গাজা যুদ্ধ: ইইউ-এর ভূমিকা প্রকাশ্যে, দায়িত্ববিমুখতার নতুন অজুহাত উঠে আসছে
গাজা যুদ্ধ: ইইউ-এর ভূমিকা প্রকাশ্যে, দায়িত্ববিমুখতার নতুন অজুহাত উঠে আসছে
গাজা যুদ্ধের সময় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) কেবল ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের সঙ্গেই জড়িত ছিল না, বরং তারা এখন মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনার অজুহাতে ইসরায়েলকে শাস্তি দেওয়ার দায়িত্ব এড়াতে চাইছে। বুধবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের নিবন্ধে এ কথা বলা হয়েছে।
গার্ডিয়ানের বিশ্লেষক নাতালি টুচি তার নিবন্ধে গাজায় জায়নবাদী ইসরায়েলের অপরাধযজ্ঞে ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনামূলক আলোচনা করেছেন। তিনি এই নিষ্ক্রিয়তা ও সহযোগিতার নিন্দা করেছেন।
তার নিবন্ধের শিরোনাম 'গাজা যুদ্ধে ইইউ জড়িত ছিল: ট্রাম্পের পরিকল্পনা এখন দায়িত্ব এড়ানোর অজুহাত হতে পারে না'।
তিনি লিখেছেন, গাজায় এই শতাব্দীর সবচেয়ে বিপর্যয়কর মানবিক সংকটের মধ্যে পশ্চিমা শক্তিগুলোর, বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের নীরবতা ও নিষ্ক্রিয়তা কেবল প্রশ্নবিদ্ধই নয়, স্পষ্টত উদ্বেগজনকও। শিশু ও নারীসহ হাজার হাজার ফিলিস্তিনি বেসামরিক মানুষ জায়নবাদী ইসরায়েলের অবিরাম আক্রমণের শিকার হলেও, পশ্চিমা প্রতিক্রিয়া এই অপরাধগুলোকে কেবল বৈধতাই দেয়নি বরং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবেই বেশি ভূমিকা পালন করেছে।
গার্ডিয়ানের শীর্ষস্থানীয় বিশ্লেষক গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ের বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করে ইউরোপকে এমন এক খেলোয়াড় হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যারা অপরাধ বন্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করার পরিবর্তে যুদ্ধবিরতিকে নৈতিক ও আইনি দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করেছে।
নাতালি টুচি সঠিকভাবে ইউক্রেন যুদ্ধ এবং গাজা যুদ্ধের প্রতি ইউরোপের আচরণের স্পষ্ট দ্বন্দ্ব তুলে ধরেছেন। তিনি লিখেছেন, ইউরোপ দৃঢ়তার সঙ্গে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, কিন্তু ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতীকী চাপ প্রয়োগ করতেও অস্বীকার করে। এটি করে ইউরোপীয় সরকারগুলো তাদের সবচেয়ে খারাপ রূপ দেখিয়েছে। তারা বিভক্ত এবং তাদের রাজনৈতিক বিভক্তির ফলে নীতিগত পক্ষাঘাত দেখা দিয়েছে।
বিশ্লেষক ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজার জন্য প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে লিখেছেন, এই পরিকল্পনা ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার ভূমিকার পরিবর্তে ইউরোপের জন্য দায়িত্ব এড়ানোর হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এই পরিকল্পনার আশ্রয় নিয়ে ইউরোপ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা প্রয়োগ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে এবং চরমপন্থী ইসরায়েলি মন্ত্রীদের নিষেধাজ্ঞার জন্য ইউরোপীয় কমিশনের হালকা প্রস্তাবগুলোও বাস্তবায়ন করেনি।
নাটালি টুচি আরও বলেছেন, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার রক্ষার দাবিদার এমন একটি বিশ্বে গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তা কেবল অযৌক্তিকই নয়, বরং এর অপরাধীদের সঙ্গে স্পষ্ট সহযোগিতাও।
তিনি উল্লেখ করেন, ইউরোপ এবং আমেরিকার জানা উচিত যে, ইতিহাস নিপীড়নের মুখে নীরবতাকে ভুলে যাবে না এবং পশ্চিমারা যদি তথাকথিত নৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা পেতে চায়, তাহলে দ্বিচারিতা থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখতে হবে। সেই সঙ্গে গাজায় অপরাধের জন্য জায়নবাদী সরকারকে দৃঢ়ভাবে জবাবদিহি করতে হবে।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন