রা যদি ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে উঠে, সেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে

        কোনো জেলা তাপমাত্রা যদি ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে উঠে, সেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে

        পদ্মা সেতুতে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা টোল আদায়ের মাইলফলক অর্জন

        প্রচণ্ড গরমে মৃত্যু হলো স্কুল শিক্ষকের

        মে মাস থেকে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স ও এয়ার চায়না বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম শুরু করবে

        দিল্লি প্রধান লাভলির পদত্যাগ

        দিল্লি প্রধান লাভলির পদত্যাগ

        বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর মন্তব্য

        আজ বিকেল ৪টায় শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচ

        ব্যাংক খাতে ডলারের সরবরাহ বাড়ায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির চেয়ে মার্চে এলসি খোলা এবং নিষ্পত্তি উভয়ই বেড়েছে

        বিশ্ব চলচ্চিত্রের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার অস্কার

        চট্টগ্রামে গণপরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ৪৮ ঘণ্টা ধর্মঘট চলছে

        সমকামী সম্পর্ককে অপরাধ ঘোষণা করে আইন পাস করেছে ইরাকের পার্লামেন্ট

        আগামী নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে চীন প্রভাব বিস্তার ও হস্তক্ষেপের চেষ্টা করছে

        ৫ দিনের মধ্যে কমতে পারে দিনের তাপমাত্রা

        আজ সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত

        গরমে জনজীবনে হাঁসফাঁস অবস্থা

হজ : মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের প্রতীক

হজ : মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের প্রতীক

‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বণি দিয়ে বিশ্বের সব প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন হজ আদায়কারীগণ পবিত্র আরব ভূমিতে। সাদা-কালো সব বর্ণের, সব গোত্রের মুসলমানগণ মহান আল্লাহ তাআলার সান্নিধ্য লাভের জন্য সাদা কাপড় গায়ে দিয়ে লাব্বাইক বলে জমায়েত হন এক প্লাটফর্মে।হাদিস শরিফে সমস্ত মুসলিম উম্মাহকে একটি দেহের সাথে তুলনা করা হয়েছে। কারণ এই জাতি সব বিবাধ ভুলে গিয়ে দলমত-জাতিবর্ণ নির্বিশেষে মহান প্রভুর কুদরতি পায়ে মাথা অবনত করে সেজদায় ইবাদতে মগ্ন হয়। প্রত্যেক ধর্মেরই কিছু নির্দিষ্ট আচার-অনুষ্ঠান আছে যার দ্বারা সেই ধর্মের অনুসারীগণ এক স্থানে সমবেত হন। একে অন্যের সাথে সাক্ষাৎ হয়। কিন্তু পৃথিবীর সব ধর্মের চেয়ে ইসলাম ধর্ম তার অনুসারীদের একত্রিকরণের জন্য রেখেছে ব্যতিক্রম ব্যবস্থা।হজ হচ্ছে ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটা আর্থিক ও শারীরিক ইবাদতও বটে। হজের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে ইচ্ছা করা, সংকল্প করা। শরিয়তের পরিভাষায় হজের মাস সমূহে বিশেষ কিছু কার্য সম্পাদনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট কিছু স্থানের জিয়ারত করাকে হজ বলে।হজের মাসসমূহ : শাওয়াল, যিলক্বাদাহ ও যিলহাজ্জার দশ দিন। বিশুদ্ধ বর্ণনা মতে হজ যখন ওয়াজিব হয় তখনই পালন করা এবং একবারই পালন করা ফরজ।হজ ফরজ হওয়ার শর্ত আটটি : (১) মুসলমান হওয়া (২) জ্ঞানসম্পন্ন হওয়া (৩) বালেগ হওয়া (৪) স্বাধীন হওয়া (৫) হজের সময় হওয়া (৬) মধ্যম ধরনের ব্যয় হিসেবে সফরের ব্যয় বহনের সামর্থ্য থাকা, যদি হজ পালনকারী মক্কা শরিফে অবস্থান করে তবুও (৭) যারা মক্কা শরিফের বাহিরে থাকেন তাদের জন্য হজ পালনের শর্ত হল মালিকানা বা ভাড়া সূত্রে স্বতন্ত্রভাবে একটি বাহন বা অন্যকিছু ব্যবহারের সামর্থ্য থাকা যেমন : আমাদের দেশের হাজিগণ বিমান ব্যবহার করে থাকেন। তবে কেউ যদি বিনিময় ছাড়া তার বাহন বা সওয়ারি ব্যবহারের অনুমতি দেয় তাহলে তা সামর্থ্য হিসেবে গণ্য হবে। যারা মক্কার আশপাশে অবস্থান করেন তাদের উপর তখন হজ ফরজ হয়। যখন তারা কষ্ট সহ্য করে নিজ শক্তিতে পায়ে হেঁটে হজ করতে পারে। কিন্তু হাঁটতে সক্ষম না হলে সেই ব্যক্তি মক্কার অধিবাসী হোক বা না হোক তার জন্য অবশ্যই বাহনের প্রয়োজন হবে। (৮) অমুসলিম দেশে ইসলাম গ্রহণকারী ব্যক্তির “হজ ইসলামের একটি রুকন (ফরজ)” একথা জানা থাকা বা সে ব্যক্তি মুসলিম দেশের অধিবাসী হওয়া।হজ ওয়াজিব হওয়ার শর্ত পাঁচটি : (১) সুস্থ থাকা (২) হজে যাওয়ার বাহ্যিক বাধা দূরিভূত হওয়া (৩) রাস্তাঘাট নিরাপদ থাকা (স্থল ও সামুদ্রিক পথে যদি অধিকাংশ লোক নিরাপদে ফিরে আসে তবেই রাস্তা নিরাপদ বলে ধর্তব্য হবে।) (৪) মহিলাগণ তাদের ইদ্দত অবস্থায় না থাকা (৫) নারীর বেলায় হজে তার সাথে একজন মুসলমান আস্থাভাজন, জ্ঞানসম্পন্ন, বালেগ মাহরাম পুরুষ বা স্বামী থাকা। মাহরাম ব্যক্তি স্তন্যসূত্রে মাহরাম হতে পারে অথবা বৈবাহিক সূত্রেও হতে পারে।চারটি কাজে হজ পালন : চারটি কাজ করলে স্বাধীন ব্যক্তির হজের ফরজ বিশুদ্ধভাবে পালিত হয়। এক. ইহরাম। দুই. ইসলাম। এ দুটি হল হজের শর্ত অতঃপর হজের অপর দুই ফরজ পালন করা। অর্থাৎ যিলহজের নবম তারিখে সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে যাওয়ার পর থেকে কোরবানির দিনের ফজর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে অন্তত এক মুহূর্ত আরাফাতের ময়দানে ইহরাম অবস্থায় থাকা। তবে শর্ত হল এর পূর্বে ইহরাম অবস্থায় স্ত্রী সহবাস না করা চাই। দ্বিতীয় ফরজ হল তাওয়াফে যিয়ারতের অধিকাংশ চক্কর যথাসময়ে অর্থাৎ দশম তারিখের ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পর পালন করা।হজের ওয়াজিবসমূহ : (১) মিক্বাত হতে ইহরাম বাধা (২) সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা (৩) যিলহজের দশ তারিখে ফজরের সময় শুরু হওয়ার পর এবং সূর্যোদয়ের পূর্বে মুযদালিফায় থাকা (৪) পাথর নিক্ষেপ করা (৫) হজে কেরান ও হজে তামাত্তু পালনকারীর পশু যবেহ করা (৬) মাথা মুন্ডানো বা চুল ছোট করা (৭) মাথা মুন্ডানোর কাজটি হারাম শরিফে এবং কোরবানির দিনগুলোতে সম্পন্ন করা (৮) মাথা মুন্ডানোর পূর্বে পাথর নিক্ষেপ করা (৯) হজে কেরান ও হজে তামাত্তু পালনকারীর পাথর নিক্ষেপ ও মাথা মুন্ডানোর মধ্যবর্তী সময়ে পশু যবেহ করা (১০) কোরবানির দিনগুলোতে তাওয়াফে যিয়ারত সম্পন্ন করা (১১) হজের মাসগুলোতে সাফা-মারওয়ার মধ্যখানে সায়ী করা (১২) গ্রহণযোগ্য তাওয়াফের পর সায়ী করা। (১৩) ওযর ব্যতীত পায়ে হেঁটে সায়ী করা (১৪) সাফা থেকে সায়ী আরম্ভ করা (১৫) বিদায়ী তাওয়াফ করা (১৬) বায়তুল্লাহ শরিফের সবকটি তাওয়াফ হাজরে আসওয়াদ (কালো পাথর) থেকে শুরু করা (১৭) ডান দিক থেকে তাওয়াফ শুরু করা (১৮) ওযর ছাড়া পায়ে হেঁটে তাওয়াফ করা (১৯) ছোট-বড় উভয় প্রকার হাদাস থেকে পবিত্র থাকা (২০) সতর ঢাকা (২১) তাওয়াফে যিয়ারতের অধিকাংশ চক্কর (কোরবানির দিনগুলোতে) সম্পন্ন করার পর অবশিষ্ট চক্করগুলো সম্পন্ন করা (২২) নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকা যেমনঃ পুরুষরা সেলাইকৃত কাপড় পরিধান করা এবং মাথা ও চেহারা ঢাকা, মহিলারা চেহারা ঢাকা, যৌন উত্তেজক কথাবার্তা বলা, গুনাহের কাজ করা, ঝগড়া-বিবাদ করা, শিকার বা শিকারের প্রতি ইশারা করা কাউকে শিকার দেখিয়ে দেয়া ইত্যাদি।হজের কার্যাবলী পুরোপুরিভাবে সম্পাদনের পদ্ধতি : যখন কেউ হজ করার ইচ্ছা করবে তখন সে মিকাত থেকে ইহরাম বাঁধবে। ইহরাম বাঁধার নিয়ম এই যে, ইহরাম বাঁধার প্রারম্ভে গোসল কিংবা ওযু করে নেয়া। তবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য গোসলই উত্তম। কাজেই হায়েয ও নেফাসগ্রস্ত নারীর যদি গোসল করলে ক্ষতি না হয় তাহলে গোসল করবে। নখ ও গোফ কেটে, বগলের পশম পরিষ্কার করে, নাভির নিচের পশম মুড়িয়ে, গোসল করে সুগন্ধি লাগিয়ে তেল ব্যবহার করে সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার হওয়া মুস্তাহাব। পুরুষ লোক একটি ইযার ও চাদর পরিধান করবে, যা নতুন কিংবা ধৌত করা হতে পারে। তবে নতুন সাদা কাপড় উত্তম। চাদরটি বোতামবিহীন হতে হবে। কোন প্রকারের জোড়া বা কাপড় ছিঁড়ে গলায় ঝুলিয়ে রাখা সম্পূর্ণ নিষেধ। এ ধরনের কাজ করা মাকরুহ। এ জন্য তার উপর ক্ষতিপূরণ হিসেবে কোন কিছু ওয়াজিব হবে না।হে হজ বা ওমরাহ পালনকারী ব্যক্তি! এবার আপনি দু’রাকাত নামাজ পড়ুন। অতঃপর বলুন, হে আল্লাহ আমি হজ পালন করার ইচ্ছা করেছি, সুতরাং আপনি আমার জন্য কাজটি সহজ করে দিন এবং আমার পক্ষ থেকে তা কবুল করুন। নামাজের পর তালবিয়া পড়ুন “লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইক লা শারিকালাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা, ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাকা”। যখন আপনি হজ বা ওমরার নিয়তে তালবিয়া পড়লেন তখনই আপনার ইহরাম বাঁধা হয়ে গেল। সুতরাং এ সময় থেকে আপনি রাফাস তথা স্ত্রী সম্ভোগ থেকে বিরত থাকবেন। সবসময় তালবিয়া পড়ুন, তবে চিৎকার দেয়ার প্রয়োজন নেই। যার দ্বারা নিজের বা অন্যের ক্ষতি হয়। যখন আপনি মক্কায় পৌঁছবেন তখন আপনার গোসল ও দরজায়ে মুআল্লা দিয়ে প্রবেশ করা মুস্তাহাব।হজের প্রকারভেদ : হজ মোট তিন প্রকার। ১. হজে ইফরাদ ২. হজে তামাত্তু এবং ৩. হজে কেরান।হজে ইফরাদের পরিচয় : ইফরাদ শব্দের আভিধানিক অর্থঃ একা, একাকী বা পৃথক। শরিয়তের পরিভাষায় মিকাত হতে শুধু হজের নিয়ত করে ইহরাম বেঁধে শুধুমাত্র হজ সম্পন্ন করার নাম ইফরাদ।হজে তামাত্তুর পরিচয় : তামাত্তুর আভিধানিক অর্থ ঃ উপকারিতা অর্জন করা, উপভোগ করা। পরিভাষায় মিকাত হতে প্রথমে ওমরার ইহরাম বেঁধে তার কার্যাবলী সমাপন করে হালাল হওয়ার পর হজের সময় হজের ইহরাম বেঁধে তার আহকামসমূহ সম্পাদন করাকে তামাত্তু বলে।হজে কেরানের পরিচয় : কেরানের শাব্দিক অর্থঃ মিলানো, মিশ্রণ করা। পরিভাষায় মিকাত হতে একসাথে হজ ও ওমরার নিয়ত করে ইহরাম বেঁধে উভয়টিকে একই ইহরামে সমাপ্ত করাকে কেরান বলে।সর্বোত্তম হজ কোনটি : তিন প্রকারের হজের মধ্যে কোনটি সর্বোত্তম তা নিয়ে ইমামদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে।ইমাম আবু হনিফা (রহ.)-এর মতে হজে কেরান হচ্ছে সর্বোত্তম হজ। এরপর তামাত্তু তারপর ইফরাদ। কেননা নবিয়ে করিম (সা.) বিদায় হজের সময় কেরান হজ করেছেন এবং তার পরিবারবর্গকেও তা করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাছাড়া এটা পালন করা খুবই কষ্টকর। কারণ এতে দুটি ইবাদত একসাথে করা হয়।ইমাম শাফি ও ইমাম মালিক (রহ.)-এর মতে ইফরাদ হচ্ছে সর্বোত্তম। এরপর তামাত্তু, তারপর কেরান। এখানে ইমামে আযম (রহ.)-এর মতটিই গ্রহণযোগ্য।কেরান হজের প্রথম কাজ : কেরানের মধ্যে সর্বপ্রথম ওমরার কাজ সম্পন্ন করে দিতে হবে, তারপর হজের কাজ শুরু করতে হবে। এ কারণে কোন ব্যক্তি প্রথমে হজের নিয়তে তাওয়াফ করলেও উমরার তাওয়াফই হবে।কেরানকারীর কোরবানির বিধান : কেরানকারীগণ কোরবানির দিবসে হজ ও ওমরা উভয়ের জন্য কোরবানি করবে। কেননা আল্লাহতা’লা তাকে একই সময়ে একই ইহরামে হজ ও ওমরা দুটিই আদায় করার সুযোগ দিয়েছেন। তাই আল্লাহর শুকরিয়া হিসেবে তার উপর একটি কোরবানি ওয়াজিব হবে। আর যদি কোরবানির সামর্থ্য না থাকে তাহলে দশটি রোযা রাখতে হবে। এগুলোর মধ্যে তিনটি হজের দিন সমূহে তথা সাত, আট ও নয় তারিখে রাখতে হবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে “যে ব্যক্তি হজের সাথে ওমরাকে একত্রিত করে উপস্থিত হবে সে তার সাধ্যানুযায়ী কোরবানি দেবে। আর যে ব্যক্তি কোরবানি দিতে অক্ষম হবে সে হজের সময় তিনদিন রোযা রাখবে আর যখন তোমরা হজ হতে প্রত্যাবর্তন করবে তখন আরও সাতটি রোযা রাখবে।কেরান নিয়তকারী ওমরা ছেড়ে দিলে তার হুকুম : কেরান পালনকারী যদি মক্কায় প্রবেশ না করে সোজা আরাফায় চলে যায় তবে তার ওমরা বাতিল ও মুফরিদ হিসেবে গণ্য হবে। এ ওমরা ছেড়ে দেয়ার কারণে তার উপর একটি দম ও পুনরায় কাযা ওয়াজিব হবে। কেননা সে নিয়তের মাধ্যমে তার উপর ওয়াজিব করে নিয়েছিল আর ওয়াজিব পরিত্যাগের জন্য কাযা ওয়াযিব হয়েছে। আর যদি মক্কায় দাখিল হয়ে ওমরার অধিকাংশ কাজ করার পূর্বেই আরাফায় চলে আসে তাহলে উপরোক্ত হুকুম প্রযোজ্য হবে, তবে ওমরার তাওয়াফের অধিকাংশ যেমন ঃ সাত চক্করের স্থলে চার চক্করের পর আরাফায় চলে গেলে তার ওমরা বাতিল হবে না। বরং কোরবানির দিবসে তা পূরণ করে দিবে।হজে তামাত্তুর পরিচয় : তামাত্তুর আভিধানিক অর্থ উপকৃত হওয়া বা লাভবান হওয়া। শরিয়তের দৃষ্টিতে তামাত্তু বলা হয় হজের মাসসমূহে তথা শাওয়াল, যিলক্বদ ও যিলহজ মাসে মিকাত হতে শুধু ওমরার ইহরাম বেঁধে ওমরার কার্যাবলী সম্পাদন করে হালাল হয়ে যাওয়া। এরপর যিলহজ মাসের আট তারিখে পুনরায় ইহরাম বেঁধে হজ সমাপন করা।তামাত্তুকারী তাওয়াফের সাথে সাথে তালবিয়া পাঠ বন্ধ করে দেবে : তামাত্তু আদায়কারী হাজরে আসওয়াদ চুম্বনের পর ওমরার তাওয়াফ শুরু করার সাথে সাথে তালবিয়া পাঠ বন্ধ করে দেবে। মহানবী (সা.) হতে অনুরূপ বর্ণিত আছে। ইমাম (রহ.) বলেন : ‘বাইতুল্লাহ শরিফের প্রতি দৃষ্টি পড়ার সাথে সাথে তালবিয়া পাঠ বন্ধ করে দেবে।দমের হুকুম : তামাত্তু আদায়কারীর উপর শুকরিয়া স্বরূপ কিরান আদায়কারীর ন্যায় একটি কোরবানি করা ওয়াযিব। যদি সে কোরবানি করতে অক্ষম হয় তাহলে কোরবানির দিনের পূর্বে তিনটি এবং বাকি সাতটি রোজা পরে রাখতে হবে।আইয়্যামে হজের বিভিন্ন নামসমূহ : ১. যিলহজের আট তারিখকে ‘ইয়াউমুত তারউইয়্যাহ’। ২. নয় তারিখকে ‘ইয়াউমুল আরাফাহ’। ৩. দশ তারিখকে ‘ইয়াউমুন নাহ্র’। ৪. এগারো তারিখকে ‘ইয়াউমুল ওকুফ’। ৫. বারো তারিখকে ‘ইয়াউমুল নাফরিল আওয়াল’ এবং ৬. তেরো তারিখকে ‘ইয়াউমুল নাফরিস সানি’ বলে।হজে তামাত্তু বাতিল হওয়ার কারণ : তামাত্তুকারি হাদি প্রেরণ না করে হজের মাসে ওমরার কাজ সমাপন করে নিজ দেশে ফিরে গেলে তার তামাত্তু বাতিল হবে। আর যদি হাদির জানোয়ার প্রেরণ করে তাহলে ইমাম আবু হানিফা ও আবু ইউসুফ (রহ.)-এর মতে তার তামাত্তু বাতিল বলে গণ্য হবে।হজের মাসের পূর্বে ওমরার কাজ আংশিক করলে হজে তামাত্তু হবে কিনা : কোন ব্যক্তি যদি হজের মাসের পূর্বে ওমরার উহরাম করে চার চক্করের কম তাওয়াফ করে এরপর বাকি তাওয়াফ হজের মাসে করে তাহলে তার তামাত্তু হবে না। বরং সে তামাত্তুকারী হিসেবে পরিগণিত হবে।পরিশেষে, আমি মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে প্রার্থনা করি তিনি যেন বিশ্বের সকল মুসলমানকে হজ সংক্রান্ত মাসআলা অবগত হয়ে শরিয়তের নির্ধারিত পদ্ধতিতে সঠিকভাবে হজ পালন করার তৌফিক দান করেন। আমিন।

লেখকঃ আতিকুর রহমান নগরী

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত