২০১৫ সালের মামলা থেকে মুক্তি পেলেন খালেদা জিয়া, কুমিল্লায় আদালতের রায়
ভারত-সিঙ্গাপুর-জাপান আবাসিকে গ্যাস বাড়ালেও বাংলাদেশে বন্ধ!
সম্প্রতি সরকার দেশে আবাসিক খাতে পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিশ্বের কোনও দেশই পাইপ লাইনে গ্যাস দেওয়া হয় না। বাংলাদেশই কেবল পাইপ লাইনে গৃহস্থালিতে গ্যাস সরবরাহ করে গ্যাসের অপচয় করছে। অথচ সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে গঠিত কমিটিরই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাশ্রয়ী জ্বালানি ব্যবহারে সুযোগ করে দিতে ভারতের সব জেলা শহরে গ্যাস পাইপ লাইন বসাচ্ছে দেশটি। পাশাপাশি সিঙ্গাপুর ও জাপানও পাইপ লাইনে গ্যাসের সরবরাহ বাড়াচ্ছে। অথচ একই সময়ে বাংলাদেশে ঘটছে এর উল্টো ঘটনা।
সরকারের ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ভারতে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ১০ম বিডিং-এর আওতায় দেশের ১২৪টি জেলা শহরে পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহ করার লক্ষ্যে সিটি গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন (সিএসডি) কার্যক্রম পরিচালনার জন্য লাইসেন্স দিয়েছে। এরফলে, দেশটির ২৭ প্রদেশের ৪০২টি জেলা সিএসডির আওতায় এসেছে। ভারত সরকার অন্য কম গুরুত্বপূর্ণ খাত থেকে গ্যাস প্রত্যাহার করে করে আবাসিক ও সিএনজিখাতে বরাদ্দ করছে।
গত ১৫ মে দেশে যখন গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়, তখন আবাসিকের সঙ্গে সিএনজিতেও গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এর কাছাকাছি সময়ে পশ্চিমবঙ্গে পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পশ্চিমবাংলা রাজ্য সরকার আশা করছে, ২০২০ সালের মধ্যে পাইপ লাইনের মাধ্যমে গৃহস্থালি ও সিএনজিতে গ্যাস দেওয়া সম্ভব হবে।
সম্প্রতি গ্যাস অথোরিটি অব ইন্ডিয়া লিমিটেডকে (জিএআইএল) দেওয়া এক নির্দেশনায় ভারত সরকার বলেছে, গ্যাস বিতরণের বার্ষিক সম্মেলনে নতুন দিল্লিতে গত বছর ১৩ ডিসেম্বর জানানো হয়, ভারত শহর এলাকায় আবাসিকে গ্যাস দেওয়ার নীতি গ্রহণ করায় গত পাঁচ বছরে বার্ষিক ১৭ ভাগ হারে পাইপ লাইন নির্মণের হার বেড়েছে।
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নির্দেশে গঠিত কমিটি গত ১৩ মার্চে তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, সিঙ্গাপুরে পাইপলাইন গ্যাস সরবরাহের জন্য ২০০২ সালে পাওয়ার গ্যাস লিমিটেড কোম্পানি থেকে আলাদা করে সিটি গ্যাস কোম্পানি গঠন করা হয়। বর্তমানে প্রায় এক মিলিয়ন আবাসিক বাসস্থানে সিটি গ্যাস রান্নায় জ্বালানির জন্য পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ করছে। সিঙ্গাপুরে এলপি গ্যাস সরবরাহের জন্য বেশ কয়েকটি কোম্পানিও কাজ করছে। দেশটিতে নাগরিকদের পাইপলাইনে গ্যাস, এলপি গ্যাস ও বিদ্যুৎ থেকে রান্নায় ব্যবহারের জন্য জ্বালানির অপশন খুঁজে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। সিঙ্গাপুরে বর্তমানে প্রায় দুই তৃতীয়াংশেরও বেশি বাসস্থানে জ্বালানি হিসেবে পাইপলাইন প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার হচ্ছে বলেও ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘টোকিও গ্যাস’ জাপানের টোকিও মেট্রোপলিটন ও এর আশেপাশের শহর নাগানো, কানাগাওয়া, সাইটামা, সিবা, টোচিগি, ইয়াসাকি ইত্যাদি শহরে পাইপলাইন গ্যাস সরবরাহ করছে। ‘টোকিও গ্যাস’ জাপানের সিটি গ্যাস সরবরাহকারীদের মধ্যে সবচেয়ে বড় কোম্পানি। এই কোম্পানি প্রায় ৬৫ হাজার কিলোমিটার গ্যাস পাইপলাইন স্থাপনের মাধ্যমে প্রায় ১১ মিলিয়ন গ্রাহককে গ্যাস সরবরাহ করছে। জাপান মূলত এলএনজি আমদানির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ গ্রাহককে আবাসিক রান্নায় পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ করে আসছে। জাপানে রান্নায় পাইপলাইন ‘গ্যাস টাউন গ্যাস’ নামেও পরিচিত।
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নির্দেশে গঠিত ওই কমিটির প্রধান করা হয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য মিজানুর রহমানকে। এতে রয়েছেন আরও ৫ সদস্য। তারা হলেন, জ্বালানি বিভাগের যুগ্ম সচিব ড. শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক, পেট্রোবাংলার পরিচালক মো. কামরুজ্জামান, তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোস্তফা কামাল, পিডিবির সদস্য উৎপাদন সাঈদ আহমেদ এবং আরপিজিসিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কামরুজ্জামান। এই কমিটি পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহকে লাভজনক ও নিরাপদ মনে করছেন। কমিটির একজন সদস্য জানান, গত ১৩ মার্চ প্রধানমন্ত্রী কাযালয়ে প্রতিবেদনটি জমাও দিয়েছেন তারা। কিন্তু গত ১৫ মে দেশের গৃহস্থালিতে আর পাইপ লাইনের গ্যাস না দেওয়ার বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে জ্বালানি বিভাগ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ শামসুল আলম বলেন, ‘আবাসিকে নতুন করে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করার আগে আগে গ্যাসের চুরি বন্ধ করতে হবে। বিশ্বের কোনও দেশে এমন করে গ্যাস চুরি হয় না। বিদেশে যেখানে পাইপলাইনে গ্যাস দেওয়া হয়, সেখানে প্রি-পেইড মিটার ব্যবহার করা হয়। আমাদের দেশের মতো পোস্ট পেইডে কোথাও আবাসিক গ্যাস দেওয়া হয় না।’ তিনি বলেন, ‘আমি যতটুকু গ্যাস ব্যবহার করবো, কতটুকুরই দাম দেবো। এটাই হওয়া উচিত।’
জানতে চাইলে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিম বলেন, ‘আমিও মনে করি, বিশ্বের অন্য দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও রান্নায় পাইপলাইনে গ্যাস, এলপিজি ও বিদ্যুতের ব্যবহারের অপশন থাকা দরকার।তবে, নতুন গ্যাস সংযোগের ক্ষেত্রে গ্যাসের সরবরাহ এলএনজির মাধ্যমে বাড়লেও নতুন পাইপলাইনের বিনিয়োগের বিষয়টি আমাদের মাথায় রাখতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘এইখানে একটি বড় বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে। সেটি কীভাবে করা হবে তাও আমাদের চিন্তা করতে হবে। তবে এলপিজির একক ব্যবহারের কোনও মানে হয় না।’ আবাসিকেও পাইপলাইনের ব্যবহার রাখতে হবে বলে তিনি মনে করেন।
শেয়ার করুন