শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করে সংবাদ , পত্রিকা অফিসে আগুন
আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর অপেক্ষায় ওসমানী বিমানবন্দর
প্রায় দেড় যুগ আগে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা হয়। কিন্তু রিফুয়েলিংয়ের অভাবে সরাসরি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ ছিলো। সম্প্রতি রিফুয়েলিং স্টেশন নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ায় একটি পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপ পাচ্ছে এটি। শিগগিরই চালু হতে যাচ্ছে সরাসরি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। আর এটি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
১৯৯৮ সালের ২০ ডিসেম্বর সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরকে ‘আন্তর্জাতিক’ মানে উন্নীত করা হয়। এরপর থেকে বিভিন্ন সময়ে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হলেও কিছুদিন যেতে না যেতেই বন্ধ হয়ে যায়। অজুহাত ছিলো একটাই ‘রিফুয়েলিংয়ের ব্যবস্থা নেই’।
২০১০ সালের জুন মাসে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের প্রচেষ্টায় বিমানবন্দরের রিফুয়েলিং স্টেশন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ২০১২ সালে ‘কনস্ট্রাকসন এভিয়েশন রিফুয়েলিং ফেসিলিটিজ’ নামে সিলেটে রিফুয়েলিং স্টেশন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার ইনকন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রজেক্টের মাধ্যমে প্রায় ৫১ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় পদ্মা অয়েল কোম্পানি।
২০১৩ সলের জুন মাসে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবার কথা ছিলো। কিন্তু নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ আরো বাড়ানো হয়। একই সঙ্গে প্রকল্প ব্যয় অতিরিক্ত ২ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৫৩ কোটি ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়। অবশেষে কয়েক দফা সময়সীমা পিছিয়ে গত অক্টোবরে শেষ হয় রিফুয়েলিং স্টেশনের কাজ।
উদ্বোধনের ব্যাপারে পদ্মা ওয়েলের রিফুয়েলিং স্টেশন নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক আমিনুল হক এলএ বাংলাকে বলেন, ৩ মাস আগেই স্টেশনের কাজ শেষ হয়েছে। আমরা চট্টগ্রাম থেকে ফুয়েল এনে যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিয়েছি। এখন এটি পুরোপুরি প্রস্তুত। যে কোন সময় উদ্বোধন করা যাবে।
তিনি বলেন, এয়ারলাইনসগুলো শিডিউল না দেওয়ায় এটি উদ্বোধন করা সম্ভব হচ্ছে না। শিডিউল পেলেই আমরা উদ্বোধনের তারিখ নির্ধারণ করবো।
এ ব্যাপারে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক হাফিজ আহমদ এলএ বাংলাকে বলেন, আমরা জেনেছি রিফুয়েলিং স্টেশনের কাজ শেষ হয়েছে। পদ্মা ওয়েল কোম্পানী নির্মাণ কাজের দায়িত্বে ছিলো। তারা এখনো উদ্বোধনের ব্যবস্থা করতে পারেনি। উদ্বোধনের পর তারা এটি আমাদের কাছে হস্তান্তর করবে।
এ ব্যাপারে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী এলএ বাংলাকে বলেন, সিলেট ওসমানি বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক রূপ দেওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি ছিলো। এরই অংশ হিসেবে রিফুয়েলিং স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। এটি সিলেটবাসীকে প্রধানমন্ত্রীর উপহার।
তিনি বলেন, প্রধামন্ত্রী সম্প্রতি লন্ডনে লন্ডনের একটি অনুষ্ঠানে শিগগিরই সিলেট-লন্ডন সরাসরি ফ্লাইট চালুর আশ্বাস দিয়েছেন। রিফুয়েলিং স্টেশনের কাজ যেহেতু শেষ হয়েছে। আশা করি খুব শিগগিরই এটা উদ্বোধন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটি উদ্বোধন করবেন।
সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের নবনির্বাচিত বোর্ডের পরিচালক এমদাদ হোসেন এলএ বাংলাকে বলেন, সিলেট থেকে সরাসরি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু না থাকায় সিলেটের ব্যবসায়িরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। দেশের রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রেও প্রভাব পড়ছে। সরাসরি ফ্লাইট চালুর ক্ষেত্রে যে বাধা ছিলো তা এখন কেটে গেছে। আমরা আশাবাদি যত দ্রুত সম্ভব এটি চালুর উদ্যোগ নেবেন কর্তৃপক্ষ।১৯৯৮ সালের ২০ ডিসেম্বর ওসমানী বিমান্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করার পর চালু হয় আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। প্রথম দিকে বেশকিছু দিন লন্ডন থেকে সরাসরি সিলেটে ফ্লাইট পরিচালনা করা হলেও সিলেটে রিফুয়েলিং স্টেশন না থাকায় অল্পদিনের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায় সরাসরি ফ্লাইট। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ হয়ে পড়ায় বিপাকে পড়েন বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী সিলেটের প্রবাসীরা। এছাড়া এই অঞ্চলের রপ্তানি বাণিজ্যও বাধাগ্রস্থ হয়।
২০০১ সালে আবার বিমানবন্দরের উন্নয়নকাজ শুরু হয়। উন্নয়নকাজ শেষে ২০০৬ সালের ১২ মার্চ দুবাই থেকে আসা একটি এয়ারবাস (বিজি ০২০) অবতরণের মাধ্যমে ওসমানী বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে আবার ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু কিছুদিন পর আবার বিদেশী ফ্লাইট উড্ডয়ন ও অবতরণ বন্ধ হয়ে যায়।
২০০৭ সালের ৯ নভেম্বর লন্ডন থেকে দুবাই হয়ে ওসমানী বিমানবন্দরে অবতরণ করে বাংলাদেশ বিমানের এয়ারবাস (ডিসি-১০)। এর মাধ্যমে সুপরিসর বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণের সব সম্ভাবনা দেখা দেয়। ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর কুয়াশার অজুহাতে সিলেট-লন্ডন সরাসরি ফ্লাইট বন্ধ হয়। ৩ মাস পর ২০১২ সালের ফেব্র“য়ারীতে সরাসরি ফ্লাইট চালু হওয়ার কথা ছিল।
সর্বশেষ ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর লন্ডন থেকে সরাসরি সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে নেমেছিলো বোয়িং ৭৭৭ 'পালকি'। পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। শুধু রিফুয়েলিং স্টেশন না থাকায় বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর উড়োজাহাজ ওসমানী বিমানবন্দরে অবতরণ ও উড্ডয়নে অনীহা প্রকাশ করে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের আন্তরিক প্রচেষ্টা ও সরকারের সহযোগিতায় এই বাঁধা কাটিয়ে উঠতে রিফুয়েলিং স্টেশন নির্মাণ কাজ শুরু হয়। বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে এবং দক্ষিণ সুরমার পুরাতন রেলস্টেশন এলাকায় নির্মাণ করা হয়েছে এই স্টেশন।
দক্ষিণ সুরমায় নির্মিত হয়েছে দুই তলা অফিস ভবন, তিনটি স্টোরেজ ট্যাংঙ্ক, পাইপ লাইন, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রেস্ট হাউজ, গ্যারেজ, অফিসার্স রুম ও স্টাফ রুম, দুটি ডিসপেনসার ও ফিল্টারিং ব্যবস্থা। অন্যদিকে বিমানবন্দরে নির্মিত হয়েছে তিনটি স্টোরেজ ট্যাঙ্ক, হাইড্রেন্ট লাইন, ডিপো রিফুয়েলার ডিসপেনসার ও ফিল্টার এবং জেট ফুয়েল পরিবহনের জন্য ব্রিজার অর্থাৎ, বড় ট্যাঙ্ক লরি।
শেয়ার করুন