নরসিংদীতে দু-গ্রুপে সংঘর্ষে নিহত ৪
রায়পুরার নিলক্ষায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিবদমান দুই চেয়ারম্যান গ্রুপের সংঘর্ষে ৪ জন নিহত হয়েছে। আহত হয় ৫ পুলিশসহ ২০ জন। এছাড়া আগুন লাগিয়ে দেয়া হয় ২০/২৫টি বাড়িতে।
সোমবার সকাল ১১টা থেকে বিকাল পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।
সংঘর্ষকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন আমিরাবাদ গ্রামের আলতাফ মিয়ার ছেলে মানিক মিয়া (৪৫), সোনাকান্দী গ্রামের অরব আলীর ছেলে খোকন মিয়া (৩২) ও একই গ্রামের মঙ্গল মিয়ার ছেলে মামুন মিয়া (২২)। এছাড়া টেটাবিদ্ধ হয়ে নিহত হন আমিরাবাদ গ্রামের আব্দুস সালাম মিয়ার ছেলে শাহজাহান (৪০)।
আহতদের মধ্যে নরসংদী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে ১০ ব্যক্তিকে। তাদের মধ্যে আনসার মিয়া (৩৫), মিনু (১৩), দুদমেহের (২৫), ফরিদ মিয়া (৩৫), শিপন (১৮), রুজি (২৮), রাকিব (১৮), শামীম (২০) ও রবিউল্লাহর (২৫) অবস্থা আশঙ্কাজনক।
পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তাকে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হলেন রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজহারুল ইসলাম সরকার, উপ-পরিদর্শক আসাদ মিয়া, মোজাম্মেল হক, জিয়াউর রহমান ও কনস্টেবল জিল্লুর রহমান।
এছাড়া আরো কয়েকজন আহত হয়। তবে পুলিশি ঝামেলা এড়ানোর জন্য তারা বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
নিহতদের শাহজাহানের লাশ নরসিংদী সদর হাসপাতালে রয়েছে এবং বাকি ৩ জনের লাশ এখনো সোনাকান্দী গ্রামে পরে আছে বলে জানা যায়।
গত ইউপি নির্বাচনের পর থেকে রায়পুরার উপজেলার নিলক্ষার বর্তমান চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী গ্রুপের নেতা প্রাক্তন চেয়ারম্যান আব্দুল হক সরকারের সমর্থকদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। গত শনিবার বর্তমান চেয়ারম্যান সমর্থকরা টেটা, বল্লম, এককাইট্টা ও ককটেল নিয়ে অবস্থান নেয়। প্রাক্তন চেয়ারম্যান আব্দুল হক সরকারের সমর্থকরাও পাল্টা অবস্থান নিলে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দেয়। রাতে দুই পক্ষের মধ্যে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষও হয়।
পরদিন রোববার সকালে উভয় পক্ষের মধ্যে ইউনিয়নের বীরগাও, আমিরাবাদ, হরিপুর ও দড়িপুর গ্রামে কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় পক্ষ টেটা, বল্লমের পাশাপাশি বোমা ও ককটেল ব্যবহার করে। দুই পক্ষই ককটেল ও বোমা ফাটিয়ে ত্রাশ সৃষ্টি করে।
দুদিনের এই সংঘর্ষে আহত হয় প্রায় অর্ধশত লোক।
দুদিনের সংঘর্ষ বন্ধে পুলিশ গ্রামে গেলেও হাজার হাজার লাঠিয়ালের ভয়ে তারা দূরে সরে থাকতে বাধ্য হয়।
সোমবাব দুই পক্ষ পুনরায় সংঘর্ষে লিপ্ত হলে তা চারটি গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় আব্দুল হক সরকারের সমর্থক ও তাজুল ইসলামের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষ সোনাকান্দী গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।
এই সময় রায়পুরা উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) হুমায়ূন কবির ও রায়পুরা থানার ওসির নেতৃত্বে দাঙ্গা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রথম ফাঁকা গুলি চালায়। এতেও সংঘর্ষ থামানো সম্ভব না হলে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও সাউ- গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এতে লাঠিয়ালরা পিছু না হটে উল্টো পুলিশের উপর হামলা চালায়।
এ সময় লাঠিয়ালদের টেটার আঘাতে রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজহারুল ইসলাম সরকার, উপ-পরিদর্শক আসাদ মিয়া, মোজাম্মেল হক, জিয়াউর রহমান ও কনস্টেবল জিল্লুর রহমান আহত হন।
এই পরিস্থিতিতে ম্যাজিস্ট্রেট গুলি চালানোর নির্দেশ দেন। এতে ঘটনাস্থলে মামুন, খোকন ও মানিক মারা যায়।
টেটাবিদ্ধ হয়ে নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে ভর্তি হয় শাহজাহান। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে পথে সে মারা যায়।
নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসিবুল আলম পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়ার কথা স্বীকার করেন।
এলাকাবাসী জানায়, নির্বাচনের পর থেকে উভয় পক্ষের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে অন্তত ১৩টি সংঘর্ষ হয়। এ সব সংঘর্ষে ২ ব্যক্তি নিহত ও আহত হয় তিন শতাধিক। ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয় শতাধিক বাড়িঘরে।
মাঝে বর্ষা মৌসুমে এলকায় মেঘনার পানি ঢুকে পড়ায় সংঘর্ষ বন্ধ ছিল। ইদানিং পানি শুকিয়ে গেছে।
এলএবাংলাটাইমস/এন/এলআরটি
শেয়ার করুন