গাজা যুদ্ধ: ইইউ-এর ভূমিকা প্রকাশ্যে, দায়িত্ববিমুখতার নতুন অজুহাত উঠে আসছে
সিম নিবন্ধনে আঙুলের ছাপ নিয়ে বিড়ম্বনা
বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন বিষয়ে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। ৩০ এপ্রিল রাত ১০টা পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু নিজের সিমও অনেকে নিবন্ধন করতে পারছেন না আঙুলের ছাপ না মেলায়। এক্ষেত্রে ভোটার কার্ডসহ অনেকেই ছুটছেন নির্বাচন কমিশনে (ইসি)।
ইসি’র বক্তব্য হচ্ছে, জাতীয় পরিচয়পত্র যখন তৈরি করা হয়, তখন আঙুলের ছাপ নেওয়ার মেশিন খুব একটা আপডেট ছিল না। যার কারণে হয়তো কিছু সংখ্যক লোকের আঙুলের ছাপ বাতিল হয়ে যায়। আবার অনেকের আঙুলের ছাপ পরিচয়পত্রের সঙ্গে মিলছে কিন্তু তাদের হয়তো নিবন্ধনে ঝামেলা হচ্ছে।
এ ধরনের বিষয়ে ইসির অভিজ্ঞতা হচ্ছে, হয়তো ওসব সিমের কাগজে সঠিক আঙুলের ছাপ নেয়া হয়নি। যেমন, কিছু সিম দোকানদাররা নিজেরা রেজিস্ট্রেশন করে কাগজপত্র অপারেটরদের কাছে পাঠিয়েছে, যেগুলোতে নিজেরাই আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে রেখেছে। এসব গ্রাহকরাও এখন ছুটে আসছেন ইসিতে।
ইসির কর্মকর্তারা জানান, ২০০৭ সালে সেনাবাহিনীর সহায়তায় যখন ছবি ও আঙুলের ছাপসহ জাতীয় পরিচয়পত্রের কাজ শুরু হয় তখন ছাপ নেওয়ার মেশিন খুব একটা আপডেট ছিল না। তবে এখন মেশিন আগের থেকে অনেক আপডেট।
আরেকটি বিষয় তারা জানান, অনেক বৃদ্ধ লোক আছেন যারা নিয়মিত পান খান এবং আঙুলের মাথায় চুন লাগিয়ে খান। তাই তাদের আঙুলের রেখা ভালোভাবে তখন আসেনি। এই কারণেও হয়তো অনেকেরই ছাপ এখন মিলছে না।
তারা মোবাইল টেলিফোন অপারেটরদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, বর্তমানে যে সকল সিম অপারেটর আঙুলের ছাপ নিয়ে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন করছেন তাদের মেশিনও আপডেট না। যার কারণে অনেকের আঙুলের ছাপ মিলছে না আর তারা নির্বাচন কমিশন অফিসে ছুটে আসছেন। কিন্তু আমাদের এখানে তাদের ছাপ নিলে সঙ্গে সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। তাই এক্ষেত্রে বলা যায় যে, সিম কোম্পানিগুলোর মেশিন আপডেট না।
নিবন্ধনের জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) বেঁধে দেয়া সময় পর্যন্ত ইসি তাদের পরিচয়পত্রের বর্ধিত সেবা চালু রাখার ঘোষণা দিয়েছে।
বুধবার বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে মোবাইল ফোনের সিম নিবন্ধনের জন্য যদি কারো আঙুলের ছাপ আপডেট করার প্রয়োজন পড়ে, সেক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের মধ্যেও সেবা অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন।
নির্দেশনার অংশ হিসেবে জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত সেবা প্রদান করার জন্য প্রত্যেক উপজেলায় দু’জন করে অপারেটর প্রেরণ করা হয়েছে।
জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহউদ্দিন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘গ্রাহক হয়রানি কমাতে কেন্দ্রীয়ভাবে আগারগাঁওয়ে এবং নির্বাচন কমিশনের যে কোনো উপজেলা অফিসে গিয়ে আঙুলের ছাপ হালনাগাদের কাজ সিম পুনঃনিবন্ধনের কাজ শুরুর পর থেকেই চালু করা হয়েছে। এমনকি এক এলাকার ভোটার যেন অন্য এলাকার নির্বাচন অফিসে আঙুলের ছাপ দিতে পারে সে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনের প্রধান কার্যালয় থেকে শুরু করে আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতেও এ ব্যাপারে লোকজনের আনাগোনা বেড়েছে।
ডেমরা থানা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রেজিস্ট্রেশন অফিসার মোহাম্মদ সাইদুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমার এলাকায় প্রায় ৭ লাখ ভোটার রয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্রে আঙুলের ছাপ না থাকায় প্রতিদিন অনেক নাগরিক ছাপ হালনাগাদ করতে আমার এখানে আসেন।’
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ২৫৬টি এই সংক্রান্ত আবেদন জমা হয় তার কার্যালয়ে। তিনি বলেন, ‘তাছাড়া কিছু কিছু স্থানে আমি দেখেছি রাস্তার পাশে ও কোন শপিং মলের সামনে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন করা হচ্ছে। কিন্তু যারা এই সিম নিবন্ধন করছেন ছাপ নিয়ে তাদের মধ্যে অনেকেই জানেন না যে, কীভাবে আঙুলের ছাপ নিতে হয়। সিম কোম্পানিগুলো অদক্ষ কর্মীদের দ্বারা এই কাজ করার কারণে জনগণ ও আমরা হয়রানির শিকার হচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘আমার এলাকা অনেক বড়। তাই প্রতিদিন সকাল থেকে প্রচুর লোক আসে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের জন্য। তাই তাদের সামলাতেই আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। এখন আবার তাদের পাশাপাশি আঙুলের ছাপ হালনাগাদের জন্যও আসায় নাওয়া-খাওয়া সব এক হয়ে গেছে।’
আঙুলের ছাপ হালনাগাদ করতে এলে সঙ্গে সঙ্গে কি তাদের ছাপ নেওয়া হয়- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না আগে নির্দিষ্ট ফরম পুরণ করে আমাদের কাছে আবেদন জমা দিতে হবে। তারপর আমরা একটা তারিখ নির্ধারণ করে তাদের আসতে বলা হয়। নির্ধারিত দিনে তারা এলে তাদের আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়।’
শেয়ার করুন