জঙ্গিবাদের কারণ খুঁজে বের করুন : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ উচ্ছেদে তার দৃঢ় সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করে এই অশুভ শক্তিকে পরাজিত করতে এর কারণ ও অর্থের উৎস খুঁজে বের করার আহবান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ একটি বিশ্বব্যাপী উদ্বেগজনক সমস্যা। এই সভ্যতা বিনাশী প্রবণতা নির্মূলে এর কারণ, উৎস ও প্রতিকারের উপায় নিরূপণ জরুরি।’ তার সরকার জঙ্গি নির্মূল ও সন্ত্রাসবাদ দমনে প্রয়োজনীয় সব রকম ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) সকালে মিরপুর সেনানিবাসে ‘ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স-২০১৬’ (এনডিসি) এবং ‘আমর্ড ফোর্সেস ওয়ার কোর্স-২০১৬’ (এএফডব্লিউসি)-এর গ্রাজুয়েশন অনুষ্ঠানে প্রদত্ত প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেছেন।
ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের কমান্ড্যান্ট লে. জেনারেল চৌধুরী হাসান সোহরাওয়ার্দী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেছেন।
এ সময় মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, তিন বাহিনী প্রধানগণ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যবৃন্দ, বিদেশি কূটনিতিকবৃন্দ এবং সামরিক ও বেসামরিক উচ্চপর্যায়ের কমকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমনে তার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রশিক্ষিত ও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের মাটিকে অতীতের মতো সন্ত্রাস বা বিছিন্নতাবাদী তৎপরতার জন্য আর কখনো কেউ ব্যবহার করতে পারবে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে বিশ্বে বাংলাদেশের মর্যাদা অক্ষুন্ন থাকবে। ’
তিনি আরো বলেছেন, ‘উন্নয়নশীল দেশসমূকে সর্বদাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে সহযোগিতামূলক পরিবেশ বজায় রেখে নিজস্ব উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য চেষ্টা করতে হয়। এ প্রেক্ষিতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য তাদের অর্থনীতিকে বহুমুখী ও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে নিজেদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করা অত্যন্ত জরুরি।’
শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বিভিন্ন নিরাপত্তাজনিত সমস্যা নিরসনে তার সরকার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে।
তিনি সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল একটি সমন্বিত আঞ্চলিক অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করা। ইতোমধ্যে সে লক্ষ্য বাস্তবায়নের সূচনা প্রত্যক্ষ করেছি। যার পরিপ্রেক্ষিতে বিগত আট বছরে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতিসহ পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রভূত অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।’
গ্রাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে প্রধানিমন্ত্রী আস্থা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘সদ্যসমাপ্ত প্রশিক্ষণে অর্জিত জ্ঞান দিয়ে আপনারা সে চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবেলা এবং দেশের সার্বিক উন্নয়নে সরকারকে যথাযথ সহায়তা করতে পারবেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমি জেনে আনন্দিত যে- আপনারা বাংলাদেশ ও সমকালীন বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে পড়াশোনা ও গবেষণা করেছেন। যার মধ্যে সামাজিক ও রাজনীতি বিজ্ঞান, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও জাতীয় নিরাপত্তার মতো যুগোপযোগী বিষয় রয়েছে। আপনারা দেশের বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধানে ভবিষ্যত কর্মপন্থা সম্পর্কেও জ্ঞান লাভ করেছেন। যার বুদ্ধিবৃত্তিক প্রয়োগ নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জাতীয় অগ্রগতির ধারাবাহিকতাকে আরও বেগবান করবে।’
সশস্ত্র বাহিনীর জ্যেষ্ঠ ও মধ্যম সারির কর্মকর্তাদের উচ্চমানের প্রশিক্ষণের জন্য ১৯৯৬ সালের আগে নিজস্ব কোনো প্রতিষ্ঠান ছিলো না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আপনাদের উচ্চশিক্ষার কথা বিবেচনা করে আমাদের সরকারের ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদকালে এনডিসি প্রতিষ্ঠা করেছে। যা বর্তমানে একটি আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের খ্যাতি ও বহির্বিশ্বে এর অবস্থান আমাদের জন্য সত্যিই একটি গর্বের বিষয়।’
সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে আমাদের সরকার নতুন প্রযুক্তি সম্বলিত আধুনিক সরঞ্জামাদির সরবরাহ নিশ্চিত করেছে। সর্বোত্তম প্রশিক্ষণ প্রদানের তাগিদে প্রয়োজনীয় সংখ্যক অবকাঠামো তৈরি করেছে এবং একটি পেশাদার ও প্রশিক্ষিত সশস্ত্র বাহিনী প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অনবরত কাজ করে যাচ্ছে।’
দেশ ও জনগণের সেবায় সশস্র বাহিনীর গৌরবজনক ভূমিকা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা যেকোন দুর্যোগ ও বিপর্যয়ে নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সাথে জনগণের পাশে দাঁড়ায়। অবকাঠামো নির্মাণেও তাদের নির্ভরযোগ্যতা দেশে-বিদেশে সমাদৃত।’
প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘ এক বছরের কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের পথ পেরিয়ে গৌরবজনক এনডিসি ও এএফডব্লিউসি কোর্স শেষ করায় দেশি-বিদেশি গ্রাজুয়েটদের আন্তরিক অভিনন্দন জানান।
এলএবাংলাটাইমস/এন/এলআরটি
শেয়ার করুন