ট্রাম্প গুরুতর জখম না হওয়ায় স্বস্তির নিশ্বাস
রক্তাক্ত ডোনাল্ড ট্রাম্প উঠে দাঁড়াচ্ছেন। লৌহ কঠিন শপথের ঊর্ধ্বমুখী মুষ্টিবদ্ধ হাত। পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা। ট্রাম্পকে ঝাপটে ধরা নিরাপত্তার লোকজন। - এ ছবিটি আমেরিকার ইতিহাসে স্থায়ী হয়ে গেলো।
১৩ জুলাই শুক্রবার পেনসিলভেনিয়ার নির্বাচনি প্রচারণা সভায় বক্তব্য শুরুর সময়ে অদূরের ছাদ থেকে ছোড়া গুলি। হামলাকারী ২০ বছর বয়সের থমাস মেথিউ ক্রুকস। নিরাপত্তায় থাকা লোকজন দ্রুতই থমাসকে পালটা গুলি করে হত্যা করতে সক্ষম হয়। লুটিয়ে পড়ে ট্রাম্প দ্রুত উঠে দাঁড়ান। মুষ্টিবদ্ধ হাত উপরে উঠিয়ে উড্ডীন পতাকার সামনে জনগণকে দেয়া তাঁর অভিবাদন প্রতীকই হয়ে উঠেছে আমেরিকার রাজনীতি ও সমাজের বর্তমান বাস্তবতায়।
দ্রুতই এ হামলার নিন্দা জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ ডেমোক্র্যাট দলের শীর্ষ নেতারা। আমেরিকায় সহিংসতার কোন স্থান নেই - বলা হলেই সহিংসতার সাথেই লড়াই করতে হচ্ছে আমেরিকাকে প্রতিদিন। একজন ২০ বছরের তরুণের হাতে আগ্নেয়াস্ত্রএবং এর মাধ্যমে ঘটা ঘটনা আমেরিকায় প্রতিদিন ঘটছে। ট্রাম্পের সমাবেশের অতি কাছে অস্ত্র নিয়ে ছেলেটি প্রবেশ করেছিল কেমনে? থমাসের গাড়িতে বিস্ফোরক পাওয়া গেছে। তদন্ত সম্পন্ন হয়নি। এর ধ্যেই এ হামলার সম্ভাব্য ভয়াবহতা অনুমান করে লোকজনকে শিহরিতো হতে দেখা যাচ্ছে।
রাজনৈতিক সৌজন্য চরমভাবে চর্চিত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দিনের কর্মসূচি বাতিল করেছেন। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কথা বলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে। বলেছেন, এমন সহিংসতার কোন স্থান আমেরিকায় নেই। সবাইকে এ ঘটনার নিন্দা জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন। ডেমোক্র্যাট দল ঘটনার পরপরই সমস্ত দেশ জুড়ে তাদের নির্বাচনি প্রচারণা স্থগিত করে দেয়। দলমত নির্বিশেষে আমেরিকার মানুষ এ নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে উঠেছে।
সোমবার থেকে শুরু হওয়া রিপাবলিকান কনভেনশনে যোগ দেবেন বলে শুক্রবার রাতেই ঘোষণা দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। উসকন্সিন রাজ্যের মিলওয়াকিতে সম্মেলন কেন্দ্র থেকে আমাদের প্রতিনিধি নুরুল হক জানাচ্ছেন, প্রায় তিন মাইল এলাকা কর্ডন করে রেখেছে পুলিশ। কড়া নিরাপত্তার মধ্যেই শুক্রবার থেকে লোকজনের আগমন ঘটতে থাকে। সমস্ত আমেরিকা থেকে আসা রিপাবলিকান ডেলিকেটদের সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে নিরাপত্তার লোকজন। প্রায় মাইল খানেক হেঁটে সম্মেলন কেন্দ্রের কাছাকাছি যাওয়া সম্ভব হয়েছে বলে তিনি জানান।
এ ঘটনা অনিবার্যভাবে নির্বাচনী প্রচারে একটি প্রভাব ফেলবে। যুক্তরাষ্ট্রের সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যরা এ হামলাকে একটি হত্যাচেষ্টা হিসেবে দেখছেন। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ঘেরাওয়ের মধ্যে রক্তাক্ত ট্রাম্পের মুষ্টিবদ্ধ হাত ওপরে তোলার ছবি দ্রুতই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন তাঁর ছেলে এরিক ট্রাম্প। ছবির ক্যাপশনে তিনি লেখেন, ‘ এই যোদ্ধাকেই আমেরিকার প্রয়োজন।’
গুলির এ ঘটনার পরপরই টেলিভিশনের পর্দায় হাজির হন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতার কোনো স্থান নেই। রিপাবলিকান প্রতিপক্ষের জন্য উদ্বেগ জানান তিনি। পরে বাইডেন টেলিফোনে ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস।
ট্রাম্পের ওপর হামলার পর বাইডেনের প্রচারশিবির সব রাজনৈতিক বক্তব্য প্রচার স্থগিত করেছে। যত দ্রুত সম্ভব সব টেলিভিশন বিজ্ঞাপন বন্ধ করারও উদ্যোগ নিয়েছে। তারা খুব স্পষ্টভাবে এটা উপলব্ধি করতে পেরেছে, এ সময়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আক্রমণ করে কোনো কিছু প্রচার করাটা সঠিক হবে না। তার চেয়ে বরং তারা এ সময়ে ঘটনার নিন্দা জানানোর দিকে মনোযোগ দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনের সবাই এ হামলার নিন্দা জানাচ্ছেন। তাঁরা একযোগে বলছেন, গণতন্ত্রে সহিংসতার কোনো জায়গা নেই।
সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওমাবা, জর্জ ডব্লিউ বুশ, বিল ক্লিনটন ও জিমি কার্টার—সবাই দ্রুতই সহিংসতার বিরুদ্ধে অবস্থান জানিয়েছেন। ট্রাম্প গুরুতর জখম না হওয়ায় স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন তাঁরা।
তবে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ কিছু মিত্র ও সমর্থকেরা এরই মধ্যে এ ঘটনার জন্য বাইডেনকে দোষারোপ করছেন। রিপাবলিকান দলের একজন কংগ্রেসম্যান এরই মধ্যে এক্সে দেওয়া এক পোস্টে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বিরুদ্ধে এ ‘হত্যাচেষ্টা উসকে’ দেওয়ার অভিযোগ করেছেন। ট্রাম্পের সম্ভাব্য ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের সংক্ষিপ্ত তালিকায় সিনেটর জেডি ভেনস রয়েছেন বলে ধারণা করা হয়। তিনি বলেন, বাইডেন শিবির থেকে যেসব রাজনৈতিক বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে, সেগুলোই এ ঘটনার জন্য দায়ী। অন্য রিপাবলিকান রাজনীতিবিদেরাও একই ধরনের কথা বলছেন। প্রতিপক্ষ শিবির থেকে আসা এসব বক্তব্যের অবশ্যই নিন্দা জানানো হবে। বলা হবে, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে একটি কঠিন সময়ে উসকানিমূলক এসব বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে ঘটা গভীর দুঃখের একটি ঘটনা নিয়ে এরই মধ্যে যে লড়াইয়ের সূচনা হয়েছে, তা আগামীতে আরও কুৎসিত রূপ নেবে বলেই ধারণা করা যায়। আর এটাই এ নির্বাচনের প্রচারের ধরন বদলে দেবে।
এমনিতেই নির্বাচন নিয়ে চরম বিপাকে রয়েছে ডেমোক্র্যাট দল। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর চাপ অব্যাহত রয়েছে। এমন হলে ডেমোক্র্যাট দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কি ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস হচ্ছেন? সেক্ষেত্রে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে কে ঝুটি হচ্ছেন? এসব আলাপের মধ্যেই শুক্রবারের ঘটনা আমেরিকার রাজনীতিকে দুঃখজনক নাটকীয়টা ও উত্তেজনা এনে দিয়েছে।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন