পৌরসভা "খ" শ্রেণি থেকে "ক" শ্রেণিতেও উন্নীত হলো কিন্তু আলোর মুখ দেখছে না
ফের রাজধানীর দুই স্থাপনায় অগ্নিকাণ্ড
গত বৃহস্পতিবার বনানীর বহুতল ভবন এফআর টাওয়ারের ভয়াবহ অগ্নিকা-ের একদিন পর শনিবার রাজধানীর আরও দুই স্থাপনায় অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটল। শনিবার সকালে আগুনে পুড়ে ছাই হলো গুলশান-১ এর ডিএনসিসি মার্কেট। এর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর গুলশান-২ এ ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্স ভবনে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার বিকাল পৌনে ৪টার দিকে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সকালের আগুন নিভতে না নিভতেই গুলশান-২ এ ডেল্টা টাওয়ারে আগুন লাগার ঘটনা ঘটল।
পুড়ে ছাই ব্যবসায়ীদের স্বপ্ন:
রাজধানীর গুলশানের ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) মার্কেট ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনায় এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত। আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়ে ছাই হয়েছে বহু ব্যবসায়ীর স্বপ্ন।
দু’বছর আগে আগুনে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল তা পুষিয়ে নেয়ার আগেই আবারও পুড়ল ব্যবসায়ীদের কষ্টার্জিত শেষ সম্বল। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া মার্কেটে এখন আছে শুধু ছাই। ছাই ছাড়া কিছু নেই। মার্কেটজুড়ে শুধু আহাজারি আর কান্নার রোল।
শনিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে গুলশান ১ নম্বরের এ মার্কেটে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। আগুনের খবর পেয়ে ছুটে আসেন, ব্যবসায়ীরা, সাধারণ মানুষ, ফায়ার সার্ভিস, নৌবাহিনী ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। ফায়ার সার্ভিসের ২০টি ইউনিট ও নৌবাহিনীর ২টি ইউনিট আড়াই ঘণ্টা পর সকাল ৮টা ২৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
সিটি কর্পোরেশনের ওই মার্কেটের প্রায় ১৮৮টি দোকান রয়েছে। সবগুলোই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বলে দাবি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের।
ব্যবসায়ীদের দাবি, মার্কেটে প্রায় ১৮৮টি দোকানের সবগুলোই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। বেশির ভাগ দোকানগুলোতে ছিল দুধ, মসলা, খাদ্য ও শিশুপণ্য।
দুই বছর আগে ডিএনসিসি মার্কেটে পুড়ে গিয়েছিল ব্যবসায়ী মামুন হোসেনের মসলার দোকান। সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবারও আগুন লাগার ঘটনা ঘটল। আগুনে মামুনের দুটি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। মামুন পাইকারি মসলা ব্যবসায়ী।
মামুন জানায়, আমাদের সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। গত বছর আগুন লাগার পর অনেক কষ্টে আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্ঠা করছিলাম। আবারও আগুনে আমাদের সর্বস্বান্ত করল। এই মার্কেটে তার আরও দুই ভাইয়ের দোকান পুড়ে গেছে বলেও জানান তিনি।
ডিএনসিসি মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ২০১৭ সালের ৩ জানুয়ারি এ মার্কেটে আগুন লেগে সবকিছু পুড়ে যায়। তখন প্রণোদনা দেওয়ার কথা থাকলেও এখনো পাননি সেই সহায়তা।
মামুনের দাবি, সরকার ও সিটি কর্পোরেশন যেন ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়ায়।
শুধু মামুন নয়, ডিএনসিসির এই মার্কেটের আগুনে সর্বস্ব হারিয়েছেন বহু ব্যবসায়ী। তাদের শেষ সম্বল এখন শুধুই চোখের পানি।
ডিএনসিসি মার্কেটে অগ্নিকা-ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন) মেজর একেএম শাকিল নেওয়াজ বলেন, এর আগে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে এই মার্কেটটি অগ্নিকা-ে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। অগ্নিকা-ের পর মার্কেটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে যেসব সুপারিশ করা হয়েছিল তা বাস্তবায়ন করা হয়নি।
তিনি বলেন, এই মার্কেটের ব্যাপারে আমাদের অনেক নির্দেশনা আছে। এ মার্কেট কমিটিকে তিন থেকে চারবার সাবধানতা নোটিশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু এরপরও তারা শুধরায়নি।
ডিএনসিসি মার্কেটে আগুনের ঘটনা পরিদর্শনে আসেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, এর আগেও এখানে আগুন লেগেছিল। কেন বারবার এই অগ্নিকা- হচ্ছে সেটা খতিয়ে দেখা হবে। এখন সময় এসেছে স্থায়ী সমাধান করার।
গুলশান-২ ডেলটা টাওয়ারে আগুন:
শনিবার বিকেল পৌনে ৪টার দিকে গুলশান-২ এ ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্স ভবনে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে।
গত বৃহস্পতিবার বনানীর বহুতল ভবন এফআর টাওয়ারের ভয়াবহ অগ্নিকা-ের একদিন পর শনিবার সকালে আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে গুলশান-১ এর ডিএনসিসি মার্কেট।
সেই আগুন নিভতে না নিভতেই গুলশান-২ এ ডেল্টা টাওয়ারে আগুন লাগার ঘটনা ঘটল। তবে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট যাওয়ার আগেই আগুন নিভে যায় বলে জানায় ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষ। তবে তাৎক্ষণিকভাবে অগ্নিকা-ে হতাহত এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানাতে পারেনি তারা।
ফায়ার সার্ভিস কন্ট্রোলরুমের ডিউটি অফিসার গণমাধ্যমকে বলেন, ভবনটির একটি কক্ষে টিউবলাইট বিস্ফোরণ হয়ে আগুন লাগে। আগুন লাগার পর আমাদের যেতে বলা হলেও পরে যেতে হয়নি। ভবনটির কর্মকর্তারা নিজেরাই আগুন নিভিয়ে ফেলেছেন।
গুলশান থানার এসআই সিনথিয়া গণমাধ্যমকে জানান, আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। কোনো ধরনের হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
জানা যায়, রাজধানীর অন্যতম উঁচু এই ভবনটির ৪তলায় অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক ও সুইডেনের ভিসা সেন্টার অফিস ছাড়াও ভবনটিতে ইনস্যুরেন্স, ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি কর্পোরেট অফিস রয়েছে। ভবনটির ৪তলায় উত্তর দিকের একটি স্টোর রুমের লাইট বিস্ফোরিত হয়। ভবনটির নিজস্ব হাইড্রেন্ট ও ফায়ার ফাইটিং ইউনিট দিয়ে আগুন নেভানো হয়। এর পাশের ভবনটি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে আগুন লাগে কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ের পাশের ১৭ নম্বর সড়কে এফ আর টাওয়ারে। ভবনের নবম তলায় আগুনের সূত্রপাত। পরে ছড়িয়ে পড়ে ২৩তলা ভবনের বেশ কয়েকটি তলায়। প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা চেষ্টার পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস। অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারকাজে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ও বিমানবাহিনীর পাঁচটি হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়। ভবনটির ছাদে আটকেপড়া অনেককে উদ্ধার করে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার। এ ছাড়া অগ্নিনির্বাপণে হেলিকপ্টার থেকে ভবনটিতে পানিও ফেলা হয়।
ভয়াবহ এই আগুনে শনিবার সকাল পর্যন্ত ২৬ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। আহত অন্তত ৭৩ জন রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এলএবাংলাটাইমস/এন/এলআরটি
শেয়ার করুন