আপডেট :

        জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচারে রোববার থেকে সাইট ব্লক

        নিউইয়র্কে সিলেটিদের প্রতিবাদ: উন্নয়ন বঞ্চনায় ক্ষোভ

        নিউইয়র্কে ডমেস্টিক সহিংসতা রোধে নতুন বিশেষ ইউনিট

        জুলাই সনদ সই শেষ, বাস্তবায়ন পদ্ধতি এখনও অনিশ্চিত

        ‘জুলাই সনদ’ বাংলাদেশের রাজনৈতিক মাইলফলক: ইইউ

        জুলাই সনদ স্বাক্ষরের আগে সং ঘ র্ষ: ৯০০ জনের বিরুদ্ধে মা ম লা

        দেড় মাস পর আবার খুলছে সুপ্রিম কোর্ট

        ২৫ আনসার সদস্য আহত, ১০ জন সিএমএইচে ভর্তি

        রাজনাথ সিংয়ের হুঁশিয়ারি: ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্রের নাগালে পাকিস্তান

        সালমার তিন বিয়ে ও বিতর্ক: ফিরে দেখা জীবনের গল্প

        চায়ের দোকান থেকে বলিউড: ওম পুরির সিনেমার মতো জীবন

        বলিউড অভিনেত্রীর গর্ভপাতের পর কঠিন অভিজ্ঞতার বর্ণনা

        হোপের দাপটে বাংলাদেশের জয়ের আশা ঝুঁকিতে

        রিশাদের দাপটে বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানো জয়

        বর্ধিত মাশুল স্থগিতে ব্যবসায়ীদের আন্দোলন, ৭ দিনের আল্টিমেটাম

        পিআর নিয়ে টালবাহানা সহ্য করবে না জনগণ: চরমোনাই পীর

        গাজার যুদ্ধবিরতি নেতানিয়াহুর জন্য ৬টি বড় বিপদ ডেকে আনল

        পাকিস্তান-আফগানিস্তানে ৪৮ ঘণ্টার নতুন যুদ্ধবিরতি ঘোষণা

        নাশকতার প্রমাণ পেলে কঠোর ব্যবস্থা: সরকার

        বিমানবন্দর দ্রুত চালুর প্রতিশ্রুতি দিলেন উপদেষ্টা

কমে যাচ্ছে বাংলাদেশীদের শ্রম বাজার

কমে যাচ্ছে বাংলাদেশীদের শ্রম বাজার

কূটনৈতিক ব্যর্থতা

বাংলাদেশিদের জন্য বিশ্ব
শ্রমবাজার সংকুচিত হয়ে আসছে।
অনেক দেশ আগের মতো শ্রমিক নিতে
আগ্রহ দেখাচ্ছে না। বিশেষ করে
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড়
শ্রমবাজার সৌদি আরব, আরব
আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যে জনশক্তি
রপ্তানি কমছে। যুদ্ধবিগ্রহসহ নানা
কারণে ইরাক, লিবিয়া, কুয়েত,
ইয়েমেন, সুদান প্রভৃতি দেশের
শ্রমবাজার কয়েক বছর ধরে বন্ধ বলা
চলে। মালয়েশিয়ায় জিটুজি
পদ্ধতিতে জনশক্তি পাঠানোর গতিও
মন্থর।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক
কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে ১৬০টির
মতো শ্রমবাজারে জনশক্তি পাঠানোর
কথা বলা হলেও ১৪০টিতেই
পরিস্থিতি আশাব্যঞ্জক নয়। আর নতুন
৬০টি শ্রমবাজারে গত পাঁচ বছরে ৩০
হাজারের বেশি শ্রমিক পাঠাতে
পারেনি সরকার।
দেশে প্রতিবছর পাল্লা দিয়ে
বাড়ছে বেকার যুবকের সংখ্যা। নতুন
শ্রমবাজার খুলবে তো দূরের কথা,
পুরনো বাজারই ধরে রাখা যাচ্ছে না।
কাতার, সিঙ্গাপুর, বাহরাইন ও ওমান
এখন বাংলাদেশের ভরসা। এই চার
দেশে বাংলাদেশ থেকে কর্মী
নেওয়ার পরিমাণ বেশি হলেও ধীরে
ধীরে এসব দেশেও কর্মী নেওয়ার
পরিমাণ কমে যাবে বলে ধারণা
করছেন জনশক্তি বিশেষজ্ঞরা। তখন
বিকল্প শ্রমবাজারের সন্ধান করতে
হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের
পাশাপাশি বায়রাও বড় ভূমিকা
রাখতে পারে।
বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়লেও
পর্যাপ্ত শ্রমিক রপ্তানি করছে ভারত,
পাকিস্তান, নেপাল, মিয়ানমার,
শ্রীলঙ্কা ও ইন্দোনেশিয়া। জনশক্তি
কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো
(বিএমইটি) সূত্রে জানা গেছে, গত
জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত
মাসে গড়ে ৪২ হাজার ৭৩০ জন কর্মী
বিদেশে গেছে। গত বছর এ সময়
বিদেশে যায় চার লাখ ২৭ হাজার
৩০৬ জন। ২০১২ সালে মাসে গড়ে ৬২
হাজার ৪৭৩ জন বিদেশে যায়।
বিএমইটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০০৮
সালে বাংলাদেশ থেকে আট লাখ
৭৫ হাজার ৫৫ জন কর্মী বিভিন্ন দেশে
যায়।
গত জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত
সৌদি আরবে গেছে ৩৭ হাজার ৬৫৬,
আরব আমিরাতে ২২ হাজার ২১৭,
কুয়েতে ১৩ হাজার ৮৬২, ওমানে ৯৭
হাজার ৫১৯, কাতারে ৯৪ হাজার ১৪৬,
বাহরাইনে ১৭ হাজার ৮১৩, লেবাননে
১৫ হাজার ৬৪৫, জর্দানে ১৮ হাজার
৩৩৭ এবং সিঙ্গাপুরে ৪৪ হাজার ৫৫৮
জন। সিঙ্গাপুর, ওমান, কাতারে
বাংলাদেশ থেকে কর্মী যাওয়ার
পরিমাণ বেশি।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের
আমলে ৯৭টি দেশে জনশক্তি রপ্তানি
হতো। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ
নেতত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায়
আসার পর প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক
কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নতুন নতুন
শ্রমবাজারে কর্মী পাঠানোর উদ্যোগ
নেয়। সে অনুযায়ী আরো ৬০টির বেশি
দেশে কর্মী পাঠানো শুরু হয়।
বর্তমানে ১৬০টি দেশে জনশক্তি
রপ্তানি করছে বাংলাদেশ। তবে নতুন
শ্রমবাজারে জনশক্তি পাঠানোর হার
খুব কম। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশসহ
২০টি দেশে বছরে যে পরিমাণ কর্মী
যাচ্ছে, তার ২০ ভাগের এক ভাগও
যাচ্ছে না বাকি ১৪০ দেশে।
বিএমইটি সূত্র জানায়, জানুয়ারি
থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে ১৬০টি
দেশে চার লাখ ২৭ হাজার ৩০৬ জন
গেছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশসহ ২০টি
দেশে গেছে চার লাখ আট হাজার
৫১৮ জন। মাত্র ১৮ হাজার ৭৮৮ জন গেছে
বাকি ১৪০ দেশে। প্রথম ২০টি দেশের
মধ্যে কাতার, ওমান ও সিঙ্গাপুরে
গেছে দুই লাখ ৩৬ হাজার ১২৩ জন।
মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য শ্রমবাজারে
সেভাবে জনশক্তি রপ্তানি হচ্ছে না।
নতুন শ্রমবাজার তৈরি করতে না
পারলে কয়েক বছরের মধ্যেই জনশক্তি
রপ্তানিতে অন্ধকার নেমে আসবে।
জনশক্তি রপ্তানিকারক
প্রতিষ্ঠানগুলো বলেছে,
কর্মসংস্থানের জন্য প্রতিবছর সাত
লাখের বেশি লোক বিদেশে যেতে
চায়। দুই বছর ধরে গড়ে চার লাখের কিছু
বেশি শ্রমিককে বৈধ পথে পাঠানো
সম্ভব হয়েছে। অনেককে প্রলোভন
দেখিয়ে সাগরপথে মালয়েশিয়া ও
থাইল্যান্ডের উদ্দেশে পাঠাচ্ছে
দালালরা। তাদের বেশির ভাগ
মাসের পর মাস নৌকায় করে সমুদ্রে
ভেসেছে, পানি ও খাবারের
অভাবে অনেকে সাগরেই মারা
গেছে। দালালরা তাদের
থাইল্যান্ডের জঙ্গলে, আন্দামান বা
ইন্দোনেশিয়ার দ্বীপে ছেড়ে দিয়ে
আসছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সংশ্লিষ্ট
রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি
মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু)
প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড.
তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, বাজার যে
নেই তা নয়। কিন্তু সে বাজার থেকে
বাংলাদেশ দূরে সরে যাচ্ছে। সঠিক
সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ গ্রহণের অভাবে
এমনটি হয়েছে। সরকার বাইরের
শ্রমবাজার ধরে রাখায় তেমন কোনো
ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে দরজা বন্ধ হয়ে
যাচ্ছে বিভিন্ন দেশের। শ্রমিক
দেশে ফেরত আসছে।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশনে অব
ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং
এজেন্সিজের (বায়রা) সিনিয়র
সহসভাপতি আলী হায়দার চৌধুরী
বলেন, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব
আমিরাতের মতো বড় শ্রমবাজারের
অবস্থা সবাই জানে। সৌদি আরবে
কিছু নারী কর্মী গেলেও আরব
আমিরাতে কর্মী যাওয়া প্রায় বন্ধ।
রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে
লিবিয়া, ইরাকসহ মধ্যপ্রাচ্যের
কয়েকটি দেশে শ্রমিক পাঠানো
যাচ্ছে না। মালয়েশিয়া থেকেও
সরকারিভাবে শ্রমিকের চাহিদাপত্র
তেমন আসছে না।
মালয়েশিয়ায় জিটুজি পদ্ধতিতে
যাওয়ার জন্য অনেকে নিবন্ধন করেছে।
দুই বছরেও তারা ডাক পায়নি। এ সময়
মালয়েশিয়া গেছে মাত্র ৯ হাজার
কর্মী।
ঢাকার সাভার উপজেলার ভাকুর্তা
ইউনিয়নের শ্যামলাসি গ্রামের মাইদুল
ইসলামের ছেলে সিরাজুল ইসলাম দুই
বছর আগে অনলাইনে নিবন্ধন করেন।
এখনো মালয়েশিয়া যাওয়ার ডাক
আসেনি। গাজীপুরের শ্রীপুর
উপজেলার মাওনা গ্রামের মজিবুর
রহমানের ছেলে আনিসুর রহমান বলেন,
‘জিটুজি পদ্ধতিতে কম টাকায়
মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য অনলাইনে
নিবন্ধন করেছিলাম। কিন্তু দুই বছর পার
হয়ে গেছে, কোনো খবর নেই।’
বছর পাঁচেক আগেও রিক্রুটিং
এজেন্সিগুলোর কার্যালয়ে বিদেশে
যেতে ইচ্ছুক কর্মীদের ভিড় লেগে
থাকত। এখন সেই রমরমা অবস্থা নেই।
সৌদি আরব, আরব আমিরাতসহ
মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজার পর্যায়ক্রমে
বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং মালয়েশিয়ায়
জিটুজি পদ্ধতিতে কর্মী পাঠানোর
প্রভাব পড়েছে এজেন্সিগুলোর ওপর।
রিক্রুটিং এজেন্সি সাদমান
ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা
পরিচালক মোবারক হোসেন বাবুল
বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে আমার অফিসে
১৪ জন কাজ করত, এখন আছে মাত্র
তিনজন। শ্রমবাজার সংকুচিত হয়ে
যাওয়ায় এই হাল।’
তাসনিম ওভারসিসের ম্যানেজিং
পার্টনার আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়া
বলেন, ‘ভাই তিন বছর ধরে শুধু লোকসান
দিচ্ছি। অফিস ভাড়া, কর্মীদের বেতন
কষ্ট করে দিয়ে যাচ্ছি সুদিনের
আশায়। কিন্তু কবে আসবে সেই দিন,
আমরা জানি না।’

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত