মার্কিন ভিসামুক্ত দেশগুলোর পর্যটকদের পাঁচ বছরের সোশ্যাল মিডিয়া ইতিহাস জমা দেওয়ার প্রস্তাব
অস্টিনে কলেজছাত্রীর পরিবারকে লক্ষ্য করে ইমিগ্রেশন এজেন্টদের অভিযানে আতঙ্ক
ছবিঃ এলএবাংলাটাইমস
টেক্সাসের অস্টিনে সম্প্রতি দেশ থেকে বিতাড়িত এক কলেজছাত্রীর পরিবারকে লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন এজেন্টরা হাজির হওয়ায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। পরিবার ও তাদের আইনজীবীর দাবি, রোববার তিনটি অচিহ্নিত গাড়িতে করে এজেন্টরা তাদের বাড়ির সামনে আসে এবং কোনো ধরনের নোটিশ বা যোগাযোগ ছাড়াই বাড়ির আঙিনায় প্রবেশ করে চাপ সৃষ্টি করে।
১৯ বছর বয়সী অ্যানি লুসিয়া লোপেজ বেলোজা—ম্যাসাচুসেটসের ব্যাবসন কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী—থ্যাঙ্কসগিভিং উপলক্ষে পরিবারের জন্য সারপ্রাইজ হিসেবে অস্টিনে ফিরছিলেন। কিন্তু ২০ নভেম্বর বোস্টনের লোগান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা তাকে আটক করে এবং দুই দিন পরই তাকে হন্ডুরাসে ফেরত পাঠানো হয়। সেখানে তিনি ও তার পরিবার এক দশকেরও বেশি আগে সহিংসতার কারণে পালিয়ে এসেছিলেন।
ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ দাবি করে, ২০১৫ সালের একটি পুরনো ডিপোর্টেশন অর্ডারের ভিত্তিতে তাকে দেশ থেকে সরানো হয়েছে। তবে তার আইনজীবী টড পোমারলো জানান, তিনি এমন কোনো আদেশের রেকর্ড পাননি। বরং ২১ নভেম্বর ফেডারেল কোর্টের এক আদেশ অনুযায়ী, মামলার শুনানি চলাকালীন অ্যানিকে দেশ থেকে বের করে দেওয়া সম্পূর্ণ বেআইনি ছিল।
রোববার কেন ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইসিই) এনফোর্সমেন্ট অ্যান্ড রিমুভাল অপারেশন (ই.আর.ও) ইউনিট লোপেজ পরিবারের বাড়িতে গেল, তা পরিষ্কার নয়। তবে অ্যানি ও তার বাবা সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যমে তাদের অভিজ্ঞতা প্রকাশ করেছিলেন, যা হয়তো পরিবারের দিকে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
বাবা ফ্রান্সিস লোপেজ জানান, তিনি গাড়ি ধুচ্ছিলেন—এ সময় একটি সাদা ট্রাক বাড়ির সামনে ঘোরাঘুরি করছিল। পরে আরও দুটি গাড়ি আসে এবং সবুজ ভেস্ট পরা এক কর্মকর্তা হঠাৎ দৌড়ে তার দিকে আসেন। কোনো কথা না বলেই কর্মকর্তা গেটে ঢুকে পেছনের আঙিনায় প্রবেশ করেন। লোপেজ দ্রুত ঘরে ঢুকে দরজা লক করে দেন। প্রায় দুই ঘণ্টা অবস্থানের পর কোনো যোগাযোগ ছাড়াই এজেন্টরা চলে যায়।
“আমরা ভীত,” বলেন ফ্রান্সিস লোপেজ। “বিশেষ করে আমাদের ছোট মেয়েদের জন্য।”
লোপেজ পরিবার প্রায় ১২ বছর আগে হন্ডুরাসের সান পেদ্রো সুলার অপরাধ বৃদ্ধি থেকে বাঁচতে যুক্তরাষ্ট্রে আসে। অ্যানি তখন ছোট; পরে পরিবারটি আশ্রয়ের আবেদন করলেও তা প্রত্যাখ্যান হয়। পরিবারটির দাবি, তারা কখনো কোনো ডিপোর্টেশন অর্ডারের নোটিশ পায়নি।
পরিবারের আইনজীবী ক্রিস্টিন এতার বলেন, “এজেন্টদের কাছে কোনো পরোয়ানা ছিল না। কোনো অপরাধমূলক মামলা নেই—তাহলে কীসের পরোয়ানা?”
অ্যানির দুই ছোট বোন—৫ ও ২ বছর বয়সী—উভয়েই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসম্যান গ্রেগ কাসার বলেন, “ট্রাম্প প্রশাসন একজন কলেজছাত্রীর পরিবারকে ভয় দেখাতে টার্গেট করছে, কারণ ওই ছাত্রী সরকারের অন্যায় আচরণ সম্পর্কে প্রকাশ্যে বলেছে।”
বোস্টন বিমানবন্দরে আটক হওয়ার সময় অ্যানিকে জানানো হয় যে পুরনো ডিপোর্টেশন অর্ডারের কারণে তাকেই ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তিনি ডিএসিএ—ডাকাদের জন্য ঘোষিত বিশেষ সুরক্ষা কর্মসূচি—পেতে যোগ্য ছিলেন না কারণ তিনি নির্ধারিত সময়ের পরে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন।
তার এই ভ্রমণ ছিল পরিবারের জন্য উপহারস্বরূপ। লোপেজের কর্মস্থলের মালিক ও তার স্ত্রী টিকিটের খরচ বহন করেছিলেন। বিমানবন্দরে তার টিকিট কাজ না করায় তিনি হেল্প ডেস্কে গেলে ইমিগ্রেশন এজেন্টরা তাকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে—এভাবেই শুরু হয় আটক ও পরবর্তী বিতাড়নের ঘটনা।
এই ঘটনাকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন নীতির বিস্তৃত কঠোরতা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার করুন