২০০৯ সালের পর সর্বনিম্ন নিয়োগ পরিকল্পনা, চাকরির বাজারে অনিশ্চয়তা
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ‘হিরো’ পুলিশ অফিসার জীবন দিয়ে বাঁচালেন অন্যদের
ছবিঃ এলএবাংলাটাইমস
নিউ ইয়র্ক সিটির একটি অফিস বিল্ডিংয়ে বন্দুকধারীর গুলিতে চারজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে একজন ছিলেন এক প্রবাসী বাংলাদেশি পুলিশ কর্মকর্তা এবং দুই সন্তানের জনক।
৩৬ বছর বয়সী দিদারুল ইসলাম পার্ক অ্যাভিনিউর একটি ভবনে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ থেকে গিয়েছিলেন, তাঁর দুটি সন্তান রয়েছে এবং তাঁর স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তিনি “একজন বীরের মতোই” মারা গেছেন।
নিউ ইয়র্কের মেয়র এরিক অ্যাডামস বলেন, “তিনি যা সবচেয়ে ভালো পারতেন, তাই করছিলেন—মানুষের জীবন রক্ষা। তিনি নিউ ইয়র্কবাসীদের রক্ষা করছিলেন।”
মেয়র আরও জানান, এই ঘটনায় আরও তিনজন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন—দুজন পুরুষ ও একজন নারী। তবে তাঁদের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। আরেকজন পুরুষ গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ঘটনার জন্য দায়ী সন্দেহভাজন একমাত্র হামলাকারী শেন তামুরা (২৭), যিনি নেভাদার বাসিন্দা ছিলেন, নিজেই নিজের গায়ে গুলি করে আত্মহত্যা করেন বলে জানা গেছে।
তামুরার মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা ছিল বলে পূর্বে নথিভুক্ত রয়েছে, তবে তাঁর হামলার উদ্দেশ্য এখনো জানা যায়নি।
পুলিশ বলছে, তামুরা প্রথমে ৩৪৫ পার্ক অ্যাভিনিউর ভবনে প্রবেশ করার সময় দিদারুল ইসলামকে গুলি করেন। এরপর তিনি ভবনের ৩৩ তলায় উঠে গিয়ে আরও কয়েকজনকে গুলি করেন এবং শেষে নিজেকে গুলি করেন।
এনওয়াইপিডি-র (নিউ ইয়র্ক পুলিশ বিভাগ) অফিসিয়াল এক্স অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে বলা হয়, দিদারুল ইসলাম “আমাদের ডিপার্টমেন্টের সর্বোত্তম প্রতিনিধিত্ব করেছেন”। পোস্টে আরও বলা হয়, “তিনি নিউ ইয়র্কবাসীদের সুরক্ষা দিচ্ছিলেন, তখনই তাঁর জীবন মর্মান্তিকভাবে শেষ হয়ে যায়।”
সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের কমিশনার জেসিকা টিশ বলেন, ইসলাম এনওয়াইপিডি-র ব্রঙ্কস এলাকার ৪৭তম জেলায় কর্মরত ছিলেন। তিনি বলেন, “আমরা তাঁকে যে দায়িত্ব দিয়েছিলাম, তিনি তা পালন করছিলেন। তিনি নিজের জীবন ঝুঁকিতে ফেলেছেন। তিনি চরম আত্মত্যাগ করেছেন।” কমিশনার আরও বলেন, “তিনি যেমন জীবন কাটিয়েছেন, তেমনভাবেই মারা গেছেন—একজন বীর হিসেবে।”
মেয়র অ্যাডামস বলেন, “তিনি শুধু পোশাকেই নয়, মন-প্রাণেও একজন সত্যিকারের নিউ ইয়র্কার ছিলেন। তিনি এই শহরকে ভালোবাসতেন।” মেয়র জানান, তিনি ইসলাম পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন এবং তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। ইসলাম তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে পুলিশ হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
মেয়র বলেন, “তিনি তাঁর বাবার একমাত্র সন্তান ছিলেন। আমি আমার সন্তান জর্ডানকে ভাবি... এত বড় ক্ষতি কল্পনাও করা যায় না।”
নিউ ইয়র্ক টাইমস জানায়, ব্রঙ্কসের বাংলাদেশি কমিউনিটির অনেকে সোমবার সন্ধ্যায় ইসলাম পরিবারের বাসায় যান। তাঁরা বলেন, ইসলাম যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে প্রথমে একটি স্কুলে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করতেন, পরে পুলিশের চাকরিতে যোগ দেন। তিনি স্থানীয় মসজিদের সক্রিয় সদস্য ছিলেন এবং অনেক তরুণকে পথ দেখাতেন।
তাঁর এক শিষ্য, মারজানুল করিম বলেন, ইসলাম কেন কম নিরাপদ পুলিশ পেশায় যোগ দিলেন, তার কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন—“তিনি এমন কিছু রেখে যেতে চেয়েছিলেন, যা তাঁর পরিবার গর্ব করে স্মরণ করতে পারে।”
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
শেয়ার করুন