আপডেট :

        ২০১৫ সালের মামলা থেকে মুক্তি পেলেন খালেদা জিয়া, কুমিল্লায় আদালতের রায়

        রাশিয়ার পরিবহনমন্ত্রীকে অপসারণ করলেন পুতিন

        ঐতিহাসিক মুহূর্ত: জেনিফার সাইমনস সুরিনামের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে মনোনীত

        শ্রীলঙ্কার ওয়ানডে সিরিজের দল ঘোষণা: দুই মালিঙ্গার জোড়া হুমকি

        মালয়েশিয়ার আকাশে অদ্ভুত পরীর আবির্ভাব: রহস্যের জালে ঘেরা গল্প

        ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস, ৭ অঞ্চলে পাহাড়ধসের সম্ভাবনা

        শিক্ষা উপদেষ্টার পরামর্শ: কারিগরি শিক্ষায় জোর দিন

        ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত ও হেফাজত আমিরের বৈঠক: শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি

        বিশ্ব বাণিজ্যে ট্রাম্পের নতুন পদক্ষেপ: কমছে স্বর্ণের দাম

        ফলের রস না স্মুদি: কোনটি আপনার সকালকে করবে আরও স্বাস্থ্যকর?

        লালনশিল্পী ফরিদা পারভীনের চিকিৎসা: ছেলে চাইলেন সকলের দোয়া

        এশিয়ান কাপের ইতিহাস গড়ে নারী ফুটবল দলকে মধ্যরাতে বাফুফের সংবর্ধনা

        ইলন মাস্কের দল নিয়ে ট্রাম্পের বিদ্রূপ: ‘হাস্যকর’ বলে উড়িয়ে দিলেন

        আসন্ন নির্বাচন: পুলিশের প্রস্তুতি নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ঘোষণা

        ট্রাম্পের বাণিজ্য চাপের মুখে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কড়া বার্তা

        “ফরিদপুরে এ.কে. আজাদ বাড়িতে বিএনপি মিছিল নিয়ে চড়াও, গণসংহতি আন্দোলনের তীব্র প্রতিবাদ

        ক্লাব বিশ্বকাপে খেলায় Musiala ইনজুরিতে পরাজিত বায়ার্ন — PSG সেমিতে জয়ী

        করোনা ও ডেঙ্গুর সংক্রমণ বাড়ছে: একদিনে ২৯৪ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত, একজনের মৃত্যু

        “সাইফুল হক: রাজনৈতিক মতপার্থক্যের মধ্যেও জাতীয় ঐক্য বজায় রাখতে হবে”

        পাওয়ার প্লেতে ব্যাটিং-ঝড় তোলায় দম বন্ধ করা পরিবেশ

নুসরাতকে নিয়ে ছোট ভাই রায়হানের আবেগঘন স্ট্যাটাস

নুসরাতকে নিয়ে ছোট ভাই রায়হানের আবেগঘন স্ট্যাটাস

পাঁচদিন একটানা মৃত্যুর সাথে লড়াই করে ১১ এপ্রিল দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন নুসরাত জাহান রাফি । এই একটি মৃত্যু নাড়িয়ে দিয়ে গেছে পুরো দেশকে। যে শিক্ষকের কাছে শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে নিরাপদে থাকার কথা সেখানে গিয়েই ভয়ংকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে নুসরাতকে। অনেক বাঁধা উপেক্ষা করে নুসরাত তার সাথে করা অপরাধের প্রতিকার চাইতে গিয়েছিলেন থানায়, সেখানেও তাকে তুচ্ছ, তাচ্ছিলের শিকার হতে হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে এই সংক্রান্ত একটি ভিডিও শেয়ার হয়েছে। যা সারা দেশের মানুষের মতো নুসরাতে পরিবারেও বিষাদের ছায়া ফেলেছে। এই বিষাদ ফুটে উঠেছে নুসরাতের ছোটভাই রায়হানের আবেগঘন স্ট্যাটাসে। রায়হান তার স্ট্যাটাসের শিরোনাম দিয়েছেন, ‘ঘাতকের আগুনে পুড়ে ছারখার আমাদের সোনালী সংসার’। নিচে স্ট্যাটাসটি হুবুহু উপস্থাপন করা হলো

আবার এসেছিল বৈশাখ, পাড়া প্রতিবেশীর ঘরে ঘরে দেখছি আনন্দের বন্যা। আর আমাদের ছোট্টঘর নিকোষ অন্ধকারে আচ্ছন্ন। অথচ গত বছরের এই সময় আমাদের এই সংসারে কতইনা আনন্দ ছিল। আজ আপুমণিকে হারিয়ে সকল উৎসব অশ্রুজলে বিবর্ণ হয়ে গেছে। ঘাতকের আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে গেলো আমাদের সোনালী সংসার।

কখনোও ভাবিনি আমাদের সমাজে মানুষের পোষাকধারী কিছু অসভ্য জন্তু-জানোয়ার বসবাস করে। যদি আগে জানতে পারতাম তাহলে কলিজার টুকরা আপুকে কখনোও ঘর থেকে বের হতে দিতাম না। মানুষ কতটা নির্দয়-নির্মম হলে একজন মানুষকে পুড়িয়ে মারতে পারে! কী অপরাধ ছিলো আমার আপুর ?

একজন লম্পটের যৌন নিপীড়ন রুখে দিতে প্রতিবাদী হয়েছিলো আমার আপু। সেই প্রতিবাদের মৃত্যু হয়েছে ১০৮ ঘন্টা বার্ণ ইউনিটে (ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল) আপুর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের মাধ্যমে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। বাবা-মায়ের পর শিক্ষকরাই আমাদের বড় অভিভাবক। আর সেই অভিভাবক যখন একজন ছাত্রীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন, তখন মনে হয় এই সমাজ আর ভালো নেই।আবার লম্পটকে বাঁচানোর জন্য তার পক্ষে নিয়েছিল কিছু রাজনীতিবিদ ও মানুষরুপী লম্পট। লম্পটের বিচার চাইতে গিয়েছিলাম ওসি সাহেবের কাছে। তিনি আমার আপুকে নিরাপত্তা না দিয়ে মানুষিক নির্যাতন করে ভিডিও করলেন। ওসি সাহেব যদি সচেতন হয়ে বিষয়টি তদন্ত করতেন কিংবা আমার আপুর নিরাপত্তা জোরদার করতেন, তাহলে আমার আপুকে পরপারে পাড়ি দিতে হতো না।

মনে পড়ছে আপুমণির আইসিউতে বলা শেষ কথাগুলো ‘রায়হান, আম্মা-আব্বার দিকে খেয়াল রাখিস। আমাকে নিয়ে চিন্তা করতে বারণ করিস। আমাকে যারা পুড়িয়ে দিলো তাদের যেন সঠিক বিচার হয়। না হলে আমি মরেও শান্তি পাবো না।’ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার আপুর চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। লম্পটদেরকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। আপুকে দেশের বাহিরে পাঠানোর জন্য ডাক্তারগণকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। ডাক্তারগন সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও আপুকে বাঁচাতে পারিনি। আমাদের পরিবারকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ডেকে তিনি একজন মমতাময়ী মায়ের পরিচয় দিয়েছেন। আমরা তার কাছে বলেছি, আমার আপুর হত্যাকারীদের যেন দ্রুত বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হয়। তিনি আমাদের নিশ্চিত করেছেন, বিচারে কোন দুর্বলতা রাখা হবেনা। আসামীদের রেহাই দেয়া হবে না বলে তিনি জানিয়েছেন। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিচার-প্রশাসনের প্রতি আস্থা রেখে বলতে চাই, এই সকল জানোয়ারদের কঠিন শাস্তি দেয়া প্রয়োজন। ভবিষ্যতে যেন কোন ভাইয়ের বুক থেকে তার বোনকে কেড়ে নিতে না পারে।

প্রতিদিন সন্ধ্যায় যখন বাড়ী ফিরে দেখি আপুর রুমটা খালি পড়ে আছে। যেই টেবিলে বসে পড়ালেখা করতো সেখানে বই খাতাগুলো ঠিকই আছে। আছে আপুর ব্যবহৃত জিনিসপত্রগুলো। নেই শুধু আমার কলিজার টুকরা আপুটি। বিশ্বাস করুণ, একবুক চাঁপা কষ্ট, বেদনায় আমার ছোট্ট হৃদয়টি দুমড়ে মুচড়ে যায়। প্রতিটি মুহূর্তে মনে পড়ে যায় আপুর কথা। ঘুমের ঘরে জেগে উঠি আপুর শেষ দিনগুলির নির্মম কষ্টের কথা স্বপ্নে দেখে। শেষ রাতে চোখে একফোঁটা ঘুম আসেনা আপুর কথা ভেবে।

আমাদের পরিবারের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীক ছিলো আপু। পরিবারের প্রতিটি সদস্যের সাথে তার ছিলো আন্তরিকতাপূর্ণ ভালোবাসার সম্পর্ক। শান্ত মেজাজের অধিকারী হওয়ায় পরিবারের সকল সমস্যা অত্যন্ত ধীরচিত্তে সমাধান করতো। আমাদের সাথে দূরের কথা পাড়া-প্রতিবেশীর কারও সাথে কোনদিন ঝগড়া-বিবাদে নিজেকে জড়ায়নি। আব্বুর অনেক আস্থাভাজন হওয়ার কারণে, আব্বু কোন দিন তার প্রিয় সন্তানের কোন চাহিদা অপূর্ণ রাখেননি। প্রতিদিন ফজরের নামাজের পর তার কোরআন তেলোয়াতের মধুর সুর এখনও আমার কানে বাজে।

বাড়ির সকল কাজে আম্মুকে সহযোগিতা করতো। আম্মু আমাদের নিয়ে টেনশন করলে, আপু অভয় দিয়ে বলতো আমরা এমন কোন কাজ করবো না যাতে আপনাদের সম্মান হানি হয়। বরং আমরা ৩ ভাইবোন পড়ালেখা করে মানুষের মতো মানুষ হয়ে সমাজে আপনাদের মুখ উজ্জল করবো। সেই উজ্জলতার প্রতিচ্ছবি ছিলো আমাদের সংসার। আপুর মতো ক্ষণজন্ম বোন আমাদের ছোট ঘরকে সবসময় আলোকিত করে রাখতো। যা আজ নিভে গিয়ে একমুঠো ছায়ায় পরিণত হয়েছে।

আজ সারাদেশে এমন কি দেশের বাহিরেও আমার আপুর হত্যাকান্ড মানুষ যেভাবে প্রতিবাদ মুখর হয়ে উঠেছে, তাতে আমার মনে পড়ে যাচ্ছে কবির বলে যাওয়া কথা...‘এমন জীবন করিবে গঠন / মরণে হাসিবে তুমি/ কাঁদিবে ভুবন’

আল্লাহর কাছে একটাই চাওয়া আমার আপুকে যেন তিনি জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন। আর খুনিদের দুনিয়া ও আখেরাতে কঠোর শাস্তি প্রদান করেন। (আমীন)

রায়হান
হতভাগা নুসরাতে ছোট ভাই

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত