ঢাকায় হেফাজতে ইসলামের আহ্বানে ফ্রান্সের দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচিতে জনতার ঢল
ঢাকায় হেফাজতে ইসলামের আহ্বানে ফ্রান্সের দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচিতে জনতার ঢল নামে। তবে শেষ পর্যন্ত মিছিল পুলিশের বাধায় শান্তিনগর মোড়েই শেষ হয়ে গেছে।
সোমবার দুপুরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে ফ্রান্সের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক চ্ছিন্ন করা, বাংলাদেশে ফ্রান্সের দূতাবাস বন্ধ করা, ফরাসি পণ্য বর্জন এবং সংসদে নিন্দা প্রস্তাব পাস করার দাবি জানিয়েছেন হেফাজত ইসলামের কেন্দ্রীয় মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরী।
এদিকে এ কর্মসূচির কারণে বায়তুল মোকাররম, গুলিস্তান, পল্টন, প্রেসক্লাব, কাকরাইল ও শন্তিনগর হয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় তিন ঘণ্টার বেশি সময় ভোগান্তি পোহাতে হয় চলতি পথের যাত্রীদের।
ফ্রান্সের একটি সাময়িকীতে হজরত মুহাম্মদকে (সা.) নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশকে কেন্দ্র করে বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশে বিক্ষোভ চলছে। বাংলাদেশেও ধর্মভিত্তিক সংগঠনগুলো প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি ফ্রান্সের পণ্য বয়কটের আহ্বান জানিয়েছে।
এর অংশ হিসেবে গত শুক্রবার জুমার পর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সামনে ‘সম্মিলিত ইসলামি দলগুলো’ ব্যানারে এক সমাবেশ থেকে ২ নভেম্বর ফ্রান্সের দূতাবাস ঘেরাওয়ের কর্মসূচি ঘোষণা করেন হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগর সভাপতি নূর হোসাইন কাসেমী।
সে অনুযায়ী, হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন সংগঠনের হাজার হাজার কর্মী সোমবার সকাল থেকে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেইটে জড়ো হতে থাকেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল জোনের সহকারী কমিশনার জাহিদুল ইসলাম সোহাগ জানান, এসব কর্মীরা পুরো এলাকাজুড়ে অবস্থান নেওয়ায় বায়তুল মোকাররমের উভয় পাশ, গুলিস্তান, নাইটিঙ্গেল মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ যায়।
এদিকে ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি ও মালয়েশিয়ায় ফেরার দাবিতে দুই থেকে তিন হাজার মানুষ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে অবস্থান করায় সেখানেও এক ধরনের ‘বিশৃঙ্খলা’ সৃষ্টি হয় বলে জানান শাহবাগের পুলিশ পরিদর্শক (পেট্রোল) আবুল বাশার । সে কারণে প্রেসক্লাবের সামনের সড়ক দিয়েও যান চলাচল বন্ধ থাকে।
এই পরিস্থিতির মধ্যে বেলা সোয়া ১২টার দিকে মিছিল করে গুলশানে ফ্রান্স দূতাবাসের উদ্দেশ্যে রওনা হন হেফাজতকর্মীরা।
পল্টন, নাইটিঙ্গেল মোড়, কাকরাইল হয়ে বেলা পৌনে ১টার দিকে শান্তিনগর মোড়ে এসে তারা পুলিশের ব্যারিকেডে আটকে যান।
পরে সেখানে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন বিক্ষোভকারীরা। হেফাজত ইসলামের কেন্দ্রীয় মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরী এবং ঢাকা মহানগর সভাপতি নূর হোসাইন কাসেমী একটি মিনি ট্রাকে চড়ে সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তৃতা দেন।
বাবুনগরী বলেন, 'ফ্রান্সের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক পরিপূর্ণভাবে চ্ছিন্ন করতে হবে। ফ্রান্সের জাতীয় পণ্য বর্জন করতে হবে আমাদের। এটা ঈমানের দাবি। রিজিকের মালিক আল্লাহ, ফ্রান্সের পণ্য বর্জন করলে আমাদের কিছুই হবে না।'
ব্যবসায়ীদের ফ্রান্সের পণ্য দোকান থেকে ‘ফেলে দেওয়ার’ আহ্বান জানানোর পাশাপাশি জাতীয় সংসদে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব পাস করার দাবি তোলেন এই হেফাজত নেতা।
নূর হোসাইন কাসেমী বলেন, এ আগুন নেভাতে হলে সারা বিশ্বের মুসলমানের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে ফ্রান্সকে।
ঢাকায় ফ্রান্সের দূতাবাস বন্ধের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা সরকারের কার্যক্রম দেখতে চাই। সরকার ব্যর্থ হলে পরবর্তীতে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে শান্তিনগর মোড়ে মোনাজাতে অংশ নেন হেফাজতকর্মীরা। এরপর তারা অবস্থান ছেড়ে ফিরে গেলে বেলা দেড়টার দিকে আবার যানবাহন চলাচল শুরু হয় বলে জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা জোনের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ কমিশনার এসএম শামীম।
শেয়ার করুন