রেডিয়াল সিদ্ধান্ত: নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগে আইএইএ কর্মকর্তাদের তেহরান ত্যাগ
কমলগঞ্জে মধু চাষে নীরব বিপ্লব : বছরে দেড় কোটি টাকা আয়
সরকারের কোন ধরনের প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহযোগীতা ছাড়াই নিজেদের স্বল্প পুঁজি খাটিয়ে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের তিন শতাধিক চাষী মধু চাষ করে নীরব বিপ্লব ঘটিয়েছেন।চাষীরা উৎপাদিত মধু বাজারে বিক্রি করে বছরে প্রায় দেড় কোটি টাকা আয় করছেন। তাদের ঘরে ফিরেছে স্বচ্ছলতা। সরকারী পর্যায়ে পরিকল্পিত উদ্যোগ নিলে কমলগঞ্জ হয়ে উঠতে পারে মধুচাষের অন্যতম এলাকা।জানা যায়, কমলগঞ্জ উপজেলায় আজ থেকে ৫/৬ বছর আগে মধু চাষের কল্পনা কেউ করতেন না। কিন্তু সেই অবস্থার এখন পরির্বতন ঘটেছে। আদমপুর ও ইসলামপুর এলাকার ৩ শতাধিক চাষী মধু চাষে জড়িয়ে পড়েছেন। তারা এখন ব্যস্ত দিন কাটান। বলতে গেলে বিপ্লব ঘটেছে এলাকায়।কোন ধরনের প্রশিক্ষন ছাড়াই নিজেদের প্রচেষ্টা মধু চাষে প্রত্যেকেই সাফল্যেও স্বপ্ন দেখছেন। এক একটি বাক্স তৈরি করে বছরে তিন থেকে চারবার মধু সংগ্রহ করেন চাষীরা। বাক্সে ২৫/৩০ কেজি আহরণ করা যায়। সে হিসাবে বছরে প্রায় ৩০ হাজার কেজি মধু উৎপাদন হচ্ছে। যা বাজার দর প্রায় দেড় কোটি টাকা। চাষীদের এসব উৎপাদিত মধু বিদেশেও যাচ্ছে। ইসলামপুরের কাঠাঁলকান্দি গ্রামের প্রথম মধুচাষী আজাদ মিয়ার বদৌলতে এখন মধু চাষ ছড়িয়ে পড়েছে এলাকার মধ্যভাগ কালারায়বিল, ছয়ঘরি, কাঠালকান্দি, কোনাগাও, কানাইদাশী, রাজকান্দি, আধকানি, পুরান-বাড়ি, নয়াপত্তনসহ প্রায় ২৫টি গ্রামেরাজ মধু, দাশকুলি মধু, মাছি মধু, ঘামি মধু ও মধু মালতি এই ৫ জাতের মধু হলেও কমলগঞ্জে বাক্স স্থাপন করে দাশকুলি মধুর চাষাবাদই সবচেয়ে বেশী। প্রতিটি বাড়িতে ২/৩টি করে মধু উৎপাদনকারী জিনিস কাঠের বাক্স স্থাপন করা আছে। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও মধু চাষ করছেণ। প্রতিটি পরিবারে মধু চাষের কারনে পরিবারে ফিরে এসেছে স্বচছলতা। তাদের ঘরে এখন অভাব – অনটন নেই। স্বল্পখরচে বছরে সংগ্রহকৃত মধু বিক্রি করে জনপ্রতি ৩০/৫০ হাজার টাকা আয় করেন চাষীরা। তারা ‘কমলগঞ্জ উপজেলা মধু চাষী উন্নয়ন সমিতি’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেছেন।কমলগঞ্জ উপজেলার প্রথম মধু চাষী কাঁঠালকান্দি গ্রামের আজাদ মিয়া বলেন, একদিন তিনি রাজকান্দি পাহাড়ে যান নিজের জন্য মধু সংগ্রহ করতে। মধু সংগ্রহের সময় হঠাৎ ধরা পড়ে রানী মৌমাছি। তিনি বইয়ের সেই কবিতার কথা- মৌমাছি মৌমাছি কোথাও যাও নাচি নাচি’ চরণকে মনে করেই রানী মৌমাছিকে ধরে একটি গাছের ডালে রেখে দিতেই হাজারো মৌমাছি উপস্থিত হন। সেটাকে তিনি বাড়ি নিয়ে এসে একটি বাক্সে রেখে দেন। কয়েক দিন পর দেখেন মধু আহরণ হয়েছে। তখন থেকে মধু সংগ্রহ পেশায় পরিনত করেন। তার এই মধু চাষ এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে অন্যান্যরা মধু চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেন। তিনি জানান, এক একটা বাক্সে বছরে চার বারে ৬০ থেকে ৭০ কেজি মধু সংগ্রহ করা যায়। বাজারে প্রতি কেজি মধুর দাম ৬শ’ টাকা হিসাবে বছরে প্রায় ৪০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব।আজাদ মিয়া আরও বলেন, তিনি এখন সম্পূর্ণ মধু চাষের উপর নির্ভরশীল। বর্তমানে তাঁর ১০টি বাক্সে মধু চাষাবাদ চলছে। এই ১০টি বাক্স ছাড়াও পাহাড় থেকে মৌমাছি ও বিভিন্ন ব্যক্তির বাক্স থেকে মধু সংগ্রহ করে বছরে তিন থেকে চার লাখ টাকা আয় হয়। তিনি বলেন, মধু চাষাবাদের চেয়ে উন্নতমানের আর কোন চাষাবাদ নেই। মধু চাষাবাদে শুরুতেই শুধুমাত্র একটি বাক্সে মৌমাছি সংগ্রহে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা খরচ হয়। এছাড়া আর কোন খরচ পড়ে না। অল্প খরচ করে শত শত চাষী লাখ টাকা উপার্জন করছেন। এমন লাভের আশায় গত তিন বছরে মধু চাষী সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু মধু চাষের এমন নীরব বিপ্লব ঘটলেও সরকারী কোন সহযোগীতা পাচ্ছেন না চাষীরা। বিভিন্ন দপ্তরে হেটেও কোন ফল মিলেনি। কথা হয় এলাকার বাবুল মিয়া, মাওলানা মছব্বির, জমসেদ মিয়ার সাথে, তারা বলেন, তাদের কোন ধরনের প্রশিক্ষন নেই । নিজেদের চেষ্টা মধু চাষ করছেন। মৌলবীবাজার,সিলেট থেকে অনেকেই আসেন মধু কিনতে। এমন কি প্রবাসীরাও মধু কিনে বিদেশ নিচ্ছেন। তারা দাবী করেন বলেন,সরকারী উদ্যোগে তাদের উৎপাদিত মধু বিক্রি হলে তারা আরো দাম পাবেন। সেই সাথে প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা নিলে আরো বেশি মধু উৎপাদন করা সম্ভব হবে।কমলগঞ্জে মধু চাষী উন্নয়ন সমিতির সভাপতি আলতাফ মাহমুদ বাবুল বলেন, এই এলাকায় মধু চাষের একটি উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। পুঁজির ব্যবস্থা, প্রশিক্ষণ ও সরিষার চাষাবাদ বৃদ্ধি করা হলে মধু চাষে আরো বিপ্লব হবে বলে দাবী করেন।কমলগঞ্জের ক্ষুদ্র শিল্প উদ্যোক্তা লেখক গবেষক আহমদ সিরাজ বলেন, পরিকল্পিত উদ্যোগ নিলে এই এলাকায় চিহ্নিত জোন হিসাবে গড়ে তোলা যাবে। বিশেষত আদমপুর, ইসলামপুর ইউনিয়নে মধু চাষে একটা ব্র্যান্ড তৈরী হতে পারে।
শেয়ার করুন