সরকারি কর্মীদের ছাঁটাই শুরু: প্রশাসনের ‘চাপের কৌশল’ হিসেবে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে ঝড়
ছবি: এলএবাংলাটাইমস
চলমান সরকার বন্ধের (shutdown) মধ্যে ডেমোক্র্যাটদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন হাজার হাজার ফেডারেল কর্মীকে ছাঁটাই করা শুরু করেছে।
শুক্রবার সকালে এক্স (পূর্বে টুইটার)-এ হোয়াইট হাউসের ম্যানেজমেন্ট ও বাজেট দফতরের পরিচালক রাসেল ভাউট লিখেছেন, “The RIFs have begun”, অর্থাৎ “ছাঁটাই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।” পরে তার দফতর নিশ্চিত করে জানায়, ছাঁটাইয়ের পরিমাণ “বড়সড়” এবং অন্তত সাতটি সরকারি সংস্থা মিলিয়ে ৪,০০০-এরও বেশি কর্মী এই পর্যায়ে চাকরি হারাচ্ছেন।
আইন অনুযায়ী, ফেডারেল সরকারকে কর্মীদের ছাঁটাইয়ের অন্তত ৩০ দিন আগে নোটিশ দিতে হয়। ট্রেজারি ও হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিসেস (HHS) মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে কর্মীদের নোটিশ পাঠাতে শুরু করেছে। এমনকি হোমল্যান্ড সিকিউরিটিতেও সাইবারসিকিউরিটি বিভাগে ছাঁটাইয়ের নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
তবে ছাঁটাইয়ের সুনির্দিষ্ট সংখ্যা এখনও প্রকাশ করা হয়নি।
এরই মধ্যে দুই বড় শ্রমিক সংগঠন—American Federation of Government Employees (AFGE) এবং AFL-CIO—এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছে। তারা নর্দান ক্যালিফোর্নিয়ার ফেডারেল আদালতে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা (temporary restraining order) চেয়েছে।
AFGE সভাপতি এভারেট কেলি এক বিবৃতিতে বলেন, “ট্রাম্প প্রশাসন সরকার বন্ধের অজুহাতে দেশের গুরুত্বপূর্ণ সেবাদানকারী হাজার হাজার কর্মীকে বেআইনিভাবে বরখাস্ত করছে—এটি লজ্জাজনক।”
সরকারি আইনজীবীরা পাল্টা যুক্তি দিয়ে বলেন, এই সিদ্ধান্ত সরকারের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রমের অংশ, যা আদালতের হস্তক্ষেপ ছাড়া পরিচালিত হওয়া উচিত।
আদালতে দাখিল করা নথিতে দেখা গেছে, প্রথম পর্যায়ে প্রায় ৪,৬০০ কর্মীকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে শুধু ট্রেজারি বিভাগেই ছাঁটাই হবে প্রায় ১,৪৪৬ জনের, এবং HHS-এ ১,১০০ থেকে ১,২০০ জন পর্যন্ত। শিক্ষা ও হাউজিং বিভাগে ৪০০ জন করে কর্মী চাকরি হারাচ্ছেন, আর বাণিজ্য, জ্বালানি ও হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগেও শতাধিক কর্মীকে ছাঁটাই করা হচ্ছে।
এছাড়া পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থা (EPA)-তে ২০-৩০ কর্মীকে ভবিষ্যৎ ছাঁটাইয়ের আগাম সতর্কতা দেওয়া হয়েছে।
এই ধরনের সিদ্ধান্ত মার্কিন ইতিহাসে নজিরবিহীন। আগে সরকার বন্ধ হলেও ছাঁটাই না করে কর্মীদের সাময়িক ছুটিতে পাঠানো হতো এবং সরকার পুনরায় চালু হলে তারা বকেয়া বেতন পেতেন। এবার প্রশাসন ইঙ্গিত দিয়েছে যে, ফার্লো (furlough) হওয়া কর্মীদের সেই বকেয়া বেতন হয়তো দেওয়া নাও হতে পারে।
বর্তমানে সরকার বন্ধ থাকার কারণে প্রায় ৭.৫ লাখ ফেডারেল কর্মী বেতনহীন অবস্থায় আছেন—যা মোট কর্মীবাহিনীর প্রায় ৪০ শতাংশ।
ডেমোক্র্যাট নেতা চাক শুমার এই পদক্ষেপকে বলেছেন, “ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভাউট ইচ্ছাকৃতভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন।” অপরদিকে রিপাবলিকানরা দাবি করছেন, ডেমোক্র্যাটরাই স্বাস্থ্যবীমা সংক্রান্ত ট্যাক্স ক্রেডিট ও মেডিকেইড কাটছাঁট রোধের অজুহাতে সরকারের কার্যক্রম আটকে রেখেছেন।
হোয়াইট হাউসের খরচ কমানো উদ্যোগ Department of Government Efficiency (DOGE)–এর অধীনে এ বছরই প্রায় ২.৯ লাখ ফেডারেল চাকরি বাতিল হয়েছে। এই উদ্যোগের নেতৃত্বে ছিলেন ধনকুবের ইলন মাস্ক।
ট্রাম্প প্রশাসনের বাজেট পরিচালক ভাউট আগেই জানিয়েছিলেন, “রাষ্ট্রপতির অগ্রাধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন” সব প্রোগ্রাম ও পদের ওপর পুনর্বিবেচনা চলবে।
একই দিনে ট্রাম্প ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ লেখেন, “আমরা ভাউটের সঙ্গে বৈঠক করেছি যাতে দেখা যায় কোন কোন ডেমোক্র্যাট-নিয়ন্ত্রিত সংস্থা আসলে রাজনৈতিক প্রতারণা, এবং এসব সংস্থা কতটা স্থায়ীভাবে বন্ধ করা যায়।”
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
শেয়ার করুন