আপডেট :

        রেডিয়াল সিদ্ধান্ত: নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগে আইএইএ কর্মকর্তাদের তেহরান ত্যাগ

        রেডিয়াল সিদ্ধান্ত: নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগে আইএইএ কর্মকর্তাদের তেহরান ত্যাগ

        কারা কফি থেকে বিরত থাকবেন, জেনে নিন—

        পশ্চিমা সমর্থন ছাড়া কি ইসরায়েলের অস্তিত্ব টিকবে? বিশ্লেষকদের মতামত

        নারী ও শিশু নির্যাতন মহামারি পর্যায়েঃ শারমীন মুরশিদ

        ‘শ্রাবণ বিদ্রোহ’: জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের তথ্যচিত্র প্রদর্শন ৭ জুলাই

        লিভারপুল ও পর্তুগালের তারকা দিয়াগো জোতা গাড়ি দুর্ঘটনায় নিহত

        জুলাই সনদের দাবিতে অনড় এনসিপি, নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না: নাহিদ

        প্রধানমন্ত্রী থেকে সংস্কৃতিমন্ত্রী: পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রার নতুন ভূমিকা

        বিটিএস ফিরছে পুরো দমে: ২০২৬-এ নতুন গান ও গ্লোবাল ট্যুরের প্রতিশ্রুতি

        ‘কফি খাচ্ছিলাম, চিল করছিলাম—হঠাৎ দেখি পাঁচ উইকেট নেই’

        দুপুরে আজ জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে বিএনপি

        পহেলগাম হামলার পর নিষেধাজ্ঞা শিথিল, পাকিস্তানি সেলিব্রিটিদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাক্সেস ফিরল

        করোনার টিকা নিরাপদ, আকস্মিক মৃত্যুর গুজবে জবাব দিল গবেষণা

        জুলাই বিপ্লবের গুরুত্ব বুঝতে ব্যর্থ কিছু মানুষঃ বাঁধনের আক্ষেপ

        শুঁটকি পিৎজা: উত্তরায় ঢাকার খাবারের নতুন ট্রেন্ড সেট করছে

        অর্থ উপদেষ্টার বিপাকে পড়ার কারণ এনবিআর নিয়ে প্রকাশিত খবর

        বাংলাদেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী জীনাত রেহানা প্রয়াত হয়েছেন

        টাইগারদের শক্তিশালী শুরু: প্রথম সেশনেই তিন উইকেটের ধাক্কা

        ট্রাম্পের বাজেট বিল নিয়ে মাস্কের তীব্র সমালোচনা: শত্রুতার শুরু

সিলেটে ১০ শিশুসহ ২৩ জনের মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন

সিলেটে ১০ শিশুসহ ২৩ জনের মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন

সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক দিনে ১০ শিশুসহ ২৩টি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, যা সংখ্যার দিক থেকে অস্বাভাবিক। এসব মৃত্যু নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠার পাশাপাশি চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগও আছে।গত সোমবার সকাল আটটা থেকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল আটটা পর্যন্ত এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এসব মৃত্যুকে ‘স্বাভাবিক’ বললেও মৃত্যুর সংখ্যাকে অস্বাভাবিক উল্লেখ করে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আলাদা তদন্ত কমিটি করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও। জানুয়ারি মাসে এই হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে রোগী মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১৪। আর দিনে গড়ে শিশু মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ২।হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ওই ২৪ ঘণ্টায় শিশু ওয়ার্ডে এক থেকে দেড় দিন বয়সী চার নবজাতকসহ ১০ শিশু মারা যায়। তাদের মৃত্যুর কারণ জন্মগত ত্রুটি, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াজনিত বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। ১০ শিশু হলো: সিলেটের গোয়াইনঘাটের সায়মা (দেড় বছর), জকিগঞ্জের দশগ্রামের আকাশ (সাত দিন), সিলেট নগরের শেখঘাটের নিলুফা আক্তারের দেড় দিনের শিশু, একই এলাকার ফাতেমা বেগম ও সন্ধ্যা রাণীর এক দিনের করে দুই নবজাতক, সুনামগঞ্জ সদরের তাজরিয়া (সাড়ে তিন বছর), মাহাদি (আড়াই মাস), ছাতকের সাফরাজ (তিন বছর), বিশ্বম্ভরপুরের নাদিরা (ছয় মাস) ও হবিগঞ্জের ইয়াসমিন (তিন দিন)।শিশু ছাড়াও ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৩ জন রোগী মারা গেছেন। তাঁদের মধ্যে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে চার, হৃদ্যন্ত্রের সমস্যায় পাঁচ এবং যক্ষ্মা, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, এনকেফালাইটিস ও অজ্ঞাত বিষক্রিয়ায় একজন করে রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া সিলেটের একটি গ্রামে মারামারির ঘটনায় আহত পাঁচজন এবং সড়ক দুর্ঘটনায় আহত চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এঁরা রোগী নন।ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক আবদুস সবুর মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, মারা যাওয়া শিশুদের চিকিৎসায় কয়েক ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এই ওষুধের মেয়াদ, কোন মাত্রায় কীভাবে ব্যবহৃত হয়েছে এবং চিকিৎসায় কোনো রকম গাফিলতি হয়েছে কি না, তা যাচাই করে দেখা হচ্ছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, মারা যাওয়া ১০ শিশুর বেশির ভাগই সিলেটের বিভিন্ন উপজেলা থেকে এসেছিল। তারা ঠিক কী অবস্থায় হাসপাতালে এসে পৌঁছায়, তারও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।গোয়াইনঘাট উপজেলার মারা যাওয়া এক শিশুর স্বজন অভিযোগ করেন, রাত ১০টার পর তাঁর বোনের মেয়ে ছটফট শুরু করলে তাঁরা ওয়ার্ডে চিকিৎসক খুঁজে পাননি। শিশুটিকে দেখে যাওয়ার জন্য সেবিকাদেরও বলেছেন, কিন্তু সাড়া পাননি। ভোরে শিশুটি মারা যায়।সিলেট নগরের শেখঘাট এলাকার একটি কলোনির বাসিন্দা নিলুফা আক্তার জানালেন, সোমবার দুপুরে তাঁর কন্যাসন্তান হয়। স্বাভাবিক প্রসব ছিল। গতকাল সকাল ছয়টার দিকে সে মারা যায়। কাঁদতে কাঁদতে নিলুফা বলেন, ‘জানতে চাইছিলাম, কিতা অইছিল তার (শিশুর)। নার্স হায়াত ফুরাই গেছে (আয়ু শেষ) কইয়া বাইচ্চারে কোলে তুলে বিদায় করি দিল!’গতকাল সকাল নয়টার মধ্যে ১০ শিশুর মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সাড়ে ১০টার দিকে ওয়ার্ডে গিয়ে শিশুদের কোনো স্বজনকে পাওয়া যায়নি। শিশু ওয়ার্ডে রোগীদের একাধিক স্বজন অভিযোগ করেন, দিনে চিকিৎসক ও সেবিকাদের পাওয়া গেলেও রাত আটটার পর কাউকে পাওয়া যায় না। এ সময় চিকিৎসকের খোঁজ করলেও সেবিকারা ধমক দিয়ে থামিয়ে রাখেন।একজন রোগীর স্বজনের অভিযোগ, তিনি ছয় মাস বয়সী শিশুকে নিয়ে পাঁচ দিন ধরে শিশু ওয়ার্ডে আছেন। একদিন মাত্র রাত আটটার দিকে একজন চিকিৎসক দেখেছেন। আরেক শিশুর অভিভাবক অভিযোগ করেন, রোগীর অবস্থা খারাপ হলে সেবিকারা শুধু মোবাইল ফোনে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে কাজ সারেন।২৪ ঘণ্টায় যে ১০ শিশুর মৃত্যু হয়, তার মধ্যে সোমবার রাত সাড়ে ১০টা থেকে ভোর সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত সাতটি শিশুর মৃত্যু হয়।

শিশু ওয়ার্ডে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রভাত রঞ্জন দে বলেন, সংখ্যার হিসাবে এক দিনে মৃত্যু বেশি হলেও এর পেছনে চিকিৎসকের অবহেলা বলে কিছু নেই। জন্মগত ত্রুটি আর জন্মের পরপরই নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় শিশুদের মৃত্যু হয়েছে। অভিযোগ ওঠায় তদন্ত হবে। তিনি জানান, ৯৭ শয্যার শিশু ওয়ার্ডে ৩২২টি শিশুর চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে।হাসপাতালের প্রশাসন শাখা সূত্রে জানা গেছে, ৫০০ শয্যার হাসপাতালে ৯০০ রোগী ভর্তি আছে। বহির্বিভাগসহ এই হাসপাতালে দিনে চিকিৎসা নেয় ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার রোগী। প্রতিদিন গড়ে রোগী মৃত্যুর সংখ্যা ১৪ থেকে ১৬। শিশু মৃত্যুর সংখ্যা দুইয়ের কিছু বেশি।তদন্ত কমিটি: অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গতকাল সকালে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত কমিটি গতকালই কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের উপপরিচালক মো. আবদুছ ছালাম। এসব মৃত্যু ‘স্বাভাবিক’ কিন্তু সংখ্যাটা ‘অস্বাভাবিক’ বলে মন্তব্য করেন তিনি। উপপরিচালক বলেন, ওসমানী হাসপাতাল ২০১৩ সালে সেবার জন্য জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার অর্জন করেছে। এ অবস্থায় অস্বাভাবিক মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে কোনো চক্রান্ত হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন: ওসমানী হাসপাতালে ‘অস্বাভাবিক’ মৃত্যুর ঘটনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়। গতকাল দুপুরে মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক এ কথা জানান। কমিটি আজ সিলেটে যাচ্ছে।স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, হরতাল-অবরোধের কারণে রোগীরা যথা সময়ে হাসপাতালে যেতে পারছে না। রোগী খুব জটিল অবস্থায় হাসপাতালে পৌঁছাচ্ছে। এতে করেও চিকিৎসা দুরূহ হয়ে পড়ছে।সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক দীন মো. নুরুল হক জানান, মৃত ১০টি শিশুর চারটিই জন্মকালীন শ্বাসরোধের সমস্যায় ভুগছিল। এ ছাড়া মায়ের অপুষ্টিজনিত কারণে তিনটি, পরিপাকতন্ত্রের জটিলতায় একটি, ডায়রিয়া ও ব্রঙ্কোনিউমোনিয়ায় দুই শিশু মারা যায়।

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত