বর্ণাঢ্য আয়োজনে লস এঞ্জেলেসে বৈশাখীমেলা অনুষ্ঠিত
যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলেসে বর্ণাঢ্য আয়োজনে
অনুষ্ঠিত হয়েছে আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী বৈশাখীমেলা। গত শনি ও রবিবার
স্থানীয় ভারজিল মিডিল স্কুলে মেলাটি আয়োজন করে ‘বাংলাদেশ আমেরিকান
সোসাইটি’। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে গত ১৯ বছর ধরে প্রতিবছর লস এঞ্জেলেসে এই
মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন পণ্য দ্রব্য ও
খাবারের স্টল, আবহমান বাংলার বিভিন্ন জিনিসের প্রদর্শনী এবং সাংস্কৃতিক
অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এক বর্ণিল মিলনমেলা বসে প্রবাসীদের।
প্রথম
দিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন বাংলাদেশ থেকে আগত লালন
সম্রাজ্ঞী ফরিদা পারভিন। তার সাথে বাঁশি বাজান বাংলাদেশের খ্যাতিমান
বংশীবাদক গাজী আবদুল হাকিম। লালন সম্রাজ্ঞী ফরিদা পারভীনের গানের আকুল করা
টান মোহময় করে দর্শক-শ্রোতাদের।
মেলার দ্বিতীয় দিন গান পরিবেশন
করেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় রক স্টার ব্যান্ডদল মাইলস। মাইলস তাদের ৪০ তম
প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন করে এই অনুষ্ঠানে। দুইদিনব্যাপী এই আয়োজনের
প্রধান আকর্ষণই ছিল বাংলাদেশের তরুণের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় এই ব্যান্ডদল।
দ্বিতীয়দিন তাদের পরিবেশনায় ভরে যায় লস এঞ্জেলেসের আকাশ বাতাস। নেচে ওঠে
দর্শকের হৃদয়। দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে আসেন মাইলসের গান শুনার জন্য। কানায়
কানায় পূর্ণ ছিল মেলা প্রাঙ্গন।
ফিরিয়ে
দাও আমারই প্রেম... ধিকি ধিকি আগুন জ্বলে... নীলা তুমি কি জানো না.... এমন
শ্রোতাপ্রিয় গানগুলো গেয়ে উপস্থিত দর্শকদের পাগল করে তুলে মাইলসের
শিল্পীরা। অনেকেই গানের সাথে নাচতে দেখা যায়।
এছাড়াও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন স্থানীয় শিল্পীরা। নৃত্য পরিবেশন করে আমেরিকান নতুন প্রজন্মের শিশুরা।
স্থানীয়দের
মধ্যে গান পরিবেশন করেন সাদিয়া রহমান, সাইফ কুতবী, সাজিয়া হক মিমি,
সুখেন্দ্র পাল, আশরাফ, রেহানা মল্লিক, মন পবন, সোনিয়া খুকু, মিতালী কাজল,
লুনা রহমান, সাথী বড়ুয়া, তাবাসসুম আলম, আদনান খান ও শিমুল খান। নৃত্য
পরিবেশন করেন শ্রীজা, প্রভা, জাইরা, উমাইজা, আনিয়া, ওয়াহিদ ওনি, আনুশী আলম,
সান্তিবা রিমি ও তানিশা আলী।
প্রবাসে
বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরে রাখতে প্রতিবার এই বৈশাখী মেলার
আয়োজন করা হয়। এবারের মেলাটিও জমেছিল নান্দনিকতায়। বৈশাখের রঙ্নি সাজে
মেলায় উপস্থিত হন বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোররা।
বৈশাখ
এপ্রিল মাসে হয়ে থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলগুলোতে তখন পুরো একাডেমিক সেশন
থাকে। আর জুলাইতে সামার ভ্যাকেশন থাকায় ছুটির দিনে বাচ্চাদের পড়ালেখার
চাপও থাকে কম তাই এই সময়ে মেলাটি আয়োজন করা হয়। এতে মেলার উপস্থিতিও হয়
ব্যাপক।
এবার বৈশাখীমেলার অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ আমেরিকান সোসাইটির
সদ্য গঠিত কমিটির শপথ হয়। শপথ পাঠ করান বিশিষ্ট ফার্মাসিস্ট মোয়াজ্জেম
হোসেন চৌধুরী।
শপথ পাঠ করানোর পর সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন
ফার্মাসিস্ট মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেন, আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী
এই মেলা আয়োজনের জন্য কর্তৃপক্ষকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এর মাধ্যমে প্রবাসী এবং
আমাদের নতুন প্রজন্ম বাংলাদেশ ও বাংলাদেশি সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হচ্ছে।
আমি এর সার্বিক সাফল্য কামনা করি। বৈশাখীমেলার জন্য সবসময় আমার সব ধরণের
সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
শুভেচ্ছা
বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আমেরিকান সোসাইটির নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট সাইদুল
হক সেন্টু ও জেনারেল সেক্রেটারি হুমায়ুন কবির। অনুষ্ঠান উপস্থানা করেন
সৃজনশীল ও সেলিব্রেটি উপস্থাপিকা সাজিয়া হক মিমি এবং আশরাফ মিলন।
প্রেসিডেন্ট
সাইদুল হক সেন্টু তার বক্তব্যে উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমি
সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। বাংলাদেশের ঐতিহ্যগুলো বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে আমাদের
এই আয়োজন। এই আয়োজনে যারা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন। এবং আজকে যারা
স্বত:স্ফুর্তভাবে উপস্থিত হয়ে আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করেছেন আপনাদের সবাইকেও
অশেষ ধন্যবাদ। বাংলাদেশ আমেরিকান সোসাইটির আগমী দিনের সকল কার্যক্রমে
আপনাদের সহযোগিতা কামনা করি।
উল্লেখ্য,
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্য তথা লস এঞ্জেলেস সিটিতে বাস
করছেন প্রায় ৬০ হাজার বাংলাদেশি। যা যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি অভিবাসীদের
দিক দিয়ে ২য় সর্বোচ্চ সংখ্যা। এ অবস্থায় প্রবাসী কমিউনিটির সেবায় কাজ করতে
কয়েকজন বিশিষ্ট ও বয়োজৈষ্ট নেতৃবৃন্দ ‘বাংলাদেশ আমেরিকান সোসাইটি
(BAS-বাস)’ নামে নতুন একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছেন। এর মাধ্যমে চ্যারিটি ও
সমাজসেবামূলক কাজ এবং প্রবাসে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে।
বৈশাখীমেলা এরই একটি অংশ। এখন থেকে প্রতি বছর বৈশাখীমেলা আয়োজন করবে ‘বাস’।
এছাড়া
বাসের বর্তমান সর্ববৃহৎ প্রজেক্ট হচ্ছে, লস এঞ্জেলেসে একটি কমিউনিটি
সেন্টার প্রতিষ্ঠা। যাতে প্রবাসীরা যেকোনো প্রগ্রাম এই সেন্টারে আয়োজন করতে
পারেন।
শেয়ার করুন