সিরিয়ায় রাশিয়ার বোমাবর্ষণের
দৈনিক ব্যয় ৪০ লাখ ডলার

সিরিয়ায় বিমান
হামলা বাবদ রাশিয়ার প্রতিদিন ব্যয়
হচ্ছে ৪০ লাখ ডলার (প্রায় ৩২ কোটি
টাকা)। মস্কো টাইমস সংবাদপত্রের
পক্ষে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান
সংগৃহীত তথ্যে এ কথা বলা হয়। খবর
সিএনবিসি। প্রতিরক্ষা শিল্প ও বিভিন্ন
সরকারের পক্ষে কাজ করা প্রখ্যাত
গোয়েন্দা তথ্য প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান
আইএইচএস জেনস দেখিয়েছে যে
বোমাবর্ষণ, বিভিন্ন সরবরাহ, অবকাঠামো
ও ভূমিতে অবস্থানরত সামরিক
লোকজনের পাশাপাশি যুদ্ধ এলাকায়
নিক্ষিপ্ত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র মিলিয়ে ৩০
সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত রাশিয়ার ব্যয়
দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ডলার থেকে সাড়ে
১১ কোটি ডলারের মধ্যে।মস্কো টাইমস
বলে, ২০১৫ সালে রাশিয়ার সামরিক ব্যয়
৩. ১ ট্রিলিয়ন রুবলের (৫ হাজার কোটি
ডলার) তুলনায় এ ব্যয় খুব কমই মনে হয়।
কিন্তু ক্রেমোলিন তার ব্যয় ও অঙ্গীকার
উভয়ই বাড়ছে বলে দেখতে পারে। ২০১৩
সালে ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত
করা ও গত বছর ইউক্রনের গোলযোগে তার
ভূমিকার জন্য আরোপিত আন্তর্জাতিক
অবরোধের প্রেক্ষাপটে রাশিয়া
বর্তমানে অর্থনৈতিক লড়াইয়ে লিপ্ত।
অবরোধের কারণে রাশিয়ায় বিনিয়োগে
সতর্কতা অবলম্বন করেছে
বিনিয়োগকারীরা যার ফলে পুঁজির
বহিঃপ্রবাহ ও রুবলের মূল্য পতন ঘটেছে।
এর সাথে তেলের বিপুল মূল্যহ্রাস যোগ
হয়ে রুশ অর্থনীতিকে আরো কাবু করে
ফেলেছে। তারপরও রাশিয়া ইচ্ছে করেই
সিরিয়ায় ব্যয়বহুল বিনিয়োগের বোঝা
কাঁধে তুলে নিয়েছে। বাহ্যত ইসলামিক
স্টেট (আইএস) নামক জিহাদি সংগঠনের
বিরুদ্ধে লড়াইরত পশ্চিমা জোটকে
সাহায্য করার জন্য সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে
জড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে অনেকেরই
বিশ^াস যে মস্কোর আসল উদ্দেশ্য হল
প্রেসিডেন্ট বাশারকে সাহায্য করা ও এ
অঞ্চলে অধিকতর পশ্চিমা প্রভাব
প্রতিহত করা।রাশিয়ার হস্তক্ষেপকে
সাদরে গ্রহণ করেছেন বাশার আল-আসাদ।
সিরিয়ায় ইতিমধ্যেই রাশিয়ার একটি
নৌঘাঁটি রয়েছে এবং একটি বিমান
ঘাঁটি ব্যবহারেরও অনুমতি পেয়েছে। ফলে
যুদ্ধ জাহাজ, জঙ্গি বিমান ও স্থলে
লড়াইয়ের জন্য সৈন্য মোতায়েনে তার
সুবিধা হয়েছে। ইতিমধ্যে পুতিন এটাকে
সত্য প্রতিপন্ন করেছেন যে রাশিয়াকে
সিরিয়ায় হস্তক্ষেপের আমন্ত্রণ
জানানো হয়েছে, কিন্তু পাশ্চাত্য
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব
ছাড়াই কাজ করছে। রাশিয়ার তাস
বার্তা সংস্থা জানায়, রাশিয়ার
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইগর
কোনাশেনকভ বলেছেন যে প্রতিদিন
৫০টি জঙ্গি বিমান ও হেলিকপ্টার
আইএসের অবস্থানগুলোতে বিমান হামলা
চালাচ্ছে। যদিও সঠিক তথ্য পাওয়া
কঠিন, আইএইচএস জেনস বলেছে যে
প্রতিটি জঙ্গি বিমানের প্রতি ঘণ্টার
উড্ডয়ন ব্যয় ১২ হাজার ডলার এবং
প্রতিটি হেলিকপ্টারের প্রতি ঘণ্টার
উড্ডয়ন ব্যয় ৩ হাজার ডলার।প্রতিটি
বোমা বর্ষণ অভিযানে একটি জঙ্গি
বিমানকে গড়ে প্রতিদিন ৯০ মিনিট এবং
প্রতিটি হেলিকপ্টারকে প্রতিদিন ৬০
মিনিট উড্ডয়ন করতে হয়। মস্কোকে
প্রতিদিন এ জন্য ৭ লাখ ১০ হাজার ডলার
ব্যয় করতে হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতিদিন
সাড়ে ৭ লাখ ডলারের গোলাবারুদ ব্যয়
হচ্ছে। আইএইচএস-এর হিসাবে সামরিক
জনশক্তি বাবদ প্রতিদিন ব্যয়ের পরিমাণ
৪ লাখ ৪০ হাজার ডলার। ভূমধ্যসাগরে যুদ্ধ
জাহাজগুলো রাখার ব্যয় আরো ২ লাখ
ডলার। অন্যান্য ব্যয় যেমন লজিস্টিকস,
গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, যোগাযোগ ও
প্রকৌশল বাবদ ব্যয় দৈনিক আড়াই লাখ
ডলার। এএফপি জানায়, সিরিয়ার একটি
ফিল্ড হাসপাতালে রাশিয়ার জঙ্গি
বিমান হামলায় একজন চিকিৎসকসহ ১৩
ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। সিরিয়ান
অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস
জানায়, রুশ জঙ্গি বিমানগুলো মঙ্গলবার
সিরিয়ার উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে সারমিনে
একটি ফিল্ড ক্লিনিকের উপর হামলা
চালায়। এতে একজন ফিজিওথেরাপিস্ট,
একজন নার্স, একজন গার্ড, একজন
বেসামরিক প্রতিরক্ষা সদস্যসহ ১৩ জন
নিহত হন। সারমিনের অবস্থান ইদলিব
প্রদেশে। রাশিয়া ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে
সিরিয়ায় বিমান অভিযান শুরুর পর থেকে
ইদলিবে আইএস ও সরকার বিরোধী
বিদ্রোহীদের উপর প্রতিদিন বিমান
হামলা চালাচ্ছে।সিরিয়ান-আমেরিকান
মেডিক্যাল সোসাইটি (এসএএমএস) এ
ক্লিনিকটি পরিচালনা করে। হামলার পর
ক্লিনিকের এক মহিলা স্টাফ এএফপিকে
জানান, দুপুর ১টার দিকে রুশ বিমান
হামলা হয়। এতে ক্লিনিকটি মারাত্মক
ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নাম প্রকাশে
অনিচ্ছুৃক ঐ স্টাফ এ হামলা রুশ জঙ্গি
বিমান চালিয়েছে কিনা তা সুনির্দিষ্ট
করে বলেন নি। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা
মন্ত্রণালয় বুধবার বলে, তাদের জঙ্গি
বিমান সারমিনে হামলা চালিয়েছে।
তবে মন্ত্রণালয় হাসপাতালে হামলার
কথা উল্লেখ করেনি। এক অনলাইন
বিবৃতিতে এসএএমএস বলে, মঙ্গলবারেই
হামায় তাদের পরিচালিত আরেকটি
হাসপাতালে রুশ জঙ্গি বিমান হামলা
চালায়। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী মামুন
আল খতিব বলেন, গত সপ্তাহে রুশ বিমান
হামলায় আলেপ্পোর দু’টি হাসপাতাল
ক্ষতিগ্রস্ত হয়।