আপডেট :

        চুক্তিতে যেতে আগ্রহ নন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন

        গণহত্যার প্রতিবাদে চীন বর্জনের ডাক

        রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির আশা

        টানা তাপপ্রবাহের মধ্যে আবহাওয়ায় ব্যপক পরিবর্তন

        হানিফ ফ্লাইওভারের উপরের যানজটকে সহনীয় পর্যায়ে আনার জন্য সমন্বয় সভা

        মালদায় দেবের হেলিকপ্টারে আগুন

        প্যারিসের সায়েন্সেস পো ইউনিভার্সিটি থেকে গাজাপন্থী কিছু শিক্ষার্থীকে সরিয়েছে পুলিশ

        চাঁদের উদ্দেশে যাত্রা পাকিস্তানের স্যাটেলাইট

        চাঁদের উদ্দেশে যাত্রা পাকিস্তানের স্যাটেলাইট

        এজলাস কক্ষে এসি স্থাপন সময়ের দাবি

        জিম্বাবুয়ের দেওয়া ১২৫ রানের টার্গেটে ব্যাট করছে বাংলাদেশ

        জিম্বাবুয়ের দেওয়া ১২৫ রানের টার্গেটে ব্যাট করছে বাংলাদেশ

        ট্রেনে গুনতে হবে বাড়তি ভাড়া

        রাজশাহীর গোদাগাড়ির ছেলে রাফায়েল টুডু ১২ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা

        রাজশাহীর গোদাগাড়ির ছেলে রাফায়েল টুডু ১২ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা

        স্বাধীন সাংবাদিকতাকে নিরুদ্দেশ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব

        কেজরিওয়াল ও রাহুলকে ঘিরে চড়ছে ভোটের পার

        রাজধানী ঢাকায় ঝুম বৃষ্টির সম্ভাবনা

        এক টেবিলে গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা দিলেন ১৮ জন!

        এক টেবিলে গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা দিলেন ১৮ জন!

করোনা ও লকডাউনে আমেরিকান-উচ্চশিক্ষা প্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের ভিসা জটিলতা

করোনা ও লকডাউনে আমেরিকান-উচ্চশিক্ষা প্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের ভিসা জটিলতা

ছবি: এলএবাংলাটাইমস

অতিমারি করোনা ভাইরাসের আগ্রাসন আর লকডাউনের ধাক্কায় সমাজের প্রতিটি স্তরেই নেমে এসেছে অনিশ্চয়তা আর স্থবিরতা। এই স্বাস্থ্যগত দুর্যোগের কারণে এখন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করা মেধাবী এবং উচ্চশিক্ষা প্রত্যাশী শিক্ষার্থীরাও চরম হতাশা এবং অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হচ্ছে।

প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে তিন হাজারেরও অধিক শিক্ষার্থী অনার্স এবং মাস্টার্স সম্পন্ন করে উচ্চশিক্ষা এবং উন্নত গবেষণার হটস্পট যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মানসূচক মেধাবৃত্তি, ফেলোশিপ  নিয়ে পড়তে যায়, যারা সাফল্যের সাথে তাদের মেধার সাক্ষর রেখে সারা বিশ্বের সেরা ও উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকদের সাথে প্রতিযোগিতা করে বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে রাখছে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। এতে একই সাথে যেমন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বাংলাদেশের সুনাম ছড়িয়ে পড়ছে তেমনি এই উচ্চশিক্ষা লব্ধ জ্ঞান থেকে উম্মোচিত হচ্ছে দেশের উন্নয়নের অপার সম্ভাবনা।

দুর্ভাগ্যবশত দেশের এই সর্বোচ্চ মেধাবীরা আজ করোনা পরিস্থিতি এবং লকডাউনের কারণে ভিসা জটিলতায় পড়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সম্মুখীন। গত ৫ এপ্রিল থেকে চলমান নিষেধাজ্ঞায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেখানে তাদের জরুরি সেবা চালু রখেছিল, শিল্প-কারখানা, ব্যাংক, ইন্টার সিটি গনপরিবহণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছিল সেখানে বাংলাদেশে আমেরিকান দূতাবাস তাদের পূর্বনির্ধারিত সকল ভিসা ইন্টারভিউ বাতিল করে দেয়, একই ভাবে নতুন প্রজ্ঞাপনে ১৪ থেকে ২১ এপ্রিলের সর্বাত্মক লকডাউনেও তারা সকল ভিসা ইন্টারভিউ বাতিল করে দিয়েছে এবং নতুন করে কোন আবেদনও গ্রহণ করছে না। নেই ভবিষ্যতে সম্ভাব্য ইন্টারভিউ এর সময় এবং করনীয় নিয়ে কোন সঠিক দিক নির্দেশনা।

উচ্চ শিক্ষার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর সাধারণত তিনটি সেশনে শিক্ষার্থীরা ভর্তির সুযোগ পেয়ে থাকেন – স্প্রিং, সামার ও ফল। এ বছর, যে সকল শিক্ষার্থীরা সামার ২০২১ সেশনে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন, তাদের অধিকাংশেরই ক্লাস শুরু হবে মে মাসের মাঝামাঝি থেকে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে জুলাই-আগস্ট নাগাদ ফল সেশনের ক্লাস শুরু হবার কথা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি সংক্রান্ত নীতিমালা অনুযায়ী, সাধারণত যেকোন সেশনে কোন শিক্ষার্থী যদি ক্লাস শুরুর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে উপস্থিত হতে না পারে, সেক্ষেত্রে উক্ত সেশনে ঐ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল হয়ে যায়। এমতাবস্থায়, ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরুর কমপক্ষে ১৫ দিন আগে ভিসা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। গতবছর, ফল ২০২০ সেশনের অধিকাংশ শিক্ষার্থী ভিসা না পাবার কারণে তাদের নির্ধারিত সেশনে অংশ নিতে ব্যর্থ হয়। স্কলারশিপ/ফেলোশিপ সহ অনেক শিক্ষার্থীর ভর্তি প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায়। পাশাপাশি সীমিত সংখ্যক শিক্ষার্থীর ভর্তি ও স্কলারশিপ এবছর সামার ও ফল সেশনে পেছানোর সুযোগ দেয়া হয়। কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতি চলতে থাকলে শিক্ষার্থীদের বহুল আরাধ্য স্কলারশিপ ও ছাত্রত্ব বাতিল হবার পাশাপাশি ক্ষুণ্ণ হবে উচ্চশিক্ষায় বাংলাদেশের সুনাম। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ থেকে নতুন ভাবে শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপ দিতে অনীহা প্রকাশ করছে। আর এ সুযোগে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের তুলনায় এগিয়ে যাবে কয়েক গুন।

সংকট নিরসনে উচ্চ শিক্ষা প্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা নিজ উদ্যোগে একসাথে হয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তাদের প্রতিনিধি দলকে আশ্বাস দেয়া হয়েছে কিন্তু এখনও এ বিষয়ে কোন সুরাহা হয়নি। আমেরিকান দূতাবাস থেকে জানানো হয়েছে যে- সরকার থেকে কোন ধরণের অনুমতি না পেলে তারা এ ব্যাপারে কোন সমাধান করতে অপারগ। এরকম দায়সারা বক্তব্য এবং অনীহার মধ্য দিয়ে চরম ক্ষতি আর ধ্বংসের মুখে পড়ছে হাজার হাজার মেধাবী শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন।

চুয়েট থেকে পাশকৃত মেধাবী শিক্ষার্থী আমেরিকান F-1 ভিসা প্রত্যাশী জ্যোতির্ময় সাহা জানান, "করোনাভাইরাসের জন্য দুইবার আমি আমার ভর্তি পিছিয়েছি; প্রথমবার ফল '২০ থেকে স্প্রিং '২১ এ, আর এখন ফল '২১ এ। যুক্তরাষ্ট্রে পিএইচডি নিজ খরচে পড়া অসম্ভব বিষয়। আমার প্রফেসর আমাকে দুইবার ছাড় দিয়েছেন, কিন্তু এবার না যেতে পারলে আমার ফান্ডিং বাতিল হওয়ার তীব্র শংকায় আছি। এটি খুব হতাশাজনক বিষয় |"

আরও এক ফল ২০২০ থেকে ডেফারকৃত শিক্ষার্থী জানান, "২০২০ এর ফেব্রুয়ারিতে ফেলোশিপ অফার পাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, ফল ২০২০ সেমিস্টারে (আগস্ট ২০২০) ক্লাস শুরুর কথা ছিল। অথচ ভিসা প্রসেসিং হঠাৎ করেই মার্চ ২০২০ থেকে বন্ধ হয়ে যায়। প্রথম দিকে ভিসা ইন্টারভিউ এপয়েন্টমেন্ট স্লট পাওয়া যাচ্ছিল, কিন্তু সেসব ক্যানসেল হচ্ছিল একের পর এক। এরপর জুন মাস থেকে আর একেবারে স্লট পাওয়াই যাচ্ছিল না। সেই থেকে শুরু স্লট পাওয়ার যুদ্ধ। আগস্টের শুরুতে আমি আমার প্রোগ্রাম ডিফার করি। যেহেতু আমার পিএইচডি গবেষণার বিষয় ক্যান্সার বায়োলজি, যার জন্য ল্যাবে উপস্থিতি জরুরি, তাই ক্যাম্পাসে ঠিকসময়ে পৌঁছাতে না পারায় আমাকে ডিফার করতে হয়। আর তাছাড়া আমার বিশ্ববিদ্যালয় (মেডিকেল ইউনিভার্সিটি) জানায় তারা অনলাইন ক্লাসে যাচ্ছে না, কারণ ক্লাস সাইজ ছোট হওয়ায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ক্লাস নেয়া সম্ভব ছিল তাদের পক্ষে। পুরো ব্যাচে একমাত্র আমিই ডিফার করতে বাধ্য হই কারণ অন্যান্য দেশের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা ঠিকই সময়মত ইউএস পৌঁছাতে পেরেছিল। আর স্প্রিং সেসনেও ডিফার করার অপশন ছিল না বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তাই আমাকে আবার ফল ২০২১ এর অপেক্ষায় থাকতে হয়। একটা বছর অপেক্ষায় থাকার পর আমি সেই আগের অবস্থানেই আছি। কেননা আবারও সেই স্লট পাওয়া যাচ্ছে না, পেলেও ক্যানসেল হচ্ছে। এবছর আমাকে যথাসময়ে উপস্থিত থেকে আমার ক্লাস এবং ল্যাবের কাজ শুরু করতেই হবে, এমনটাই কথা হয়েছে আমার প্রফেসর এবং কলেজ ডিন এর সাথে। আমার মত এমন শিক্ষার্থীদের সংখ্যা প্রায় শতাধিক যারা ফল ২০২১ এ ডিফার করতে বাধ্য হয়েছে এবং এবছরই আমাদের জন্য শেষ সুযোগ, কেননা অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় একাধিকবার ডিফারাল এর সুযোগ দেয় না, বা দিলেও ফান্ডিং পাওয়া যায় না। বাংলাদেশী শিক্ষার্থী হিসেবে প্রতিযোগিতামূলক ক্ষেত্রে মেধার সাক্ষর হিসেবে ফেলোশিপ পাওয়াটা একাডেমিয়াতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে। আর ভিসা জটিলতায় সময়মত প্রোগ্রাম শুরু করতে না পারার কারণে যদি সেই ফেলোশিপ ক্যানসেল হয় সেটা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করে, যা পরবর্তী বছরগুলোতে আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের আবেদন প্রক্রিয়ায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।"

 বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গ্র্যাজুয়েট বলেন- “আমি দেশের একটি স্বনামধন্য বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলাম কিন্তু বাংলাদেশের শিল্প-ব্যাবস্থাপনার পশ্চাৎপদতা আর উন্নত প্রযুক্তির অভাব অনুধাবন করে আমি এ বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রী নেবার সিদ্ধান্ত নেই। গত বছর একাধিক আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েও সময়মত ভিসা না পাওয়ায় আমার স্কলারশিপ বাতিল হয়ে যায়, হতাশা ভুলে এ বছর আমি আবার আবেদন করি এবং এবারও একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি স্কলারশিপ পেয়েছি। কিন্তু এবারও কি আমাকে একই পরিনতির শিকার হতে হবে!”

অপর একজন শিক্ষার্থী জানান- “প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে আবেদন ফি এবং স্কোর সাবমিশন বাবদ ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়, দিতে হয় জি আর ই, টোফেল, আইইয়েলটিএস এর মত পরীক্ষা যেগুলোর প্রত্যেকটির ফি ১৭ হাজার টাকা করে এবং এগুলোর মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে এবছরই। আমার পরিবার আর্থিকভাবে সচ্ছল ছিল না বিধায় আমি প্রাইভেট টিউশনি করে এই টাকা জমিয়ে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু এই ভিসা জটিলতায় আমার স্বপ্ন আজ ভেঙ্গে যাবার উপক্রম” একই ভাবে বিশ্বের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বলে খ্যাত এম আই টি, স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, সুযোগ প্রাপ্ত একাধিক শিক্ষার্থী আজ অনিশ্চয়তা আর স্বপ্নভঙ্গের দ্বারপ্রান্তে।

জাতির ভবিষ্যৎ মেধাবী এ তরুণ সমাজের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর এবং আমেরিকান দূতাবাসের যৌথ উদ্যোগে শিক্ষার্থী দের ভিসা প্রদানে দূতাবাসের কার্যক্রম লকডাউনের আয়তামুক্ত রাখা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে এই সেবা সচল রাখার জোর দাবী শিক্ষার্থী, অভিভাবক, সকলের।

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত