পূর্ণিয়া শহর বুকে করে রেখেছে সুশান্ত সিং রাজপুতকে
জায়গাটার নাম গির্জা চক। এই শহরে বিভিন্ন জায়গার নামের সঙ্গে ‘চক’ যুক্ত করা রয়েছে। যেমন ফোর্ড কোম্পানি চক, মাঝালি চক, মধু চক, জন্তা চক ইত্যাদি। গির্জা চকের নামকরণ করা হয়েছে, কারণ এখানে একটি পুরনো গির্জা রয়েছে।
সম্ভবত আর্মেনিয়ান গির্জা। এখন প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
এখান থেকে দুই মিনিট হাঁটলেই সামনে বড় একটি সড়ক। এই সড়ক চলে গেছে সোজা শিলিগুড়ির দিকে।
রাস্তার শুরুতেই একটা সাইনবোর্ড, সেই সাইনবোর্ডে লেখা আছে ‘সুশান্ত সিং রাজপুত সড়ক’। আর ফোর্ড কোম্পানি চকের নামও পরিবর্তন হয়ে এখন ‘সুশান্ত সিং রাজপুত চক’।
শহরের নাম পূর্ণিয়া। ভারতের বিহার রাজ্যের প্রত্যন্ত এই শহর সুশান্ত সিংকে বুকে করে রেখেছে।
সুশান্ত সিং মারা গেছেন কিন্তু পূর্ণিয়া সুশান্তকে ভোলেনি। এই শহরের প্রতিটি মানুষ সুশান্তকে মনে রেখেছে, গর্ব করে বলে আমাদের একজন নায়ক ছিল। এক মহেন্দ্র সিং ধোনি ছবি দিয়েই যে বলিউড তোলপাড় করে দিয়েছিল। পূর্ণিয়ায় বাংলা ভাষার ছিটেফোঁটাও নেই। এখানের প্রচলিত ভাষা উর্দু, হিন্দি ও মৈথিলি।
সড়কের ঠিক পাশেই ডাব বিক্রি করছিলেন মুহাম্মদ বক্কর। বলছিলেন, ‘আমরা তো সুশান্তকে ভুলে যেতে পারি না। সুশান্ত আমাদের গর্ব। তবে তাকে মেরা ফেলা হলো।’
হ্যাঁ, এমনটাই পূর্ণিয়ার মানুষজন মনে করেন। কমল কুমার ভাট্টা বাজারের জর্দা ব্যবসায়ী। বললেন, ‘সুশান্ত আমাদের এই জেলার ছেলে, সে বলিউডে গেছে। কিন্তু বলিউড তাকে মেরে ফেলেছে। আমরা সুশান্তকে মনে রাখব।’ শুধু স্থানীয় লোকজনই নয়, সুশান্তের পরিবারও মনে করে তাকে মেরা ফেলা হয়েছে।
গির্জা চক প্রসঙ্গ এ কারণেই এসেছে যে এখান থেকেই বাস যায় উত্তর প্রদেশের দিকে। লোকাল বাস। প্রায় দুই ঘণ্টা এই বাসে ৪৮ কিলোমিটার গেলে বারহারাকোঠি সাবডিস্ট্রিক্ট পাওয়া যাবে। বাসস্ট্যান্ড থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে মালদিহা নামের এক গ্রাম। সেই গ্রামে নিজস্ব বাহন না থাকলে যাওয়া মুশকিল। ঘণ্টা-দুই ঘণ্টা পর ওটো পাওয়া যায়। এলোমেলো ঘোরানো সরু,পিচ কিংবা মাটির পথ পেরোলেই মালদিহা। এই গ্রামটাই সুশান্ত সিং রাজপুতের পৈতৃক বাড়ি। এখন এই বাড়িতে বসবাস করেন সুশান্তের বড় চাচা। বাড়িতে সুশান্তের স্মৃতিচিহ্ন, ছবিতে মালা পরানো।
যদিও ভারতের তদন্ত কর্মকর্তারা শেষ পর্যন্ত সুশান্তের মৃত্যুকে আত্মহত্যাই বলছেন। কিন্তু মালদিহা গ্রামে থাকা সুশান্তের চাচাতো ভাই পান্না সিং রাজপুত বললেন, ‘সুশান্তকে আমার চিনি, সে কখনো আত্মহত্যা করতেই পারে না। তাকে মেরে ফেলা হয়েছে।’ কেন মেরে ফেলা হয়েছে, এর খুব সহজ জবাব পান্নার কাছে। বললেন, ‘বলিউডে অন্যান্য নায়কের উত্থানের তুলনায় সুশান্তের উত্থান ছিল দ্রুত। অনেকেই বুঝে গিয়েছিল সুশান্ত অনেকের মাথাব্যথার কারণ, তাই তাকে সরিয়ে ফেলো, সরিয়ে ফেলা হলো।’
সুশান্ত সিং রাজপুত। হিন্দি ছবির দুনিয়ায় এই একটা নাম যে বলিউডের গোটা নকশাই বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রেখেছিল, তা প্রমাণ করে দেয় তার আকস্মিক মৃত্যু। এই মৃত্যু মেনে নিতে পারেনি কোটি ভক্ত।
গতকাল ছিল এই প্রয়াত অভিনেতার ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী। সুশান্তকে হয়তো অনেকেই মনে ভুলে গেছে, আবার অনেকেই মনে রখেছে। তবে পূর্ণিয়া সুশান্তকে মনে রেখেছে ভিন্নভাবে। সুশান্ত সিং রাজপুতের হোমটাউন পূর্ণিয়া শহরের ফোর্ড কোম্পানি চকের নাম বদলে সুশান্ত সিং রাজপুত চক করে মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন। ২০২০ সালের জুলাইয়ে সুশান্ত সিং রাজপুতের নামে সড়কের নামফলক উন্মোচন করেন মেয়র সবিতা দেবী।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন