আপডেট :

        “ফরিদপুরে এ.কে. আজাদ বাড়িতে বিএনপি মিছিল নিয়ে চড়াও, গণসংহতি আন্দোলনের তীব্র প্রতিবাদ

        ক্লাব বিশ্বকাপে খেলায় Musiala ইনজুরিতে পরাজিত বায়ার্ন — PSG সেমিতে জয়ী

        করোনা ও ডেঙ্গুর সংক্রমণ বাড়ছে: একদিনে ২৯৪ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত, একজনের মৃত্যু

        “সাইফুল হক: রাজনৈতিক মতপার্থক্যের মধ্যেও জাতীয় ঐক্য বজায় রাখতে হবে”

        পাওয়ার প্লেতে ব্যাটিং-ঝড় তোলায় দম বন্ধ করা পরিবেশ

        কার ওপর ক্ষোভ ঝাড়লেন শ্রীলেখা

        “পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অভিযানে আফগান সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ৩০ সদস্য নিহত”

        টেকনাফে ভারী বর্ষণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ ১৫০০ ঘরবাড়ি ডুবে গেছে

        ঢাকাতে উল্টো পথে রথ টেনে সম্পন্ন রথ উৎসব—ভক্তদের আনন্দ ও ধর্মীয় আবেগের মেলবন্ধন

        সংরক্ষণ ব্যবস্থা উন্নয়নের মাধ্যমে আমদানি নির্ভরতা কমানোর উদ্যোগ

        “দীর্ঘ মন্দা ভেঙে ঢেউ উঠছে: ১১ মাস পর শেয়ারদরের পুনর্গতি”

        “পবিত্র আশুরা উদযাপন শুরু—কারবালার শোক ও উপবাসের দিন আজ”

        “পবিত্র আশুরা উদযাপন শুরু—কারবালার শোক ও উপবাসের দিন আজ”

        “মঈন খান: ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে গুম-হত্যা ছিল রুটিন কাজ”

        মালয়েশিয়া ‘জঙ্গি’ সন্দেহে ৩৬ বাংলাদেশি গ্রেপ্তার; ঢাকা দিচ্ছে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি

        মালয়েশিয়া পুলিশের সতর্কতা: ভাঙলেও বাংলাদেশের জঙ্গি হুমকি মুছে যায়নি

        এশিয়ান কাপ বাছাই শেষ করল বাংলাদেশ নারী দল

        স্কুলে মোবাইল নিষেধাজ্ঞা কার্যকর: নেদারল্যান্ডে ফোকাস ও ফলাফলে বৃদ্ধি

        মঈন খান আ’লীগকে ‘পলায়নকারী শক্তি’ বললেন

        কাদের গনি চৌধুরী: ভারতের পুশ-ইন কৌশল বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি

পর্দাকাণ্ডে দুর্নীতির প্রমাণ পাচ্ছে দুদক

পর্দাকাণ্ডে দুর্নীতির প্রমাণ পাচ্ছে দুদক

ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আলোচিত পর্দাসহ ১৬৬ চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনাকাটায় দুর্নীতির প্রমাণ পেতে শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

এ বিষয়ে অন্তত অর্ধডজন মামলা হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। প্রথম অবস্থায় হাসপাতালের ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ক্রয়কৃত ১০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ক্রয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতিতে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে সংস্থাটির অনুসন্ধান টিম।

চিকিৎসা সরঞ্জামাদি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স অনিক ট্রেডার্স ও ফরিদপুর মেডিক‌্যাল কলেজ হাসপাতালের সাবেক ও বর্তমান মিলিয়ে কনসালটেন্ট, তত্ত্বাবধায়ক, সিভিল সার্জন পদমর্যাদার অন্তত ১২ জন আসামি হতে যাচ্ছেন। যাদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছে দুদক।

একটি সূত্রে জানা যায়, অনুসন্ধানের স্বার্থে গত ১১, ১২ ও ১৩ নভেম্বর ফরিদপুর মেডিক‌্যাল কলেজ হাসপাতালের ১২ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। যাদের অধিকাংশরাই আগত মামলার আসামি হতে যাচ্ছেন। যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল তারা হলেন- ফরিদপুর মেডিক‌্যাল কলেজ হাসপাতালের প্যাথলিজিস্ট ডা. এএইচএম নুরুল ইসলাম, জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনী) ডা. মিনাক্ষী চাকমা, অধ্যাপক (সার্জারি) ডা. এসএম মুসতানজীদ, সহযোগী অধ্যাপক (ডেন্টাল) ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডা. গণপাতি বিশ্বাস, সহযোগী অধ্যাপক (শিশু বিভাগ) ডা. বরুন কান্তি বিশ্বাস, সহকারী প্রকৌশলী মিয়া মোর্তজা হোসেন, সিনিয়র কনসালট্যান্ট (চক্ষু বিভাগ) ডা. মো. এনামুল হক, অধ্যাপক (মেডিসিন) ডা. শেখ আবুল ফাত্তাহ, সহযোগী অধ্যাপক (সার্জারি) ডা. মো. মিজানুর রহমান, সাবেক প্রকল্প পরিচালক ডা. এবিএম শামছুল আলম এবং ফরিদপুরের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. এ কেএম গোলাম ফারুক ও সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা অফিসার মো. আলমগীর ফকির।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ক্রয়কৃত চিকিৎসা সরঞ্জামাদি ও মালামাল ক্রয়ের দরপত্র, তালিকা ও অন্যান্য নথিপত্র যাচাই-বাছাই করে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। অনুসন্ধান প্রতিবেদন তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। শিগগিরই কমিশনের অনুমোদনক্রমে মামলা দায়ের করবে দুদক।

এ বিষয়ে দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখতের কাছে জানতে চাইলে অনুসন্ধান চলমান অবস্থায় কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন তিনি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১০ কোটি টাকার চিকিৎসা সরঞ্জামাদি ও মালামাল সরবরাহ করে মেসার্স অনিক ট্রেডার্স। ২০১৪ মোতাবেক কার্যাদেশ অনুযায়ী মেসার্স অনিক ট্রেডার্স ২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর ১০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ও মালামাল সরবরাহ করে। যা বাজার মূল্যের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি মূল্য নির্ধারণের প্রমাণ মিলেছে।

শুধু তাই নয়, দুদকের সরেজমিন অনুসন্ধানে ক্রয়কৃত যন্ত্রপাতির মধ্যে দুয়েকটি যন্ত্রপাতি ছাড়া বেশিরভাগই তালাবদ্ধ ভবনের রুম, স্টোর রুম ও আলমারিতে পাওয়া গেছে।

ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজের যন্ত্রপাতি ক্রয় নিয়ে মিডিয়ায় বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশের পর আলোচিত উচ্চ আদালত থেকে চলতি বছরের ২০ আগস্ট অনুসন্ধান করার জন্য দুদককে নির্দেশনা দেয়া হয়।

নির্দেশনা পাওয়ার পরপরই ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে জনসম্মুখ থেকে রোগীকে আড়াল রাখার জন‌্য যে পর্দা দরকার- আলোচিত সাড়ে ৩৭ লাখ টাকার সেই পর্দাসহ ১৬৬ চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনাকাটায় দুর্নীতির রহস্য উন্মোচনে মাঠে নামে দুর্নীতি বিরোধী সংস্থাটি। অভিযোগ অনুসন্ধানে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে সরেজমিনে ফরিদপুর যায় দুদকের বিশেষ টিম।

অভিযোগের বিষয়ে জানা যায়, ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে রোগীকে আড়াল করে রাখার এক সেট পর্দার দাম দেখানো হয় ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা।  ২০১২ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে মেসার্স অনিক ট্রেডার্স অতিরিক্ত বিল দেখিয়ে ৫২ কোটি ৬৬ লাখ ৭১ হাজার ২০০ টাকার ১৬৬টি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে।  যেখানে প্রকৃত বাজার মূল্য ১১ কোটি ৫৩ লাখ ৪৬৫ টাকা। এরই মধ্যে অনিক ট্রেডার্স ৪১ কোটি ১৩ লাখ ৭০ হাজার ৭৩৭ টাকার বিল উত্তোলন করে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরো ১০ কোটি টাকার বিল বিভিন্ন অসঙ্গতির কারণে আটকে দেয়া হয়। বিল পেতে ২০১৭ সালের ১ জুন অনিক ট্রেডার্স হাইকোর্টে রিট করে। এরপরই মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের কাছে ১০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতির তালিকা চেয়ে পাঠান। পরবর্তীতে বিষয়টি অনুসন্ধানে দুদককে নির্দেশনা দেয় হাইকোর্ট।

পর্দা ছাড়াও তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা দামের একেকটি স্টেথোস্কোপের জন‌্য খরচ দেখানো হয় এক লাখ সাড়ে ১২ হাজার টাকা। ১০ হাজার টাকার ডিজিটাল ব্লাডপ্রেশার মাপার মেশিন কেনা হয় ১০ লাখ ২৫ হাজার টাকায়। অব্যবহৃত আইসিইউয়ের জন্য অক্সিজেন জেনারেটিং প্ল্যান্টের দাম পাঁচ কোটি ২৭ লাখ টাকা। খোদ জাপান থেকে আনলেও এর খরচ সর্বোচ্চ ৮০ লাখ টাকা হতে পারে বলে মনে করে সংশ্লিষ্টরা। অথচ প্ল্যান্টটি বন্ধ রুমটির দেয়ালে শ্যাওলা পড়ে নোনা ধরে স্যাঁতসেঁতে অবস্থায় পড়ে রয়েছে।

বিআইএস মনিটরিং প্ল্যান্ট স্থাপনে খরচ হয় ২৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। যেখানে বাজার দাম ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। এভাবে প্রায় ১৮৬ গুণ পর্যন্ত বেশি দাম দিয়ে ১৬৬টি যন্ত্র ও সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে মেসার্স অনিক ট্রেডার্স। জনবলের অভাবে অধিকাংশ যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে পড়ে আছে।

দুদকের উপ-পরিচালক শামছুল আলমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি টিম অভিযোগুলো অনুসন্ধান করছে। টিমের অপর সদস্যরা হলেন- দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক মো. সহিদুর রহমান ও ফেরদৌস রহমান।

১৯৭৯ সালে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পাশে পশ্চিম খাবাসপুর ও হারোকান্দি এলাকায় প্রথমে ২০০ শয্যা দিয়ে হাসপাতালটির যাত্রা শুরু। এরপর ১৯৯৫ সালে ২৫০ শয্যা ও বর্তমানে ৭৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়।

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত