২০১৫ সালের মামলা থেকে মুক্তি পেলেন খালেদা জিয়া, কুমিল্লায় আদালতের রায়
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বাংলাদেশের ডেঙ্গু মহামারি পর্যায়ে
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে উঠে এসেছে বাংলাদেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতির কথা। প্রতিদিন বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়েছে গেছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীতে।
সরকারি হিসাবে থেকে ১৪ জন মৃত্যুর তথ্য দিলেও বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান এই সংখ্যা অনেক দাবি করছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতা ও এ নিয়ে ভীতি ছড়িয়ে পড়ার তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
ভিডিও প্রতিবেদনে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে ওয়ার্ল্ড সার্ভিস বলছে, হাসপাতালের বেডে রোগীদের স্থান সংকুলান হচ্ছে না। আক্রান্তদের মেঝেতে আশ্রয় দিতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ।আক্রান্তদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যাই বেশি। শিশুরা স্কুলে গিয়ে আক্রান্ত হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, তুরস্ক, ভারত, জার্মান, রাশিয়া ও চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে প্রকাশিত সংবাদমাধ্যমে রোগীর সংখ্যা, সরকারি ও বেসরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যার পার্থক্য, পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতা ও এ নিয়ে ভীতি ছড়িয়ে পড়ার তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
মার্কিন বার্তা সংস্থা এপির শিরোনাম ‘দেশের সবচেয়ে ভয়াবহ ডেঙ্গু প্রকোপের সঙ্গে লড়ছে বাংলাদেশ’। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের বর্তমান ডেঙ্গু পরিস্থিতির ভয়াবহতা তুলে ধরে বলা হয়েছে, ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব মোকাবিলা করছে বাংলাদেশ।
হাসপাতালগুলোতে রোগীদের উপচেপড়া ভিড়। শুধু তাই নয় গাজীপুরে ডেঙ্গুর সঙ্গে দেখা দিয়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ ওই প্রতিবেদনে মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) নাগাদ বাংলাদেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বলা হয়, ৬৪ জেলার ৬১টিতে এ রোগ ছড়িয়ে পড়েছে।
সরকারি তথ্যকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ১৫ হাজার ৩৬৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে শুধু ১ জুলাই থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৯ হাজার ৬৮৩ জন আক্রান্ত। মঙ্গলবার হাসপাতালগুলোয় শিশুসহ ৪ হাজার ৪০০ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন ছিল। প্রতিবেদনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১৪ জনের মৃত্যুর তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট তাদের এ সংক্রান্ত সংবাদের শিরোনামে বলছে, বাংলাদেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি ‘অতীতের যে কোনও সময়ের চেয়ে খারাপ অবস্থায়’ পৌঁছেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ১৩ হাজার মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। যে কারণে কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে জনসচেতনতামূলক প্রচার শুরু করতে বাধ্য হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তারকে উদ্ধৃত করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, ২০০০ সাল থেকে বাংলাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতির তথ্য রাখা শুরু হয়েছে। সেই থেকে বিচার করলে এবারের অবস্থা সবচেয়ে ভয়াবহ।
চায়না ডেইলির শিরোনামে বলা হয়েছে, ‘দেশজুড়ে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে’। কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চল সবথেকে বেশি ডেঙ্গু-ঝুঁকিতে রয়েছে।
কলকাতাভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘এই সময়’র খবরে বলা হয়েছে, ডেঙ্গু ও বন্যাজনিত কারণে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যুক্ত সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্যের সূত্রে ওই সংবাদমাধ্যম বলছে, বুধবার দুপুর পর্যন্ত ১ হাজার ৩৩৫ জন আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
যার মধ্যে ঢাকায় বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছেন ৯৭৪ জন। পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেকের নিজ দফতরে ডেঙ্গু সংক্রান্ত মিনিস্টার মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে।
এশিয়া নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘মানুষের মধ্যে ডেঙ্গু আতঙ্ক বিরাজ করছে। কোনো ধরনের লক্ষণ দেখা দিলেই তারা হাসপাতালে ছুটছেন। ঢাকার হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন শত শত মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন। আক্রান্তদের জন্য শয্যার ব্যবস্থা করতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো।’
চীনা সংবাদমাধ্যম সিনহুয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সহসা ডেঙ্গু রোগের ভাইরাসের প্রকোপ কমার সম্ভাবনা কম। কারণ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ রোগের ভাইরাসবাহী এডিস মশার প্রজনন প্রক্রিয়া চলতে থাকে। এ রোগের বিস্তার ঠেকাতে মশার বংশবিস্তারের এলাকা যথাযথভাবে শনাক্ত ও ধ্বংস করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন আইইডিসিআর’র পরিচালক মীরজাদী সাবরিনা।
দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৬৩টিতেই ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য বলছে, এক নেত্রকোনা ছাড়া বাকি সব জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। সরকারি এই পরিসংখ্যান সেল বলছে, গত ১ জানুয়ারি থেকে বুধবার (৩১ জুলাই) পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৭ হাজার ১৮৩। আর প্রাণঘাতী এ রোগে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ১৪ জন। যদিও বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা তিনগুণের বেশি।
শেয়ার করুন