শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের ছক, ঢাকাকে সাবধান করলো দিল্লি
বাংলাদেশে শেখ হাসিনার
নেতৃত্বাধীন সরকারকে উচ্ছেদের
লক্ষ্যে সশস্ত্র বিদ্রোহ ও চুড়ান্ত নাশকতার
চক্রান্ত করছে জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ
(জেএমবি)। বাংলাদেশ সরকারকে এ বিষয়ে
সতর্ক করেছে ভারত সরকার।
ভারতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে
একটি গোয়েন্দা রিপোর্ট সম্প্রতি পাঠানো
হয় বিদেশ মন্ত্রণালয়ে। চলতি মাসের প্রথম
সপ্তাহে সেই রিপোর্টটি আসে ঢাকায়। ‘চুড়ান্ত
গোপনীয়’ সিলমোহর লাগানো ওই খামটি
ঢাকার ভারতীয় দূতাবাস থেকে সরাসরি পাঠানো
হয় বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে।
শুক্রবার উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রভাবশালী বাংলা
দৈনিক যুগশঙ্খ এ খবর দিয়েছে। পত্রিকাটির
কলকাতা সংস্করণে লিড ছিল খবরটি। এছাড়াও গুয়াহাটি,
শিলচর ও ডিব্রুগড় সংস্করণেও প্রথম পাতায়
গুরুত্ব পেয়েছে খবরটি।
ভারতের দেওয়া ওই ‘গোপন’ রিপোর্টের
বরাত দিয়ে যুগশঙ্খের খবরে বলা হয়েছে,
ওই রিপোর্টের সঙ্গে রয়েছে
একশোজনের একটি তালিকা। রিপোর্টে বলা
হয়েছে, তালিকার একশজন ব্যক্তি বাংলাদেশের
রাজশাহী, বগুড়া, সিলেট এবং কুষ্টিয়ায় লুকিয়ে
রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমানের খাগড়াগড়ে
যে বিস্ফোরণ ঘটেছিল, তা ছিল বাংলাদেশ-
বিরোধী চক্রান্তের বহিঃপ্রকাশ। সেই
চক্রান্তের সঙ্গে যারা যুক্ত ছিল তারাই এই
চক্রান্তের জাল বুনছে।
সম্প্রতি ভারত-বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী
পর্যায়ের বৈঠকে পারস্পরিক সন্ত্রাসবাদ-
বিরোধী সহযোগিতার চুক্তি হয়। তারই
ফলশ্রুতিতে আসামের উলফা নেতা অনুপ
চেটিয়াকে হস্তান্তর করে বাংলাদেশ। পাল্টা
ভারত সরকারও হস্তান্তর করে নারায়ণগঞ্জের
সাত খুনের মামলার অভিযুক্ত নূর হোসনেকে।
বাংলাদেশের মাটিকে ব্যবহার করে ভারত-
বিরোধী চক্রান্ত এবং ভারতের মাটি ব্যবহার
করে বাংলাদেশ-বিরোধী চক্রান্ত চালাচ্ছে
সন্ত্রাসবাদীরা। এরই বিরুদ্ধে পারস্পারিক
সহযোগিতার যে চুক্তি হয়েছে, তার ফলেই
ওই রিপোর্টটি ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
প্রস্তুত করেছে বলে জানা গেছে।
গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে যুগশঙ্খ জানায়,
খাগড়াগড় বিস্ফোরণের জড়িত পলাতক কাওসার,
সাদিক, হাতকাটা নাসিরুল্লা এবং কদর গাজির নামও ওই
তালিকায় রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে সোহেল
মাহফুজ, বোমা মিজান, তারিক শেখ এবং
সালাউদ্দিনের নামও। এরা খাগড়াগড় বিস্ফোরণের
পরেই এরা গা ঢাকা দেয়। পাঁচ লাখ টাকা করে
এদের প্রত্যেকের মাথার দাম ঘোষণা
করেছে ভারতীয় তদন্ত সংস্থা-এনআইএ।
ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা
ওয়াজেদের নেতৃত্বে বাংলাদেশে যে
নির্বাচিত সরকার চলছে, তাকে উচ্ছেদ করার
জন্য এক গভীর চক্রান্ত চলছে। এই চক্রান্ত
চলছে জেএমবি এর ছত্রছায়ায়। চক্রান্তকারীরা
পশ্চিমবঙ্গেও কোনও না কোনও এলাকায়
যোগাযোগ রেখে চলছে। এদেরে
মোবাইল আড়ি পাতলেই এই চক্রান্তের হদিশ
পাওয়া যাবে বলে ওই রিপোর্টে বলা
হয়েছে। যে একশোজনের নাম তালিকায়
দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে চল্লিশজন
এবএমবির কেন্দ্রয়ী কমিটি মজলিশ ই সুরার
সদস্য। ওই রিপোর্টে জেএমবি নেতৃত্বের
সম্ভাব্য ‘মোডাস অপারেন্ডি’র কথাও বলা
হয়েছে। ছোট ছোট মডিউলগুলিকে সক্রিয়
করে নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে
তাদের। মূলত রাজশাহী, বগুড়া, সিলেট এবং
কুষ্টিয়াতেই তাদের মূল ঘাঁটি। এর আগেও একই
ভাবে বাংলাদেশে অভ্যুত্থানের ঘটানোর
চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার
সেই অভ্যুত্থান বানচাল করে দেয়। এমনকী
জেএমবির প্ররোচনায় বাংলাদেশে
রাইফেলসও বিদ্রোহ করেছিল। সেই
বিদ্রোহও দমন করা হয়।
ভারতের বিশেষত পশ্চিমবঙ্গের মাটিকে যে
বাংলাদেশের সন্ত্রাসবাদীরা ব্যবহার করছে, তা
জানা যায় ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর খাগড়াগড়
বিস্ফোরণের পরেই। এর আগে ২০১২
সালে কলকাতার মেটিয়াবুরুজের লোহা
তালাওয়ের কাছে একটি বাড়িতে বিস্ফোরণ
ঘটে। কিন্তু তখন পুলিশ বুঝতেই পারেনি
আসলে ঘটনাটি কি। খাগড়াগড় বিস্ফোরণের
পরে জানা যায়, নিহত শাকিল গাজি সেই
বিস্ফোরণের সময়ে মেটিয়াবুরুজেই ছিল।
সূত্র: যুগশঙ্খ কলকাতা।
শেয়ার করুন