আপডেট :

        নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক আগাম ভোট

        লস এঞ্জেলেসে গভীর রাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে দুইজনের মৃত্যু, পাঁচজন হাসপাতালে

        সরকারি শাটডাউনে বিপর্যস্ত পরিবারগুলোর জন্য কার্ল’স জুনিয়রের ১ ডলারের খাবার উদ্যোগ

        লস এঞ্জেলেসের সান ফার্নান্দো ভ্যালিতে গুলিবর্ষণ, আহত একাধিক ব্যক্তি

        ভেনেজুয়েলার সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোর সম্ভাবনা অস্বীকার করলেন ট্রাম্প

        শাটডাউনের সময় খাদ্য সহায়তা বন্ধ করা যাবে না: মার্কিন আদালতের রায়

        মেক্সিকোতে সুপারমার্কেটে বিস্ফোরণে নিহত ২৩

        নিউহলে হ্যালোইন পার্টিতে গুলিবর্ষণ, নিহত ১

        যুক্তরাষ্ট্রে আরও এক রোগীর শরীরে মাংকিপক্স শনাক্ত, নাইজেরিয়া থেকে ফিরেছিলেন আক্রান্ত ব্যক্তি

        নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টান হত্যার অভিযোগে সামরিক পদক্ষেপের হুমকি ট্রাম্পের

        লস এঞ্জেলেসে ডজার্সের বিজয় উৎসব: সোমবার অনুষ্ঠিত হবে ওয়ার্ল্ড সিরিজ প্যারেড

        লস এঞ্জেলেসে বন্দুকধারীর হামলায় নিহত ১, আহত ১

        মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্বাস্থ্যবিমা খরচে তীব্র উল্লম্ফনের আশঙ্কা

        মার্কিন বিমানবন্দরে মারাত্মক বিশৃঙ্খলা: কর্মী সংকটে ব্যাহত বিমান চলাচল

        মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আইরিশ নাগরিকদের নির্বাসন ৫০% এর বেশি বেড়েছে

        বলিউড বাদশাহর আজ ৬০ বছর, শুভ জন্মদিন শাহরুখ খান

        বলিউড বাদশাহর আজ ৬০ বছর, শুভ জন্মদিন শাহরুখ খান

        খ্রিস্টানদের হত্যার অভিযোগে নাইজেরিয়ায় সামরিক অভিযান চালানোর হুমকি ট্রাম্পের

        বিরতির পর লিটনের ট্রাস্ট: বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি স্কয়াডে নতুন জীবন!

        অর্ধেকেরও বেশি ব্যাংক সাইবার হামলা প্রতিরোধে অক্ষম

‘বেগমপাড়া’ সাধারণ বাংলাদেশি জনগণের কাছে ব্যাপক পরিচিতি

‘বেগমপাড়া’ সাধারণ বাংলাদেশি জনগণের কাছে ব্যাপক পরিচিতি

‘জড়ো হচ্ছেন’ টাকা লুটকারী সাহেবরা

কানাডার প্রধান নগরী টরন্টোর ‘বেগমপাড়া’ সাধারণ বাংলাদেশি জনগণের কাছে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অবৈধভাবে পাচার করা অর্থে গড়ে তোলা প্রাসাদসম বাড়ির একটি পাড়া হিসেবে। অনেকেই শুনে অবাক হবেন, বেগমপাড়া বলে কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থান টরেন্টো বা তার আশপাশের শহরগুলোর কোথাও নেই। এই ‘বেগমপাড়া’ শব্দটি একজন ভারতীয় প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতার একটি চলচ্চিত্র বেগমপুরা থেকে নেওয়া হয়েছে এবং তাদের প্রেক্ষাপট ভিন্ন।


কিন্তু বাংলাদেশের অসংখ্য রাজনীতিবিদ, সুবিধাবাদী আমলা, ক্ষমতার শীর্ষ মহলের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করে এখন লাপাত্তা। নানা অনিয়মের মাধ্যমে দেশের সাধারণ মানুষের টাকা লুট করে বিলাসী জীবন যাপন করছে কানাডার বেগমপাড়াসহ দুবাই, মালয়েশিয়ায়-সিঙ্গাপুরে।

আর এসব টাকা লোপাট করে বউ-বাচ্চাদের বেগমপাড়া কিংবা সেকেন্ড হোমে বিলাসী জীবন যাপনের জন্য পাঠাতেন। বেগমপাড়া হয়ে উঠেছে বাংলাদেশি ধনাঢ্য ব্যক্তিদের বিদেশে ‘অবৈধ স্বর্গ’ বানানোর প্রতীক। বেগমপাড়ার বেগম সাহেবাদের জন্য কারও কোনো সমবেদনা জাগে না। কারণ, তারা স্বেচ্ছায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অর্থ পাচারের সক্রিয় সহযোগী হিসেবে। এদিকে গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এখন অনেকে বেগমদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর রীতিমতো কানাডার ‘বেগমপাড়া’ কিংবা সেকেন্ড হোমে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া রাজনীতিবিদ, আমলা আর ব্যবসায়ীর ভিড় বেড়েছে বলে জানা গেছে। বিভিন্ন সূত্র থেকে খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, মামলা, জেল-জরিমানা আর শাস্তির ভয়ে তারা বিভিন্ন উপায়ে ওই সব উন্নত দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। তবে সরকার এদের পাচার করা টাকা ফিরিয়ে আনতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ও অর্থ উপদেষ্টা এরই মধ্যে অন্তত পাচারের এক লাখ কোটি টাকা ফেরাতে টাস্কফোর্স গঠন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছেন। খুব শিগগিরই দৃশ্যমান হবে অর্থ উদ্ধার প্রক্রিয়া।

এ নিয়ে জাতীয় দৈনিক কালের কণ্ঠ ‘বেগমপাড়ায় ছুটছেন সাহেবরা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদনে জানা যায়, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফ। তার দুই ছেলে ফাহিম আফসার আলম ও ফারহান সাদিক আলম এবং মেয়ে তানিশা আলম থাকেন কানাডার টরেন্টোতে। হানিফের বড় ভাই রফিকুল আলম চুন্নুও সপরিবারে থাকেন কানাডায়। সাবেক এই সংসদ সদস্যের স্ত্রী-সন্তান ও পরিবারের অন্য সদস্যদের নামে রয়েছে বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। যদিও উচ্চতর শিক্ষার উদ্দেশ্যে বিদেশে পাড়ি দিয়েছিলেন মাহবুবউল আলম হানিফের সন্তানরা।

এদিকে ছাগলকাণ্ডে অবসরে যাওয়া এনবিআরের সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমানের মেয়ে ফারজানা রহমান ইপসিতার বাড়ি রয়েছে কানাডার ব্যারি সিটিতে। চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি আট লাখ ৮৮ হাজার কানাডিয়ান ডলারে বাড়িটি কেনেন তিনি। এ সময় রেজিস্ট্রেশন ও জমি ট্রান্সফার ফি বাবদ আরো প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কানাডিয়ান ডলার খরচ হয়েছে। অর্থাৎ বাড়িটির মালিক হতে ইপসিতাকে খরচ করতে হয়েছে বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৯ কোটি টাকা।

এ ছাড়া অসংখ্য প্রভাবশালী বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা, দুর্নীতিবাজ আমলা, প্রকৌশলী, পুলিশ, পোশাক কারখানার মালিক, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালকরাও নামে-বেনামে সম্পদ কিনেছেন কানাডার বেগমপাড়ায়। তাদের কেউ আবার যুক্তরাষ্ট্র, আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ অনেক দেশে দামি বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়ে বিলাসী জীবন যাপন করছেন। বিতর্কিত ব্যবসায়ী এস আলম ছয়-সাতটি ব্যাংক থেকে প্রায় লাখো কোটি টাকা লুটে নিয়েছেন বলে খবর হয়েছে। এ টাকায় তিনি সিঙ্গাপুরে সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। সামিট গ্রুপের মুহাম্মদ আজিজ খান দেশের টাকা নিয়ে সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ১০ ধনীর একজন হয়েছেন। তথ্য-উপাত্ত বলছে, এ রকম উদাহরণ অসংখ্য। তবে ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকায় এত দিন তাদের কাউকেই ধরা যায়নি।

গত প্রায় ১৬ বছরে ওভার ও আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে অবৈধ চ্যানেল ও হুন্ডির মাধ্যমে বিপুল অর্থ পাচার করেছেন তারা। এখন এই পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার জন্য জোর তৎপরতা শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে অনেকের দেশে থাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। বিদেশে খোঁজখবর করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটসহ (বিএফআইইউ) সরকারের যত সংস্থা রয়েছে, সেগুলো কাজ শুরু করেছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এ সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার হচ্ছে শেখ হাসিনার ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনামলে পাচার হওয়া বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনা।

এদিকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে সম্প্রতি একটি টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল তা রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) তা চূড়ান্ত করা হয়েছে। খুব শিগগিরই দৃশ্যমান হবে অর্থ উদ্ধার প্রক্রিয়া। উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এসব কথা বলেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যানশিয়াল ইনটিগ্রিটির (জিএফআই) তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের গত দেড় দশকের শাসনামলে দেশ থেকে অন্তত ১৪ হাজার ৯২০ কোটি বা ১৪৯ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় অন্তত ১৭ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা (প্রতি ডলারে ১১৮ টাকা ধরে)। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের তীব্র ডলার সংকটের মধ্যেও এ ধারা অব্যাহত ছিল।

জিএফআইয়ের প্রতিবেদন বলছে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের আড়ালে ওভার ও আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে গড়ে ৬৪ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে। ২০১৬ থেকে ২০২০ সালে অর্থাৎ পাঁচ বছরে পাচারকারীরা তিন লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে, যার মধ্যে শুধু ২০১৫ সালে এক বছরেই পাচার হয়ে যায় ৯৮ হাজার কোটি টাকা। পাচারকৃত টাকার পরিমাণ বিবেচনায় ২০১৯ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় পাচারকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়।

বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের তথ্য বলছে, মূলত আমদানি-রপ্তানির সময় পণ্যের প্রকৃত মূল্য গোপন, বিল কারচুপি, ঘুষ, দুর্নীতি, আয়কর গোপন ইত্যাদির মাধ্যমে বিদেশে পাচার হয়েছে। অর্থপাচার রোধে সরকারের কিছু নীতিমালা থাকলেও এর সুষ্ঠু ও কার্যকর বাস্তবায়নের অভাবে দেশ থেকে অর্থপাচার রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের সংস্কারের কথা বলা হলেও আজ পর্যন্ত তা করা হয়নি।

সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে সুইস ব্যাংকের কাছে বাংলাদেশিদের আমানত জমা আছে ২৩৪ কোটি টাকা বা এক কোটি ৭৭ লাখ ফ্রাঁ (প্রতি ফ্রাঁ ১৩২ টাকা)। তবে পাচারকারীরা এখন সুইস ব্যাংকের বিকল্প হিসেবে ইউএসএ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়াসহ অনেক দেশে অর্থ পাচার করছে বলে জানা গেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন বলেন, ‘গত ১৫ বছরে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রজেক্টের আড়ালে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হয়েছে। লুট করে স্ত্রী-সন্তানদের নামে হুন্ডি এবং ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে এ টাকা পাচার করা হয়েছে। শুধু ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও বিও হিসাব ফ্রিজ করে দুর্নীতিবাজদের সম্পদ দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। তদন্তের মাধ্যমে তাদের চিহ্নিত করে সেই সম্পদও জব্দ করার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।’

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে একটি নীতিমালা আছে। এই নীতিমালার আলোকে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএফআইইউ, দুদক, এনবিআর, সিআইডিসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। যেসব দেশে পাচার হয়েছে সে দেশগুলো চিহ্নিত করে চুক্তি করার মাধ্যমে অর্থ ফেরত আনা সম্ভব। এ প্রক্রিয়ায় অনেক আগে সিঙ্গাপুর থেকে একজনের পাচার করা অর্থ ফেরত আনাও হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার পাচার করা অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটি প্রশংসনীয়। যদি সেটি করা যায়, তাহলে দেশে দৃষ্টান্ত স্থাপন হবে।’

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ও সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনে (এসডিএফ) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, ‘কেউ কারো কষ্টার্জিত অর্থ বিদেশে পাচার করে না। অবশ্যই দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে অর্জিত অর্থই বিদেশে পাচার করেছে। অনিয়মের মাধ্যমে অর্জিত অর্থকে আয়কর নথিতে

 

এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত