মার্কিন ভিসামুক্ত দেশগুলোর পর্যটকদের পাঁচ বছরের সোশ্যাল মিডিয়া ইতিহাস জমা দেওয়ার প্রস্তাব
বস্টনে কয়েক দেশের অভিবাসীদের নাগরিকত্ব শপথ স্থগিত
ছবিঃ এলএবাংলাটাইমস
বস্টনের ফ্যানেউইল হলে গত সপ্তাহে নির্ধারিত নাগরিকত্ব শপথ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে এসে বহু অভিবাসী হঠাৎই জানতে পারেন—তাদের শপথ গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, তাদের জন্মভূমি যুক্তরাষ্ট্রের নির্ধারিত “উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ” ১৯টি দেশের তালিকার মধ্যে রয়েছে।
একই পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যেও দেখা যাচ্ছে।
মার্কিন নাগরিকত্ব ও অভিবাসন সেবা (USCIS) তাদের কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছে এ ১৯ দেশের নাগরিকদের সবধরনের অভিবাসন সুবিধার প্রক্রিয়া আপাতত স্থগিত রাখতে। তালিকায় আফগানিস্তান, কিউবা, ভেনেজুয়েলা, হাইতি ও সোমালিয়ার মতো দেশ রয়েছে।
নাগরিকত্ব অর্জনের শেষ ধাপ হলো শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান—যা সাধারণত বহু বছরের জটিল প্রক্রিয়া শেষে সম্পন্ন হয়।
ম্যাসাচুসেটস ইমিগ্রান্ট অ্যান্ড রিফিউজি অ্যাডভোকেসি কোয়ালিশন (MIRA) জানিয়েছে, তাদের সহায়তায় থাকা ৪৫ জনের মধ্যে অন্তত পাঁচজনের শপথ অনুষ্ঠান হঠাৎই বাতিল হয়েছে। বাকি ৪০ জন এখন চরম অনিশ্চয়তায় আছেন।
MIRA–র নির্বাহী পরিচালক এলিজাবেথ সুইট বলেন,
“দীর্ঘ ভেটিং, ইন্টারভিউ ও পরীক্ষার পর শপথ অনুষ্ঠানের ঠিক আগে বাতিল হওয়া অত্যন্ত নির্মম ও অমানবিক। মানুষ ভেঙে পড়েছে, হতাশ হয়েছে, এবং এতে তাদের ক্ষোভ ও উদ্বেগ দুটোই বেড়েছে।”
অনেকের কাছে অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে বাতিল হওয়ার নোটিশ পৌঁছেছে, কিন্তু সেখানে অতিরিক্ত কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। প্রজেক্ট সিটিজেনশিপ জানিয়েছে, তাদের বেশ কিছু ক্লায়েন্টও একই পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন।
এমনকি কেউ কেউ অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছে দরজায় দাঁড়িয়ে জানতে পারছেন যে তারা শপথ নিতে পারবেন না। প্রজেক্ট সিটিজেনশিপের নির্বাহী পরিচালক গেইল ব্রেসলো জানান, তাদের ৫৫ বছর বয়সী এক হাইতিয়ান নারী, যিনি ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বাস করছেন, অনুষ্ঠানস্থলে গিয়ে এ কথা শুনে ভেঙে পড়েন।
“দরজায় দাঁড়িয়ে কাউকে ফিরিয়ে দেওয়া ঘৃণ্য আচরণ,” বলেন ব্রেসলো।
একই অভিজ্ঞতার কথা জানান কানেকটিকাটের কিউবা–জন্ম মোইসেস। তিনি ১৭ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন এবং বর্তমানে অবসরের প্রস্তুতি ও হার্ট সার্জারির অপেক্ষায় আছেন। তিনি বলেন,
“যারা এই দেশের উন্নতিতে ভূমিকা রাখতে এসেছে, তাদের প্রতি সরকার যেন সহানুভূতিশীল হয়—এই আমার অনুরোধ।”
বস্টন মেয়র মিশেল উ–ও এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন,
“এটি বর্বর আচরণ। বিশেষত বস্টনের ফ্যানেউইল হলে—যা স্বাধীনতার প্রতীক—এ ধরনের ঘটনা অত্যন্ত বেদনাদায়ক।”
নাগরিকত্ব প্রক্রিয়া সাধারণত তিন থেকে পাঁচ বছর সময় নেয় এবং এতে আবেদন, ইন্টারভিউ, পরীক্ষা এবং উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ফি যুক্ত থাকে। নাগরিকত্ব পাওয়ার পর একজন ব্যক্তি স্বাধীনভাবে ভ্রমণ, ভোট প্রদান এবং পরিবার সদস্যদের জন্য আবেদন করার সুযোগ পান।
USCIS জানিয়েছে, নতুন নিরাপত্তা জোরদারের অংশ হিসেবে এই “অস্থায়ী স্থগিতাদেশ” নেওয়া হয়েছে, যাতে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর আবেদনকারীদের সর্বোচ্চ পর্যায়ে যাচাই–বাছাই করা যায়।
এজেন্সির বিবৃতিতে বলা হয়েছে,
“আমেরিকান জনগণের নিরাপত্তা সর্বাগ্রে। উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর সকল আবেদন পুনর্গঠন ও গভীরভাবে পরীক্ষা করার জন্যই এই বিরতি।”
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার করুন