বাহামাসের একই রিসোর্টে ৩ ঘণ্টার ব্যবধানে দুই মার্কিন নাগরিকের মৃত্যু
দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে পৃথিবীর পথে নাসার দুই মহাকাশচারী
ছবিঃ এলএবাংলাটাইমস
নাসার দুই মহাকাশচারী অবশেষে স্পেসএক্সের ক্যাপসুলে চড়ে পৃথিবীতে ফেরার পথে রয়েছেন। নয় মাসের দীর্ঘ মিশন শেষে মঙ্গলবার তারা যাত্রা শুরু করেন।
বুচ উইলমোর এবং সুনি উইলিয়ামস গত বসন্ত থেকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে অবস্থান করছিলেন। তাদের এই দীর্ঘ মিশনের কারণ ছিল বোয়িংয়ের স্টারলাইনার ক্যাপসুলের ব্যর্থতা। মূলত, গত ৫ জুন বোয়িংয়ের নতুন স্টারলাইনার ক্যাপসুলে তারা মহাকাশে গিয়েছিলেন মাত্র এক সপ্তাহের জন্য। কিন্তু স্টারলাইনারের একাধিক কারিগরি সমস্যার কারণে নাসা ক্যাপসুলটি খালি অবস্থায় পৃথিবীতে ফিরিয়ে নেয় এবং উইলমোর ও উইলিয়ামসকে স্পেসএক্সের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর স্পেসএক্সের ক্যাপসুলেরও সমস্যা দেখা দেওয়ায় ফেরার সময় আরও এক মাস পিছিয়ে যায়।
রবিবার নতুন পরিবর্তিত ক্রু দল মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছানোর পর উইলমোর ও উইলিয়ামসের অবশেষে ফেরার অনুমতি মেলে। আবহাওয়া খারাপ হতে পারে এমন আশঙ্কায় নাসা তাদের ফেরার সময়সূচি কিছুটা এগিয়ে আনে। তারা মহাকাশ স্টেশন থেকে রওনা হন নাসার নিক হেগ এবং রাশিয়ার আলেকজান্ডার গর্বুনভের সঙ্গে, যারা গত বছর একটি স্পেসএক্স ক্যাপসুলে মহাকাশে গিয়েছিলেন এবং স্টারলাইনারের দুইজনের জন্য খালি আসন রেখেছিলেন।
মহাকাশ থেকে বিদায় নেওয়ার সময় নাসার অ্যান ম্যাকক্লেইন বলেন, "আমরা তোমাদের মিস করবো, তবে শুভযাত্রা!"
এই মিশন বিশ্বব্যাপী আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে, বিশেষ করে "কাজে আটকে থাকার" নতুন সংজ্ঞা হিসেবে এটি অনেকের নজর কাড়ে। যদিও অনেক মহাকাশচারী দীর্ঘ সময় মহাকাশে থেকেছেন, কিন্তু এত অনিশ্চয়তা ও পরিকল্পনার পরিবর্তনের মুখোমুখি আগে কেউ হননি।
মিশনের শুরুতে অতিথি হিসেবে মহাকাশ স্টেশনে থাকলেও উইলমোর ও উইলিয়ামস দ্রুতই পূর্ণাঙ্গ ক্রু সদস্য হয়ে ওঠেন। তারা বিজ্ঞান গবেষণা, যন্ত্রপাতি মেরামত, এমনকি মহাকাশে হাঁটার কাজেও অংশ নেন। উইলিয়ামস মহাকাশে মোট ৬২ ঘণ্টা হাঁটার মাধ্যমে একজন নারী মহাকাশচারীর জন্য নতুন রেকর্ড গড়েছেন।
তাদের মিশনের মাঝে একটি রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি হয়, যখন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ককে অনুরোধ করেন তাদের দ্রুত ফিরিয়ে আনতে এবং দেরির জন্য বাইডেন প্রশাসনকে দায়ী করেন। তবে উইলমোর ও উইলিয়ামস মহাকাশ থেকে দেওয়া বক্তব্যে বরাবরই নিরপেক্ষ ছিলেন এবং নাসার সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জানান।
নাসা স্পেসএক্স ও বোয়িংকে বাণিজ্যিক সংস্থার মাধ্যমে মহাকাশচারী পরিবহনের জন্য চুক্তিবদ্ধ করেছে। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন ২০৩০ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বেসরকারি স্টেশন চালুর পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে নাসা চাঁদ ও মঙ্গল মিশনে বেশি মনোযোগ দিতে পারে।
উইলমোর (৬২) ও উইলিয়ামস (৫৯) দুজনই নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন। তারা স্বীকার করেছেন, দীর্ঘ সময় মহাকাশে থাকাটা তাদের পরিবারগুলোর জন্য কঠিন হয়ে গেছে। উইলমোর তার ছোট মেয়ের হাইস্কুলের শেষ বছর প্রায় পুরোপুরি মিস করেছেন, আর তার বড় মেয়ে কলেজে পড়ছে। উইলিয়ামস শুধু মহাকাশ থেকে ইন্টারনেট কলের মাধ্যমে মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।
তবে তারা স্পেসএক্সের উদ্ধারকারী জাহাজ থেকে নেমে হিউস্টনে পৌঁছানোর পরই তাদের প্রিয়জনদের সঙ্গে বহু প্রতীক্ষিত পুনর্মিলনী হবে।
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
শেয়ার করুন