২০১৫ সালের মামলা থেকে মুক্তি পেলেন খালেদা জিয়া, কুমিল্লায় আদালতের রায়
ডেঙ্গু কেড়ে নিলো ঢাবি শিক্ষার্থীর পরিবারের স্বপ্ন!
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী ফিরোজ কবীর স্বাধীনের মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারছেন না। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে শুক্রবার (২৬ জুলাই) রাতে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে তিনি মারা যান।
ফিরোজের চাচাতো ভাই আনোয়ার হোসেন ঠাকুরগাঁও থেকে মুঠোফোনে বলেন, ‘পরিবারের সবাই স্বপ্ন দেখতো ফিরোজকে নিয়ে। বড় হয়ে একদিন সবার স্বপ্ন পূরণ করবে সে। বিভাগে ভালো ফল করায় উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়ার আশাও ছিল তার। ডেঙ্গু সব শেষ করে দিলো।’
ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ায় গত ১৮ জুলাই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় ফিরোজকে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) রাতে স্কয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরদিন শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ফিন্যান্স বিভাগের মাস্টার্স পরীক্ষার ফলপ্রত্যাশী ছিলেন ফিরোজ। থাকতেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ৪১৪ নম্বর কক্ষে। তার মৃত্যুতে পরিবারে গভীর শোক নেমে এসেছে। ক্যাম্পাসেও তার সহপাঠী, বড় ভাই, ছোট ভাইসহ সবাই শোক কাতর হয়ে পড়েছেন।
শনিবার (২৭ জুলাই) গ্রামের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ে ফিরোজের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন তিনি।
চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন ফিরোজ। তার বড় দুই ভাই কৃষিকাজ করেন। তারা ফিরোজের পড়াশোনার খরচ দিতেন। তবে তার এত দূর আসার পেছনে বোনদের অবদানও কম ছিল না।
ফিরোজের চাচাতো ভাই আনোয়ার হোসেন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ফিরোজের মৃত্যুতে তার পরিবারে শোক চলছে। চার ভাই-বোনের মধ্যে ফিরোজ ছিল সবার ছোট। পরিবারে সবার আশা-ভরসা ছিল এই ছোট ভাইকে নিয়ে। কিন্তু তার মৃত্যুতে সব শেষ হয়ে গেলো। বাবা-মার স্বপ্ন ছিল ছেলে ম্যাজিস্ট্রেট হবে। আর ভালো ফলাফল করায় ফিরোজের স্বপ্ন ছিল বিদেশে গিয়ে পড়বে।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের ফিরোজ তো চলে গেলো। তার মতো আর কোনও শিক্ষার্থী যেন অকালে না চলে যায়, সেজন্য সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
ফিরোজ কবীরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘ফিরোজের মৃত্যু কোনোভাবেই আমরা মেনে নিতে পারছি না। সে খুবই ভালো ছেলে ছিল। কোনোদিন কারো সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব হতে দেখিনি। বিভাগে তার খুব ভালো রেজাল্ট ছিল। তার পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো ছিল না। খুব কষ্ট করে সে এ পর্যন্ত এসেছে।’
তিনি বলেন, “আমরা বিভাগে আলোচনা করেছি, যাতে ওর নামে একটি ‘স্কলারশিপ ফান্ড’ হয়। ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে ঠিকমতো চিকিৎসা না হওয়ায় তাকে স্কয়ারে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানেও তাকে বাঁচানো গেলো না। তার জন্য এখনও ৩ ব্যাগ ব্লাড সংরক্ষণ করে রেখেছি।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘ফিরোজের অকাল মৃত্যু আমাদের কাম্য ছিল না৷ এটি আমাদের কাছে সত্যিই বেদনাদায়ক এবং কষ্টের। বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া একজন শিক্ষার্থীকে ঘিরে যেমন তার পরিবারের আশা-আকাঙ্ক্ষা থাকে, তেমনি রাষ্ট্র, সমাজও তার থেকে অনেক কিছু প্রত্যাশা করে। আমি সব শিক্ষার্থীকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
শেয়ার করুন