২০১৫ সালের মামলা থেকে মুক্তি পেলেন খালেদা জিয়া, কুমিল্লায় আদালতের রায়
'লেডি হিটলারের' নির্দেশেই চলে সব - লন্ডনে খালেদা জিয়া
হিটলার' অভিহিত করে বিএনপি
চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন,
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে 'লেডি'বাংলাদেশের মানুষ মোটেই ভালো নেই।
বাংলাদেশে এখন একটি রাজতন্ত্র কায়েম
হয়েছে, যা চালাচ্ছেন একজন লেডি
হিটলার। দেশে যা কিছু ঘটছে, সব কিছুর
জন্য শেখ হাসিনা ও তাঁর বাহিনী জড়িত।
এই অপশক্তিকে সরাতে জাতীয় ঐক্য গড়ে
তুলতে হবে।'
গত রবিবার রাতে সেন্ট্রাল লন্ডনের
রিভারব্যাংক পার্ক প্লাজা হোটেলে
অনুষ্ঠিত সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির
বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। এক ঘণ্টারও
বেশি সময় ধরে দেওয়া বক্তৃতায় খালেদা
জিয়া অভিযোগ করেন, 'তিনি (শেখ
হাসিনা) যা হুকুম দিচ্ছেন, নির্দেশ দিচ্ছেন,
তার সামন্তরা অর্থাৎ প্রশাসনে যাঁরা
আছেন তাঁরা সেভাবে কাজ করছেন। অন্য
কারো কোনো নির্দেশ-আদেশ সেখানে চলে
না।'
লন্ডন সফররত বিএনপি চেয়ারপারসনের
সম্মানে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপ প্রবাসীদের
নিয়ে যুক্তরাজ্য বিএনপি শাখা এ
সমাবেশের আয়োজন করে। চিকিৎসার জন্য
গত ১৬ সেপ্টেম্বর লন্ডনে যাওয়ার পর গত
দেড় মাসে এই প্রথম বিএনপি চেয়ারপারসন
প্রকাশ্যে কোনো রাজনৈতিক সভায় বক্তব্য
দিলেন। এর আগে গত ২৪ সেপ্টেম্বর তিনি
যুক্তরাজ্যপ্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে
ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের একটি অনুষ্ঠানে
উপস্থিত হয়েছিলেন।
রবিবার বিএনপির সিনিয়র ভাইস
চেয়ারম্যান ও বড় ছেলে তারেক রহমানকে
পাশে রেখে বক্তব্য দেন খালেদা জিয়া।
দর্শক সারিতে উপস্থিত ছিলেন তারেকের
স্ত্রী জোবাইদা রহমান।
দেড় মাস লন্ডনে অবস্থানের কারণ ব্যাখ্যা
করে বক্তব্যের শুরুতেই খালেদা জিয়া
বলেন, চিকিৎসা করাতে ও পরিবারের সঙ্গে
সময় কাটাতে তিনি লন্ডনে একান্ত
ব্যক্তিগত সফরে এসেছেন। পরিবারের
লোকজন তাঁকে আরো কিছুদিন রেখে দিতে
চায় জানিয়ে তিনি বলেন, 'আপনারা জানেন
দেশের কী অবস্থা। সে জন্য আমাকে
যেতেই হবে। এখন আমি বেশ সুস্থ ও ভালো
আছি।' 'গণতন্ত্র নেই বলেই দেশে বিশৃঙ্খলা
হচ্ছে' উল্লেখ করে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী
বলেন, 'গণতন্ত্র নেই বলেই একের পর দুর্ঘটনা
ঘটছে। আর এ জন্য বিএনপিকে দোষারোপ
করা হচ্ছে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতির
জন্য সরকারই দায়ী। এ অবস্থা থেকে
উত্তরণের জন্য আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা
ছাড়তে হবে। গণতন্ত্রে ফিরতে হবে।
গণতন্ত্রের জন্য অনেক সংগ্রাম করেছি।
এবারও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারই আমার জীবনের
প্রধান লক্ষ্য।' গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার না হওয়া
পর্যন্ত লড়াই অব্যাহত রাখার অঙ্গীকারের
কথা বলেন তিনি।
বিএনপি প্রতিশোধের রাজনীতিতে বিশ্বাস
করে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিএনপি
ধ্বংস নয়, গড়ার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে।
সব কিছু ভুলে যেতে হবে। জাতীয় ঐক্যের
ভিত্তিতে সবাইকে নিয়ে কাজ করতে হবে।
সব ঘটনায় সরকার বিএনপিকে দায়ী করছে
অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন,
ইতালির নাগরিক তাভেল্লা হত্যার মুহূর্তে
কূটনৈতিক পাড়ার সড়কের বাতি বন্ধ ছিল
কেন? এর জন্য কি বিএনপি দায়ী? তিনি
অভিযোগ করে বলেন, 'জঙ্গির কথা বলে
হাসিনা বিদেশিদের ভয় দেখানোর চেষ্টা
করছেন। বোঝাতে চাইছেন, তিনি ক্ষমতায়
না থাকলে বাংলাদেশে জঙ্গির উত্থান
ঘটবে। কিন্তু জঙ্গিদের উত্থান যে কাদের
সময়ে হয়েছে সেটা তারা ভুলে যাচ্ছে।
যশোরে উদীচীর অনুষ্ঠান, পল্টনে সিপিবির
সভা, রমনার বটমূলে, গোপালগঞ্জের
গির্জায় বোমা হামলার ঘটনা আওয়ামী
লীগের আমলেই ঘটেছিল। কিন্তু একটা
জঙ্গিও তারা ধরেনি। আমরা সরকারে
আসার পর সব জঙ্গিকে ধরেছি। সাজা
দিয়েছি।'
বিচার বিভাগ, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনে
ব্যাপক দলীয়করণ করা হয়েছে অভিযোগ
করে খালেদা জিয়া বলেন, 'প্রশাসন থেকে
মেধাবী ও যোগ্য অনেককে বের করে
দেওয়া হয়েছে। এখনো প্রায় ৪০০ জনের
বেশি কর্মকর্তাকে ওএসডি করে রাখা
হয়েছে। আওয়ামী লীগের লোকদের ডাবল-
ট্রিপল প্রমোশন দিয়ে ওপরে ওঠানো হচ্ছে।'
তিনি আরো অভিযোগ করেন, 'বর্তমান
সরকারের অনেক মন্ত্রীর এমপি হওয়ারও
যোগ্যতা নেই। এ কারণে প্রশাসন অকার্যকর
হয়ে পড়েছে এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির
বাজেটও আজ খরচ হয় না। বড় বড় প্রজেক্ট
নিয়ে কমিশন বাণিজ্য আর বিদেশে
অর্থপাচার হচ্ছে। কিন্তু এসব অপকর্ম দুদক
চোখে দেখে না। তারা কেবল খালেদা
জিয়া আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে
ব্যস্ত।'
আওয়ামী লীগের গত সাত বছরের শাসনামলে
বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের
পরিসংখ্যান তুলে ধরে খালেদা জিয়া
দাবি করেন, 'এ সময়ে বিএনপির তিন হাজার
নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। এক
হাজার ২০০ জনকে গুম এবং এক হাজার ১২
জনকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে।
গুরুতর আহত হয়েছে পাঁচ হাজারের বেশি।
মিথ্যা মামলার সংখ্যা ২৪ হাজার। আসামি
করা হয়েছে ৬০ লাখ নেতাকর্মীকে এবং
অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার হয়েছে ছয় হাজার ৪৭৮
জনের।' বিএনপির নেতাকর্মীদের থানায়
নিয়ে গিয়ে পায়ে গুলি করে দেওয়া হয়
এবং তাদের চিকিৎসা করানোরও সুযোগ
দেওয়া হয় না বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
তাঁর ভাষ্য মতে, 'বিচার বিভাগ দলীয়করণ
করা হয়েছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের
জামিন দেওয়া হয় না।'
আজীবন ক্ষমতায় থাকার জন্য বিএনপিকে
একেবারে শেষ করে দেওয়ার পরিকল্পনা
নেওয়া হয়েছে অভিযোগ করে বিএনপি
চেয়ারপারসন বলেন, 'বিএনপিকে ভাঙা যায়
না, ভাঙা যাবে না। সত্যি কথাই বলি,
এরশাদ, ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দীনও কম করেনি।
পারেনি। শেখ হাসিনাও পারেনি। পারবে
না।' তিনি অভিযোগ করেন, বিডিআর
হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে শেখ হাসিনা ও মইন
উদ্দিন জড়িত।
সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পরিস্থিতি
বর্ণনা করে খালেদা জিয়া বলেন, শেখ
হাসিনার এবং এই নির্বাচন কমিশনের
অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করে নিরপেক্ষ
সরকারের অধীনে নির্বাচনের আয়োজন
করতে হবে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি
নির্বাচনে অংশ না নেওয়াকে সঠিক
সিদ্ধান্ত ছিল দাবি করে খালেদা জিয়া
বলেন, সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের
মতো ওই নির্বাচনেও বিএনপিকে জিততে
দেওয়া হতো না। বরং ওই নির্বাচনে অংশ
নিলে এই সরকার দেশে-বিদেশে বৈধতা
পেয়ে যেত।
সরকারবিরোধী টানা তিন মাসের আন্দোলন
প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন,
'ঢাকায় সেভাবে আন্দোলন করা সম্ভব হয়নি।'
তবে তিনি দাবি করেন, 'গ্রামদেশে যে
আন্দোলন হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের সময়ও ওই রকম
আন্দোলন হয়নি। ঢাকাতে দেখামাত্রই গুলি
করা হচ্ছে।' দলের পুনর্গঠন কার্যক্রম এগিয়ে
চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'কমিটিগুলোতে
তরুণদের প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ
করে আন্দোলন-সংগ্রাম যারা করেছে, যারা
রাজপথে ছিল তাদের দায়িত্ব দেওয়া হবে।
ভাই-ভাইয়ের পকেট কমিটি আর চলবে না।'
দেশে ফিরে দল গোছানোর কাজ জোরদার
করা হবে জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন,
'দেশে দলের স্থায়ী কমিটির নেতাদের
তিনি অনেক কিছু দেখিয়ে এসেছেন। কিন্তু
কিছু হলে ওরা সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।
সে জন্য আমার যাওয়াটা প্রয়োজন। তাই
আমাকে যেতেই হবে। দেশের মানুষের পাশে
দাঁড়াতে হবে।'
যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ
মালেকের সভাপতিত্বে সমাবেশ পরিচালনা
করেন যুক্তরাজ্য শাখা বিএনপির সাধারণ
সম্পাদক কয়সর এম আহমেদ। তারেক রহমান
ছাড়াও সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর
খসরু মাহমুদ চৌধুরী, শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড.
কে এম এ মালিক, প্রফেসর ড. আবুল হাসনাত,
কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব ব্যারিস্টার নাজির
আহমেদ, কাউন্সিলর অলিউর রহমান প্রমুখ।
অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির
আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আ ন ম
এহছানুল হক মিলন, মানবাধিকারবিষয়ক
সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম,
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে গত
নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত মেয়র
পদপ্রার্থী তাবিথ আউয়াল, সাংবাদিক
মুশফিকুল ফজল আনসারী প্রমুখ।
সমাবেশ চলাকালে হোটেলের সামনে
ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভ
করেছে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের একদল
নেতাকর্মী।
শেয়ার করুন