তৃনমূল চাংগা করতেই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চিন্তা বিএনপির
প্রথমবারের মতো দলীয়ভাবে অর্থাৎ
দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠেয় পৌরসভা
নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত
নিচ্ছে বিএনপি। দু-এক দিনের মধ্যে
আনুষ্ঠানিক ঘোষণাও আসতে পারে।
‘নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না’-এমনটি ধরে
নিয়েই শুধু মাঠপর্যায়ের কর্মীদের
চাঙ্গা রাখতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া
হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দলটির
কয়েকজন নেতা।
গতকাল বুধবার রাতে দলের জ্যেষ্ঠ
নেতাদের নিয়ে দীর্ঘ সময় বৈঠক
করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন
খালেদা জিয়া। একজন জ্যেষ্ঠ নেতা
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের
কণ্ঠকে বলেন, বৈঠকে খালেদা জিয়া
সব নেতার কাছে জানতে চান, পৌর
নির্বাচনে অংশ নেওয়া ঠিক হবে কি
না। জবাবে প্রত্যেক নেতাই
সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার ও
দল পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে পৌর
নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে মত
দিয়েছেন।
বৈঠকে অংশ নেওয়া দলের স্থায়ী
কমিটির এক সদস্য কালের কণ্ঠকে
জানান, নেতারা চেয়ারপারসনকে
বলেছেন, দেশে বর্তমানে যে অবস্থা
চলছে, তাতে নির্বাচনের সুষ্ঠু
পরিবেশ নেই। নির্বাচন কমিশন
সরকারের ক্যাডারের মতো আচরণ
করছে। তার পরও দলের
নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে
এবং নির্বাচন কমিশনকে চাপে
রাখতে নির্বাচনে যেতে হবে।
স্থায়ী কমিটির ওই সদস্য আরো
জানান, খালেদা জিয়া সব নেতার
কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন কিন্তু
কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। আজ রাতে
২০ দলীয় জোটের নেতাদের সঙ্গে
চেয়ারপারসনের বৈঠক রয়েছে।
জোটের বৈঠকেও পৌর নির্বাচনে
যাওয়া না-যাওয়া নিয়ে আলাপ-
আলোচনা হবে। এর পরই আনুষ্ঠানিক
ঘোষণা দেওয়া হবে।
একটি সূত্র জানায়, বৈঠকে
যুদ্ধাপরাধী সালাহউদ্দিন কাদের
চৌধুরীর ফাঁসির প্রসঙ্গটি তোলেন
একজন জ্যেষ্ঠ নেতা। তিনি বলেন,
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিষয়ে
তো দলের পক্ষ থেকে একটি
স্টেটমেন্ট দেওয়া হয়েছে। এখন আরো
কিছু বলা হবে কি না। এ প্রসঙ্গটিকে
বৈঠকের অন্য নেতারা কোনো গুরুত্ব
দেননি। এমনকি খালেদা জিয়া
বিষয়টি না শোনার ভান করে অন্য
প্রসঙ্গে চলে যান।
বৈঠকে গত আড়াই মাসে সারা দেশে
বিএনপির পুনর্গঠনের সার্বিক চিত্র
একটি প্রস্তাবনা আকারে
চেয়ারপারসনের কাছে জমা দেওয়া
হয়েছে।
দলের মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপন
সাংবাদিকদের বলেন, ‘পৌর
নির্বাচনে অংশ নেওয়া না-নেওয়ার
বিষয় নিয়ে কর্মকৌশল পার্টির
চেয়ারপারসনের ওপর অর্পণ করা
হয়েছে। তিনি দ্রুতই সিদ্ধান্ত
জানাবেন।’
গতকাল রাত পৌনে ৯টা থেকে প্রায়
১২টা পর্যন্ত চেয়ারপারসনের গুলশান
কার্যালয়ে এ বৈঠক চলে। এতে
স্থায়ী কমিটির ১৯ সদস্যের মধ্যে
মওদুদ আহমদ, মাহবুবুর রহমান, আ স ম
হান্নান শাহ, জমির উদ্দিন সরকার,
আবদুল মঈন খান ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়
উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া দলের ভাইস
চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে
ইউসুফ, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ,
আবদুল্লাহ আল নোমান, আলতাফ
হোসেন চৌধুরী, সেলিমা রহমান,
চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের
সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী,
ওসমান ফারুক, শামসুজ্জামান দুদু, এ
জেড এম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম
মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান,
কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন,
আসাদুজ্জামান রিপন, সৈয়দ
মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ
বৈঠকে ছিলেন।
আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা না এলেও
পৌর নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে
বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে
আগে থেকেই তৎপরতা ছিল। গত
মঙ্গলবার ২৩৪টি পৌরসভা নির্বাচনের
তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন
কমিশন। এর পর থেকে ভোটের মাঠে
রীতিমতো কোমর বাঁধার আমেজ
দেখা যায় দলের তৃণমূলে। ওই দিন
রাতেই দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের
সঙ্গে কথা বলেন খালেদা জিয়া,
যিনি দুই মাসেরও বেশি সময় লন্ডনে
কাটিয়ে ২১ নভেম্বর দেশে ফেরেন।
আর গতকাল রাতে বেশ কিছু বিষয়
নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে
বৈঠক করলেন তিনি।
দলের যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ
শাহজাহান কালের কণ্ঠকে বলেন,
স্থানীয় নির্বাচনে যাওয়া বা না
যাওয়ার বিষয়ে শিগগিরই চূড়ান্ত
সিদ্ধান্ত হবে। বিগত সব কটি
নির্বাচনেই সরকার কারচুপি করে
জয়ী হয়েছে। যেখানে ন্যূনতম সুষ্ঠু
ভোট হয়েছে, সেখানেই বিএনপির
প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন, যদিও
পরবর্তী সময়ে সরকার তাঁদের
রাজনৈতিক স্বার্থে কোনো কারণ
ছাড়াই বিরোধী পক্ষের নির্বাচিত
জনপ্রতিনিধিদের বরখাস্ত করেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,
সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের
দাবিতে চলমান আন্দোলনের অংশ
হিসেবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে
যাওয়ার বিষয়টি ভাবা হচ্ছে।
বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা
বলে জানা গেছে, নির্বাচনে
যাওয়ার বিষয়ে একাধিক মতামত
রয়েছে। কেউ কেউ যুক্তি হিসেবে
বলছেন, নির্বাচনে না গেলে সরকার
ফাঁকা মাঠ পাবে, আবার মাঠপর্যায়ে
বিএনপির নেতাকর্মীরা আরো হতাশ
হয়ে পড়বে। তৃণমূল কর্মীদের ধরে
রাখতেই নির্বাচনে যেতে হবে। কেউ
কেউ বলছে, দলীয় প্রতীকে এ
নির্বাচনে অংশ নেওয়া মানে
‘নৌকা’ আর ‘ধানের শীষ’-এর লড়াই।
সরকার জোর করে জয় ছিনিয়ে নিলে
বলা যাবে, আওয়ামী লীগের অধীনে
সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। কারচুপির
বিষয়টিও জনগণের সামনে তুলে ধরা
যাবে।
নির্বাচনে না যাওয়ার যুক্তি তুলে
ধরে কেউ কেউ বলছেন, মামলা হামলা
আর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায়
নিয়ে নির্বাচনে কর্মীরা কতটুকু কাজ
করতে পারবে সে বিষয়টিও ভেবে
দেখতে হবে। এই নির্বাচন সামনে
রেখেই সরকার সারা দেশে
বিএনপিসহ প্রতিপক্ষ দলগুলোর
নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করছে।
সারা দেশে চলছে আইনশৃঙ্খলা
রক্ষাকারী বাহিনীর সাঁড়াশি
অভিযান। যাঁরা আছেন তাঁরাও
বিভিন্ন মামলায় জড়ানোর আতঙ্কে
রয়েছেন। আর এসবের পরও কেউ জয়ী
হয়ে এলে তাঁদেরও পূর্বসূরিদের মতো
‘বরখাস্ত’ হওয়ার ভাগ্য বরণ করতে
হবে। এ জন্য দলীয় প্রার্থীদের
স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়ন দিয়ে
তাঁদের মাঠের কর্মীদের সহায়তা
করার পরামর্শ দেন কেউ কেউ।
তবে ‘নির্বাচনে বিএনপি যাচ্ছে’-
এমনটি ধরে নিয়েই দলটির
নেতাকর্মীরা কাজ করছে। ইতিমধ্যে
একটি কার্যপ্রণালিও তৈরি করা
হয়েছে। বিএনপির কেন্দ্রীয়
কার্যালয় ও গুলশান অফিসের
একাধিক সূত্র কালের কণ্ঠকে এ
বিষয়ে জানিয়েছে, প্রার্থী
মনোনয়নের জন্য বিভাগীয়ভাবে
নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হবে। তাঁরা
একটি টিম করে কাদের মনোনয়ন
দেওয়া যায়, তা নির্ধারণ করবেন।
কোনো কোনো বিভাগে একাধিক টিম
থাকতে পারে। দলের স্থায়ী কমিটির
সদস্য, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক
ও সহসাংগঠনিক সম্পাদক ছাড়াও যুগ্ম
মহাসচিব পর্যায়ের নেতারা এতে
থাকবেন। কেন্দ্রীয়ভাবে আরেকটি
টিম গঠন করা হবে, যা ওই টিমগুলোকে
মনিটর ও সমন্বয় করবে।
শেয়ার করুন