আপডেট :

        জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচারে রোববার থেকে সাইট ব্লক

        নিউইয়র্কে সিলেটিদের প্রতিবাদ: উন্নয়ন বঞ্চনায় ক্ষোভ

        নিউইয়র্কে ডমেস্টিক সহিংসতা রোধে নতুন বিশেষ ইউনিট

        জুলাই সনদ সই শেষ, বাস্তবায়ন পদ্ধতি এখনও অনিশ্চিত

        ‘জুলাই সনদ’ বাংলাদেশের রাজনৈতিক মাইলফলক: ইইউ

        জুলাই সনদ স্বাক্ষরের আগে সং ঘ র্ষ: ৯০০ জনের বিরুদ্ধে মা ম লা

        দেড় মাস পর আবার খুলছে সুপ্রিম কোর্ট

        ২৫ আনসার সদস্য আহত, ১০ জন সিএমএইচে ভর্তি

        রাজনাথ সিংয়ের হুঁশিয়ারি: ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্রের নাগালে পাকিস্তান

        সালমার তিন বিয়ে ও বিতর্ক: ফিরে দেখা জীবনের গল্প

        চায়ের দোকান থেকে বলিউড: ওম পুরির সিনেমার মতো জীবন

        বলিউড অভিনেত্রীর গর্ভপাতের পর কঠিন অভিজ্ঞতার বর্ণনা

        হোপের দাপটে বাংলাদেশের জয়ের আশা ঝুঁকিতে

        রিশাদের দাপটে বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানো জয়

        বর্ধিত মাশুল স্থগিতে ব্যবসায়ীদের আন্দোলন, ৭ দিনের আল্টিমেটাম

        পিআর নিয়ে টালবাহানা সহ্য করবে না জনগণ: চরমোনাই পীর

        গাজার যুদ্ধবিরতি নেতানিয়াহুর জন্য ৬টি বড় বিপদ ডেকে আনল

        পাকিস্তান-আফগানিস্তানে ৪৮ ঘণ্টার নতুন যুদ্ধবিরতি ঘোষণা

        নাশকতার প্রমাণ পেলে কঠোর ব্যবস্থা: সরকার

        বিমানবন্দর দ্রুত চালুর প্রতিশ্রুতি দিলেন উপদেষ্টা

শহীদ নূর হোসেন দিবস বৃহস্পতিবার

শহীদ নূর হোসেন দিবস বৃহস্পতিবার

একটি গণতান্ত্রিক ও শোষণমুক্ত দেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। এ দেশের স্বাধীনতার জন্য রক্ত দিয়েছে ৩০ লাখ মানুষ। কিন্তু তারপরও এখানে গণতন্ত্র পূর্ণ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে কীনা এ নিয়ে বিতর্ক আছে। অনেকেরই অভিযোগ, দেশে আজো আদর্শিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে গণতন্ত্র বারবার হোঁচট খেয়েছে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য এ দেশের জনগণ বারবার আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে এবং এর জন্য অনেক রক্ত ঝরেছে। ১৯৭৫ সালে পট-পরিবর্তনের পর ১৯৯০ সাল পর্যন্ত একটা দীর্ঘ সময়জুড়ে এ দেশে ছিল প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সামরিক শাসন। এ পালাবদলের শেষ দিকে ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর স্বৈরাচারবিরোধী চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনে রাজপথে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন নূর হোসেন। তার মৃত্যু সে সময় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে— গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যুক্ত করে নতুন মাত্রা। এরপর থেকে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো প্রতি বছর ১০ নভেম্বর ‘শহীদ নূর হোসেন দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে।

শহীদ নূর হোসেনের আত্মত্যাগকে সামনে রেখে দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য তখন যে শপথ নিয়েছিল, পরবর্তীকালে দল দু’টি একাধিকবার ক্ষমতায় এলেও এর পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন দেখা যায়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। এমন বাস্তবতায় এবারের ‘নূর হোসেন দিবস’ এ তার আত্মত্যাগের মূল্যায়ন করেছেন দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।

নূর হোসেনের আত্মত্যাগের মূল্যায়ন করতে গিয়ে ভাষা-সংগ্রামী ও গবেষক আহমদ রফিক বলেছেন, ‘দেশে এখনো আদর্শিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি। হবে কি-না জানি না। তবে একজন মানুষের প্রাণ-বিনাশের বিষয়টাকে উপলব্ধিতে আনা দরকার। নইলে জাতির মুক্তি মিলবে না। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, ‘নূর হোসেনের আত্মদানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারী শাসনের পতন হয়েছে বটে, কিন্তু স্বৈরাচারী শাসনের পতন মানেই তো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হওয়াকে বোঝায় না। যদি তাই হতো তাহলে নির্বাচনের মাধ্যমে কয়েকবার বিভিন্ন সরকার ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু তা হয়েছে? হয়নি। আমাদের নির্বাচিত সরকার ও জনমানুষের বোধ সেভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেনি।’

প্রায় একই রকম মত ব্যক্ত করেছেন ভাষা-সংগ্রামী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী। তিনি বলেছেন, ‘নূর হোসেনের রক্ত বৃথা যায়নি— এ কথা যেমন সত্যি, তেমনি আদর্শিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে— সেটাও বলা যাবে না। কারণ ঘটনাবহুল এই দেশে যখন মানুষের কথা বলার পথ রুদ্ধ হয়ে যায়, সেটাকে কি গণতন্ত্রের চর্চা বলব? তবে বিশ্বাস করি, একদিন নূর হোসেনসহ সকল শহীদের প্রতীক্ষিত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে।’

ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেছেন, ‘গণতন্ত্র রক্ষার জন্য নূর হোসেনের প্রাণ দেওয়ার বিষয়টি ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। সকল মুক্তিকামী মানুষের আন্দোলনের প্রেরণার উৎস নূর হোসেনের আত্মদান। দেশের সঠিক গণতান্ত্রিক চর্চা হলেই কেবল তার এ ত্যাগের সঠিক মূল্যায়ন করা হবে, অন্যথায় নয়।’

এ বিষয়ে কবি নির্মলেন্দু গুণ বলেছেন, ‘স্বাধীনতার পর আবারও ইতিহাসের গতিপথ পাল্টে যায়। চার নেতাকে হত্যা করা হয়। জাতির জনক ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যা করা হয়। ইতিহাস চলে যায় অপশাসনের অধীনে। গণতন্ত্র বাক্সবন্দী হয়। ইতিহাসের পরিক্রমায় রাজপথে মুক্তির মিছিলে হত্যা করা হয় নূর হোসেনকে। প্রেক্ষাপট পাল্টেছে, সে অনুযায়ী গণতান্ত্রিক দীনতার কিছুটা উত্তরণ হয়েছে, কিন্তু আজ অবধি সে জায়গা থেকে পুরোপরি রক্ষা পায়নি জনমানুষ। আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত গণতন্ত্রকে দেখে যেতে চাই।’

নাট্যব্যক্তিত্ব ও ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউটের সভাপতি রামেন্দু মজুমদার বলেছেন, ‘শহীদ নূর হোসেনের রক্ত বৃথা যায়নি। তার এই ত্যাগ মানুষকে পরবর্তী সময়ে চেতনা দিয়েছে। আজ অবধি গণতন্ত্রের লড়াই করছে দেশের প্রগতিশীল মানুষ। এই ধারাবাহিকতাই হয়ত একদিন আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সহায়ক হবে।’

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেছেন, ‘গণতন্ত্র চর্চার ব্যাপার, একদিনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার বিষয় না; চর্চার মধ্য দিয়েই এর উৎকর্ষতা অর্জিত হবে। আবার, গণতন্ত্র শুধু যে ভোটাধিকার প্রয়োগ তাও নয়; এটা জনগণ, সমাজ ও সরকারের উপলব্ধিতে আসার ব্যাপার। আমি তো মনে করি, আমাদের সমাজেই এক ধরনের গণতন্ত্রহীনতা আছে। সমাজে গণতন্ত্র চর্চা প্রতিষ্ঠিত হলে সরকার মেনে নিতে বাধ্য হয়। যেমনটি ভাষা আন্দোলনে প্রমাণিত হয়েছিল—‘রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই’ দাবি সরকারের ছিল না, সামাজিক দাবি ছিলো। এই দাবি তৎকালীন সরকার কিন্তু মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল। তাই বলব, গণতন্ত্র একদিনে গড়ে উঠে না। আমাদের বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ইতিহাস ২৬ বছরের মতো। ভারতে গণতান্ত্রিক চর্চার বয়স বেশি বলে গণতান্ত্রিক চিন্তা উন্নত। আমি আশাবাদী মানুষ। আমি মনে করি সমাজ ও দেশের অগ্রগতির সাফল্যের মধ্য দিয়েই আমরা একদিন কাঙ্খিত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারব।’

একই রকম বক্তব্য সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছের। তিনি বলেছেন, ‘গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধারের জন্য প্রাণ দিলেন নূর হোসেন। তার এই ত্যাগই সকল অগণতান্ত্রিক চিন্তাকে প্রতিহত করে চলেছে। হয়ত যেভাবে আমরা বাংলাদেশকে দেখতে চেয়েছিলাম, সেভাবে পাইনি। কিন্তু একদিন না একদিন গণতন্ত্রের সে সুদিন আসবেই। কারণ শহীদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না।’


এলএবাংলাটাইমস/এন/এলআরটি

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত