আপডেট :

        নিউইয়র্কের পেন স্টেশনে নবজাতক ফেলে যাওয়া মা গ্রেপ্তার

        অভিষেকে ৫ উইকেট ‘বুড়ো’ আফ্রিদির

        উবার ও লিফট চালকদের জন্য বাধ্যতামূলক ইউনিয়ন আলোচনার আইন পাশ করলো ক্যালিফোর্নিয়া

        যমুনায় এনসিপির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ: ছাত্র-নাগরিক দলের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা

        দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় সাবেক প্রেমিকাকে হত্যার দায়ে দম্পতির কারাদণ্ড

        ভয়াবহ ফ্রিওয়ে দুর্ঘটনায় অন্তত ৩ জন নিহত, ট্রাক চালক মাদকাসক্ত অবস্থায় গ্রেপ্তার

        পুতিনের সঙ্গে বৈঠক স্থগিত করল হোয়াইট হাউস, ‘সময় নষ্ট’ করতে চান না ট্রাম্প

        ট্রাম্পের হোয়াইট হাউস বলরুম নির্মাণে কে দিচ্ছেন অর্থ? ঘিরে রহস্য ও বিতর্ক

        পুতিনের সঙ্গে বৈঠক স্থগিত করল হোয়াইট হাউস

        অশোভন বার্তা ফাঁসের পর ট্রাম্পের মনোনীত প্রার্থী পল ইঙ্গ্রাসিয়ার পদত্যাগ

        এইচ-১বি ভিসাধারী কর্মী নিয়োগ বন্ধ রাখলো ওয়ালমার্ট

        ম্যাকগাইভার এখন কোথায়?

        হোয়াইট হাউসের একাংশ ভেঙে ফেলছেন ট্রাম্প

        LAX-এর টার্মিনাল ৫-এ পরিবর্তন, ২০২৮ অলিম্পিকের জন্য সংস্কার শুরু

        ক্যালিফোর্নিয়ার কম্পটনে নারী ক্রেতার গুলিতে দোকানে এক ব্যক্তি নিহত

        মাত্র ২৯ বছর বয়সে প্রয়াত আমেরিকান দাবা গ্র্যান্ডমাস্টার ড্যানিয়েল নারডিটস্কি

        ইসরায়েল সফরে ভ্যান্স, যুদ্ধবিরতি ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্বেগ

        আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য ‘তৃতীয় নিরাপদ দেশ’ হিসেবে কাজ করতে সম্মত হলো বেলিজ

        চীনের আধিপত্য রুখতে বিরল খনিজ সরবরাহে যুক্তরাষ্ট্র–অস্ট্রেলিয়া ঐতিহাসিক চুক্তি

        চোখে মাইক্রোচিপ বসিয়ে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাচ্ছেন দৃষ্টিহীনেরা

ছেলে হারানোর এক মাস পেরিয়ে গেল, আমি তো ঠিকই বেঁচে আছি

ছেলে হারানোর এক মাস পেরিয়ে গেল, আমি তো ঠিকই বেঁচে আছি

‘আন্দোলনে যেতে আলভির বাবা উৎসাহ দিলেও আমি বলতাম- না বাবা, তুমি যেও না, তুমি আমার একটাই ছেলে, তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি বাঁচব না। আজ ছেলে হারানোর এক মাস পেরিয়ে গেল, আমি তো ঠিকই বেঁচে আছি! কিন্তু কীভাবে যে বেঁচে আছি, তা বুঝিয়ে বলতে পারব না; মনে হয় জীবিত লাশ হয়ে বেঁচে আছি’—কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিলেন বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনে শহিদ হওয়া শাহরিয়ার হাসান আলভির মা সালমা বেগম।


মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বরের কাছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে ৪ আগস্ট নিহত হয় আলভি। কালশীর দেশ পলিটেকনিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র মো. শাহারিয়ার হাসান আলভি। বয়স হয়েছিল মাত্র ১৫ বছর। বাবা মো. আবুল হাসান এক জন ক্ষুদ্র্র ব্যবসায়ী। মা সালমা বেগম গৃৃহিণী, তবে ঘরে বসেই কিছু সেলাইয়ের কাজ করেন। আলভির আট বছর বয়সি ছোট এক বোন আছে। সে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। আলভির গ্রামের বাড়ি খুলনা বাগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জে।


গত বৃহস্পতিবার বিকালে আলভির মিরপুরের বাসায় বসে কথা হয় তার মা সালমা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, সেদিন ছিল ৪ আগস্ট রবিবার, বেলা ১১টার দিকে ঘুম থেকে উঠেই বলে, মা আমি একটু আসছি। এরপর সে বাসায় ফেরে ৩টা সাড়ে ৩টার দিকে। আমি একটু ঘুমিয়ে পড়লে, আলভি এই ফাঁকে ৪টার কিছু পরে আবার ১০ নম্বরে আন্দোলনে চলে যায়। সেখানে আমার বোনের ছেলেও ছিল। হঠাত্ কি একটা দুঃস্বপ্নে আমার ঘুম ভাঙে। এরপর থেকে শরীরটা কেমন যেন খারাপ লাগছিল। মাগরিবের নামাজের জন্য আমি প্রস্তুত হচ্ছিলাম। এরমধ্যে শুনি, নিচ থেকে আলভির বন্ধুরা ডাকছে—‘আলভির আম্মু আন্টি, কোথায়? আলভি অসুস্থ হয়ে পড়েছে’। আমি ভেবেছি, সত্যি আমার ছেলেটা হয়তো টিআর শেলের ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আমি আমার বাবাকে বুকে জড়িয়ে ধরে চোখে-কপালে চুমু দেই, ডাকি, কিন্তু আমার বাবা কোনো সাড়া দেয় না। পরে সবাই আমাকে ধরে উপরে বাসায় নিয়ে আসে, এর কিছুক্ষণ পর ছেলেকে গোসল দিয়ে, কাফনের কাপড় পড়িয়ে যখন বাসার সামনে আনে, তখন বুঝতে পারি, আমার বাবা আর নেই, সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।’

সালমা বেগম বলেন, ‘সে সময় অনেক লোক আলভির বাবাকে বলেছে—এখান থেকে আপনাদের পালিয়ে যেতে হবে। আপনার ছেলে কেন আন্দোলনে গেছে। তাকে তারা শহিদ বলেনি, বলেছে সন্ত্রাসী। তারা বলে, তাড়াতাড়ি মাটি দিতে হবে, নইলে ঝামেলা আছে। এদিকে সি ব্লকের মসজিদ থেকে আমাদের খাটিয়া দেয়নি, জানাজাও পড়ায়নি। পরে ডি-ব্লক থেকে খাটিয়া এনে আমার বাচ্চাকে জানাজা দেই, এতো কম সময়ের মধ্যে গ্রামের বাড়িতেও নিতে পারিনি। ঐ দিন কারফিউ ছিল। পরে তাড়াহুড়ো করে রাত ১০টার দিকে কালশী কবরস্থানে আমার ছেলেকে মাটি দেওয়া হয়। আমার ছেলের কবরটা যেন পাকা করে বাঁধিয়ে দেয় সরকার।’ তিনি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, ‘এখন কেমন করে যে বেঁচে আছি, জানি না। ঘরে ছোট মেয়েটার জন্য রান্না করি। কিন্তু ওর বাবা গত এক মাস ধরে কাজে যায় না ছেলের শোকে। আমি কোনো কিছু করার শক্তি পাই না। মনে হয় জীবিত লাশ হয়ে বেঁচে আছি।’ আলভির মা কেঁদে কেঁদে বলেন, ‘অনেক মায়ের বুক খালি হয়েছে, আমি এর বিচার চাই। বিনা অপরাধে আমার বাচ্চার ওপর যারা গুলি করেছে, যারা এই গুলির নির্দেশ দিয়েছে তাদের ফাঁসি হোক। ছেলেকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন ছিল। ছেলের ইচ্ছে ছিল বড় হয়ে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হবে। এখন ছেলের শখের কম্পিউটার, বই-খাতা, সব পড়ে আছে, নেই কেবল আমার ছেলেটা।’

 

এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত