যুক্তরাষ্ট্রে সরকার পুনরায় চালুর পথে: সেনেট পাস করল গুরুত্বপূর্ণ অর্থায়ন বিল
৪৩ বছর ভুল সাজা ভোগের পর মুক্ত ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তির যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসন স্থগিত
ছবিঃ এলএবাংলাটাইমস
যুক্তরাষ্ট্রের দুটি পৃথক আদালত ৪৩ বছর ধরে ভুলভাবে কারাগারে থাকা এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তির দেশান্তর বা নির্বাসন (ডিপোর্টেশন) স্থগিত করেছেন।
৬৪ বছর বয়সী সুব্রামনিয়াম “সুবু” বেদাম ১৯৮৩ সালে তাঁর প্রাক্তন রুমমেটকে হত্যার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন। কিন্তু চলতি বছরের অক্টোবরে নতুন প্রমাণের ভিত্তিতে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে মুক্তি পান।
তবে কারাগার থেকে বের হওয়ার পরপরই মার্কিন অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগ সংস্থা (ICE) তাঁকে আটক করে এবং ভারতে ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি নেয়।
বেদামের পরিবারের দাবি, যদিও তাঁর জন্ম ভারতে, তিনি মাত্র নয় মাস বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন স্থায়ী বাসিন্দা (লিগ্যাল পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট) এবং গ্রেফতারের আগেই তাঁর নাগরিকত্বের আবেদন অনুমোদিত হয়েছিল।
বর্তমানে তিনি লুইজিয়ানার আলেক্সান্দ্রিয়ায় একটি স্বল্পমেয়াদি আটক কেন্দ্রে আছেন, যেখানে সরাসরি বিমানযোগে নির্বাসনের ব্যবস্থা রয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার এক অভিবাসন আদালত তাঁর নির্বাসন স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন, যতক্ষণ না ইমিগ্রেশন আপিল বোর্ড (BIA) তাঁর পৃথক মাদক মামলার রায় পর্যালোচনা করার সিদ্ধান্ত নেয়। একই দিন, পেনসিলভানিয়ার একটি যুক্তরাষ্ট্র জেলা আদালতও তাঁর নির্বাসনের ওপর স্থগিতাদেশ দেন।
পটভূমি ও মামলার জটিলতা
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের তথ্য অনুযায়ী, বেদাম প্রথমে মাদক মামলায় গ্রেফতার হন, যখন পুলিশ তাঁর রুমমেটের মৃত্যুর তদন্ত করছিল। পরবর্তীতে তাঁকে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয় এবং দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
মাদক মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য তিনি ৪টি LSD বিক্রির অভিযোগ এবং একটি চুরির অভিযোগে ‘নো কনটেস্ট’ প্লিড করেন। ১৯৮৪ সালে তিনি ওই মামলায় সাড়ে দুই থেকে পাঁচ বছরের সাজা পান, যা আজীবন কারাদণ্ডের সঙ্গে একযোগে ভোগ করার নির্দেশ ছিল।
আইস গত মাসে তাঁকে গ্রেফতার করার সময় ১৯৮৮ সালের এক পুরোনো নির্বাসন আদেশ এবং মাদক মামলার দণ্ডকে ভিত্তি হিসেবে উল্লেখ করে। সংস্থাটি জানায়, হত্যার অভিযোগ থেকে মুক্তি পেলেও তাঁর মাদক সংক্রান্ত দোষ এখনো বহাল আছে, এবং তারা আইনসঙ্গত আদেশেই পদক্ষেপ নিয়েছে।
আইনি লড়াই ও পারিবারিক আবেদন
এখন বেদামের আইনজীবীদের অভিবাসন আদালতকে বোঝাতে হবে যে, তাঁর তরুণ বয়সে সংঘটিত মাদক মামলার তুলনায় ৪৩ বছরের ভুল কারাবাসের বিষয়টি অধিক গুরুত্ব পাওয়ার যোগ্য।
ইমিগ্রেশন আপিল বোর্ড তাঁর মামলা পুনর্বিবেচনা করবে কিনা, তা নির্ধারণ করতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে।
তাঁর অভিবাসন আইনজীবী আভা বেনাচ বলেছেন, “এই মামলা সত্যিই অসাধারণ। ২০ বছর বয়সে মাদক বহনের অভিযোগের চেয়ে ৪৩ বছরের ভুল কারাবাস অনেক বেশি শাস্তিস্বরূপ হয়েছে।”
বেদামের পরিবার জানায়, কারাগারে থাকাকালীন তিনি তিনটি ডিগ্রি অর্জন করেছেন, অনুকরণীয় আচরণ করেছেন এবং সামাজিক সেবামূলক কাজেও যুক্ত ছিলেন—এসব বিষয় আদালতের বিবেচনায় নেওয়া উচিত।
তাঁর পরিবারের মতে, বেদামের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক প্রায় নেই বললেই চলে। তাঁদের বক্তব্য, “এখন তাঁকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এমন এক দেশে পাঠানো, যেখানে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই, হবে আরেকটি ভয়াবহ অন্যায়, এমন একজন মানুষের প্রতি যিনি ইতোমধ্যেই ইতিহাসের অন্যতম দীর্ঘতম ভুল সাজা ভোগ করেছেন।”
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার করুন