ভোটের অনিয়ম লুকাতে ইসি'র সাংবাদিক নিয়ন্ত্রন
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন
অবস্থান বদলালো ইসি
ভোটের দিনে সাংবাদিকদের
কেন্দ্রে প্রবেশ ও সার্বিক পরিস্থিতির তথ্য
সংগ্রহ ও প্রচার করার পূর্বের সুবিধা বহাল রাখার
মৌখিক ঘোষণা দিলেও চূড়ান্তভাবে সেই
অবস্থান পাল্টে ফেলেছে নির্বাচন কমিশন
(ইসি)। ইসি সচিবালয় থেকে রিটার্নিং
কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো এক
নির্দেশনাতে এমন অবস্থান ফুটে উঠেছে।
এতে নির্বাচনে সাংবাদিকদের উপর কড়াকড়ি
আরোপে স্থানীয় প্রশাসনের দাবিই গৃহীত
হলো বলে মনে করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে
মাঠ প্রশাসনের কাছে ইসির ধরাশায়ী হওয়ার
চিত্রও ফুটে উঠল।
ইসির জনসংযোগ পরিচালক এসএম আসাদুজ্জামান
রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে একটি নির্দেশনা
পাঠিয়েছেন। এতে সাংবাদিকরা পাঁচটি নির্দেশনা
মেনে চলবেন বলে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের
অবগত করা হয়েছে।
এর আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর
সাথে বৈঠকে পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ
থেকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি
আরোপের সিদ্ধান্ত চাওয়া হয়। ওই অনুষ্ঠানে
সিইসি স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, এটা সম্ভব না। পরে
উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি জানান, আগের
মতোই সাংবাদিকরা দায়িত্ব পালনের সুযোগ
পাবেন। পরে একাধিকবার কমিশনার ও কমিশন
সচিবালয়ের সচিব সাংবাদিকদের জানান, সাংবাদিক
প্রবেশে কোন কড়াকড়ি আরোপ করা হবে
না। কিন্তু এরই মধ্যে একটি লিখিত নির্দেশনার
মাধ্যমে সেই অবস্থান পাল্টে ফেলেছে
সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠান।
ইসি সচিবালয় থেকে পাঠানো ওই নির্দেশনায়
বলা হয়েছে, ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং
কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া ভোটকক্ষে প্রবেশ
করা যাবে না, কোনো প্রকার নির্বাচনী
উপকরণ স্পর্শ বা অপসারণ করা থেকে বিরত
থাকবেন, সাংবাদিকরা ভোটে প্রার্থী বা
কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা
বিপক্ষে যে কোনো ধরনের কর্মকা-
পরিচালনা করা থেকে বিরত থাকবেন, সাংবাদিকরা
নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাজে
হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না এবং নির্বাচন
অনুষ্ঠানে সহায়তার জন্যে সংবিধান, নির্বাচনী
আইন ও বিধিবিধান মেনে চলবেন।
ইসির এসব নির্দেশনার সমালোচনা করছেন
খোদ সংস্থাটির কর্মকর্তারাই। তাদের মতে,
প্রথম নির্দেশনার জন্য ভোটকক্ষের
ভেতরের কোনো বিশৃঙ্খলার খবর
পরিবেশনে অসুবিধা হবে। এক্ষেত্রে
অনুমতি পেতে বিলম্ব হলে প্রকৃত ঘটনা
জানাতে পারবে না গণমাধ্যম। দ্বিতীয়
নির্দেশনার ফলে, ব্যালট পেপার বা বাক্স বা
নির্বাচনী উপকরণ দুর্বৃত্তরা নষ্ট করলেও সে
সংবাদের গভীরতা বা প্রমাণযোগ্যতা কমে
যাবে।
তৃতীয় নির্দেশনার মাধ্যমে সাংবাদিকদের
অনেকটা হুঁশিয়ারিই দেওয়া হয়েছে। কেননা,
যে কোনো সংবাদেই কোনো না
কোনো পক্ষ উপকৃত হয়। অথচ এতে বলা
হয়েছে-সাংবাদিকরা ভোটে প্রার্থী বা দলের
পক্ষে-বিপক্ষে কোনো কর্মকা- চালাতে
পারবেন না। এক্ষেত্রে প্রকাশিত সংবাদকে
কর্মকা- হিসেবে চালিয়ে দেওয়ারও সুযোগ
রাখা হয়েছে।
চতুর্থ নির্দেশনার ফলে কোনো
ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা বা নির্বাচনী দায়িত্বরত
কর্মকর্তা অনিয়ম করলেও তাকে কিছু বলা যাবে
না। এক্ষেত্রে অনিয়মকারী কর্মকর্তাকে
সুরক্ষা দেওয়ারও ব্যবস্থা করা হয়েছে।
পঞ্চম নির্দেশনায়, সরাসরি আইন লঙ্ঘনের
পরিণতির ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ অন্য
নির্দেশনার যে কোনোটা না মানার অভিযোগ
এনে সংবিধান ও আইন অনুসারে ব্যবস্থা
নেওয়ার সুযোগ থাকছে।
ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সম্প্রতি
নির্বাচন কমিশনাররা দেশের বাইরে নির্বাচন
পর্যবেক্ষণ করে এসে মতামত দিয়েছেন-
ইংল্যান্ড, আমেরিকায় ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকরা
ঢুকেই না। কিন্তু এদেশে ভোটকেন্দ্রে
সাংবাদিকদের অবাধ প্রবেশের কারণে
নির্বাচনী কাজ বাধাগ্রস্ত হয়। তাই তাদের বিচরণ
নিয়ন্ত্রণে থাকা উচিত। আর সে ভাবনা থেকেই
নীতিমালা করে এমন নির্দেশনা দেওয়া
হয়েছে।
প্রসঙ্গত: ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের পরে
গত ২৮ এপ্রিলের তিন সিটি করপোরেশন
নির্বাচনের সময় সাংবাদিকদের প্রথমবারের
মতো ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে বাধা
দেওয়া হয়। ওইদিন বেলা ১১ পর্যন্ত বেশিরভাগ
কেন্দ্রেই সাংবাদিকদের ঢুকতে দেয়নি পুলিশ।
এ নিয়ে বাগবিত-ায় অনেক কেন্দ্রে
সাংবাদিকদের লাঞ্ছিতও করে পুলিশ। এরপর গঠিত
এ সংক্রান্ত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দেয় যে
সাংবাদিক লাঞ্ছনার ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়নি।
একইসঙ্গে সাংবাদিকদের ভোটকেন্দ্রে
প্রবেশ সীমিত করা উচিত বলেও ওই তদন্ত
কমিটি সুপারিশ করে। যে কমিটির প্রধান ছিলেন
ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার।
শেয়ার করুন