প্রেসিডেন্ট পদে যোগ্য নন ট্রাম্প, ১১১ সাবেক রিপাবলিকান এমপির চিঠি
‘বিজয় নিশান উড়ছে ঐ’
আজ মহান বিজয় দিবস
আজ ১৬ ডিসেম্বর। গ্রেগ্রীয় বর্ষপঞ্জিকায় প্রতিবছরই আসে এই দিনটি। কিন্তু এ দিন বছরের বাকি ৩৬৪ দিনের মতো নয় মোটেই। এ দিনটি আমাদের জন্য অনন্য-অসাধারণ একটি দিন। অবারিত সবুজের মাঝে রক্তিম সূর্য নিয়ে একটি স্বাধীন পতাকার মুক্তাকাশে উড়তে শৃঙ্খল ভাঙার দিন আজ। সীমাহীন শোষন-বঞ্চনার নাগপাশ ছিন্ন করে পৃথিবীর মানচিত্রে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের দিন। আজ বাংলাদেশের মহান বিজয়ের দিন। আমাদের হাজার বছরের শৌর্যবীর্য এবং বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশের দিন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নয় মাস সশস্ত্র যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের এই দিন বিকেলে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) হানাদার পাকিস্তানী বাহিনী যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে বাংলাদেশের। সেই থেকে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পালিত হয়ে আসছে। অফুরন্ত আত্মত্যাগ এবং রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই মহান বিজয়ের ৪৯ বছর পূর্ণ হলো আজ।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের কথা বিকেলে স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে ঘোষণা করেন জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম। এর পরপরই অজিত রায়ের নেতৃত্বে সমবেত কণ্ঠে রেডিওতে বেজে ওঠে একটি গান, ‘বিজয় নিশান উড়ছে ঐ/ খুশির হাওয়া ঐ উড়ছে/ বাংলার ঘরে ঘরে/ মুক্তির আলো ঐ ঝরছে’।
বাংলার মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে বুটেরতলায় স্তব্ধ করে দেয়ার উদ্দেশে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতের অন্ধকারে গণহত্যায় নামে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানি হঠকারী শাসকগোষ্ঠী। আলোচনার টেবিলে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ পরিত্যাগ করে তারা বন্দুকের নল আর কামানের গোলা বেছে নেয় সমাধানের উপায় হিসেবে। অসম যুদ্ধ চাপিয়ে দেয় আমাদের ওপর। নিরস্ত্র মানুষকে নির্বিচারে হত্যায় মেতে উঠল অস্ত্রের জোরে বলীয়ান সামরিক শাসক শ্রেণি। শুরু হলো মহান মুক্তিযুদ্ধ।
ব্রিটিশদের বিদায়ের পর নতুনরূপে এ জাতির ওপর শোষক হিসেবে আবির্ভূত হয় পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক শ্রেণি। তাদের হঠকারিতা এবং অদূরদর্শিতার কারণে দুই অঞ্চলের মধ্যে তৈরি হয় ভেদরেখা এবং বৈষম্যের বেড়াজাল। পূর্ব বাংলার মানুষের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের শাসক শ্রেণির শোষণ, বঞ্চনা আর অবহেলা চরম আকার ধারণ করলে প্রতিবাদে ক্রমে অগ্নিগর্ভ হতে থাকে এ অঞ্চল। কিন্তু এ অঞ্চলের মানুষের ন্যায়সঙ্গত দাবির প্রতি র্কর্ণপাত না করে বুটেরতলায় তা পিষ্ট করার নীতি গ্রহণ করে তারা। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জনগণের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা না দেখিয়ে তারা ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেয় ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার জন্য। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভকারী আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে টালবাহনা শুরু করে তারা।
ফলে ক্ষোভে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান । একাত্তরের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ ‘এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম’ জনগণের স্বাধীনতার স্পৃহাকে প্রবল করে তোলে। ঢাকা যখন অগ্নিগর্ভ, তখন পাকিস্তানি শাসকচক্র আমাদের মুক্তির স্পৃহাকে দমনের পথ বেছে নেয়। রাতের অন্ধকারে নির্বিচারে নিরস্ত্র মানুষ হত্যার মাধ্যমে জন্ম দিলো ২৫ মার্চের কালোরাত। এরপরই চূড়ান্ত হয়ে যায় আমাদের পৃথক পথচলার যাত্রা। ওদের সাথে আর নয়। ২৬ মার্চ থেকে শুরু হলো চূড়ান্ত লড়াই। দীর্ঘ ৯ মাস মুক্তি সংগ্রামের পর পরাজয় মেনে নেয় পাকিস্তান সেনাবাহিনী। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর রেসকোর্স ময়দানে ৯১ হাজার ৪৯৮ জন নিয়মিত অনিয়মিত এবং আধা সামরিক সৈন্য নিয়ে আত্মসমর্পণ করে পাক বাহিনী। শুরু হয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের পথচলা।
আজ সারাদেশের সব প্রান্তের লক্ষ লক্ষ মানুষ অংশ নিতো বিজয় দিবসের নানা আয়োজনে। কিন্তু বিশ^ব্যাপী মহামারি করোনার কারণে সীমিত পরিসরে উদযাপিত হবে এবারের বিজয় দিবস। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে পৃথক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। করোনার কারণে বিজয় দিবস উদযাপনের লক্ষ্যে জাতীয় এবং স্থানীয় পর্যায়ে আয়োজিত কর্মসূচিগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে পালিত হবে।
বাংলাদেশে আজ সরকারি ছুটির দিন। সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাসমূহ আলোক সজ্জায় সজ্জিত করা হবে। টেলিভিশন ও রেডিওতে বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচারিত হবে। সংবাদপত্রসমূহ বর্ধিত কলেবরে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশিত হবে। বিদেশেও বিভিন্ন স্থানে প্রবাসীরা সীমিত আয়োজনে বিজয় দিবস উদযাপন করবেন।
এলএবাংলাটাইমস/এলআরটি/বি
শেয়ার করুন