ট্রাম্পের নির্দেশে শিকাগোতে ৩০০ ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন
ছবিঃ এলএবাংলাটাইমস
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের শিকাগো শহরে ৩০০ ন্যাশনাল গার্ড সৈন্য মোতায়েনের অনুমোদন দিয়েছেন, যাকে তিনি “অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জরুরি পদক্ষেপ” বলে উল্লেখ করেছেন।
এই সিদ্ধান্ত আসে কয়েক ঘণ্টা পর, যখন অভিবাসন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শিকাগোতে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কর্মকর্তারা জানান, এক “সশস্ত্র নারী” গাড়ি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়িতে ধাক্কা দেওয়ার পর গুলিবিদ্ধ হন।
গভর্নরদের কড়া সমালোচনা
ইলিনয়ের গভর্নর জে বি প্রিটজকার ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে “সংকট তৈরি করার নাটক” বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “প্রেসিডেন্ট বাস্তব কোনো সমস্যা নয়, বরং নিজেই একটি সঙ্কট তৈরি করার চেষ্টা করছেন।”
এর আগে অরিগন অঙ্গরাজ্যের পোর্টল্যান্ডে ২০০ সৈন্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত ফেডারেল বিচারক কারিন ইমারগাট সাময়িকভাবে স্থগিত করেছিলেন। বিচারক রায়ে বলেন, প্রেসিডেন্টের বক্তব্য “তথ্যভিত্তিক নয়” এবং এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান লঙ্ঘন করছে।
তিনি আরও সতর্ক করে বলেন, “অঙ্গরাজ্যের সম্মতি ছাড়া সামরিক বাহিনী ব্যবহার করলে তা রাজ্যের সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি হয়ে দাঁড়ায় এবং পরিস্থিতিকে আরও উত্তেজিত করে।”
অরিগনের গভর্নর টিনা কোটেক আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “পোর্টল্যান্ডে কোনো বিদ্রোহ বা জাতীয় নিরাপত্তা হুমকি নেই। আসল হুমকি আমাদের গণতন্ত্রের প্রতি—আর সেটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বেই আসছে।”
নতুন আইনি লড়াইয়ের ইঙ্গিত
ট্রাম্প প্রশাসন ইতোমধ্যে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের নোটিশ দিয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউজম অভিযোগ করেন, আদালতের আদেশ অমান্য করে ট্রাম্প ক্যালিফোর্নিয়ার ৩০০ ন্যাশনাল গার্ড সদস্যকে অরিগনে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “আমরা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলা করব।”
শিকাগোতে টানটান পরিস্থিতি
শিকাগোতে সৈন্যরা ইতোমধ্যে পৌঁছেছে কিনা, তা স্পষ্ট নয়। তবে ধারণা করা হচ্ছে, এ মোতায়েনের বিরুদ্ধে আইনি চ্যালেঞ্জ উঠতে পারে।
গভর্নর প্রিটজকার জানান, ট্রাম্প টেক্সাস ন্যাশনাল গার্ডের ৪০০ সদস্যকেও ইলিনয়, অরিগন ও আরও কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবটকে আহ্বান জানান, “এই সিদ্ধান্তে কোনো সহযোগিতা না করতে।”
শিকাগো এখন যুক্তরাষ্ট্রের সেই সব শহরের তালিকায় যুক্ত হয়েছে যেখানে ট্রাম্প প্রশাসন বিতর্কিতভাবে সেনা মোতায়েন করছে—যার মধ্যে রয়েছে ওয়াশিংটন ডিসি, লস এঞ্জেলেস, মেমফিস এবং পোর্টল্যান্ড।
আইনি ও সাংবিধানিক প্রশ্ন
আইন অনুযায়ী, ন্যাশনাল গার্ড সাধারণত অঙ্গরাজ্যের গভর্নরের নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্ত ফেডারেল বনাম রাজ্য ক্ষমতার সীমা নিয়ে সাংবিধানিক বিতর্ক তৈরি করেছে।
হোয়াইট হাউসের দাবি
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র অ্যাবিগেইল জ্যাকসন বলেন, “শিকাগোতে সহিংস দাঙ্গা ও আইনহীনতা রোধ করতেই এই পদক্ষেপ। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমেরিকান শহরগুলোতে বিশৃঙ্খলা চলতে দেবেন না।”
গুলিবিদ্ধ নারী ও ঘটনার পটভূমি
শনিবার, সৈন্য মোতায়েনের ঠিক আগে, যুক্তরাষ্ট্রের বর্ডার প্যাট্রোল কর্মকর্তারা শিকাগোতে এক নারীকে গুলি করেন, যিনি গাড়ি নিয়ে অভিবাসন পুলিশের গাড়িতে ধাক্কা দেন। ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি (DHS) জানায়, ওই নারী সেমি-অটোমেটিক অস্ত্রে সজ্জিত ছিলেন।
সহকারী সচিব ট্রিসিয়া ম্যাকলাফলিন বলেন, “অস্ত্রধারী মার্কিন নাগরিককে আত্মরক্ষার অংশ হিসেবে গুলি করা হয়েছে।” নারীটি পরে নিজেই হাসপাতালে যান বলে জানা যায়।
সমালোচনা বাড়ছে
গভর্নর প্রিটজকার CNN-কে বলেন, “ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করবে। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে যুদ্ধক্ষেত্র তৈরি করছে, যেন আরও সৈন্য পাঠানোর অজুহাত পায়।”
সামরিক প্রশিক্ষণের নামে শহর নিয়ন্ত্রণ
ট্রাম্প সম্প্রতি সামরিক কর্মকর্তাদের বলেছেন, ডেমোক্র্যাট-নিয়ন্ত্রিত শহরগুলোকে “অভ্যন্তরীণ শত্রু মোকাবিলার প্রশিক্ষণ ক্ষেত্র” হিসেবে ব্যবহার করতে চান তিনি।
তিনি বলেন, “এই শহরগুলো খুবই বিপজ্জনক, আমরা একে একে সেগুলো ঠিক করে ফেলব।”
শিকাগোর অপরাধের বাস্তব চিত্র
ট্রাম্প দাবি করলেও, সাম্প্রতিক তথ্যে দেখা যাচ্ছে শিকাগোতে সহিংস অপরাধ গত দুই বছরে উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।
কাউন্সিল অন ক্রিমিনাল জাস্টিসের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত হত্যার হার গত বছরের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ হ্রাস পেয়েছে।
তবুও শহরের অপরাধের মাত্রা যুক্তরাষ্ট্রের গড়ের তুলনায় এখনো বেশি। গত শ্রমিক দিবসের সপ্তাহান্তে অন্তত ৫৮ জন গুলিবিদ্ধ হন, যার মধ্যে ৮ জন নিহত।
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
শেয়ার করুন