আপডেট :

        চোরাচালান রুখতে বিমানবন্দরে জিরো টলারেন্স ঘোষণা কাস্টমসের

        অলিম্পিকে ফিরছে ক্রিকেট ১২৮ বছর পর, সময়সূচি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা

        আন্দোলনের প্রভাব বিশ্লেষণে এনবিআরের ৯ সদস্যের জরিপ দল গঠন

        সমাবেশে হামলার জবাবে এনসিপির দেশজুড়ে ব্লকেড কর্মসূচি

        নাহিদ-হাসনাতের গোপালগঞ্জ ত্যাগ, পাহারায় সেনা-পুলিশের কড়াকড়ি

        লস এঞ্জেলেসে বাড়ি থেকে গুলিবিদ্ধ দুজনের মরদেহ উদ্ধার, এখনও কেউ আটক নয়

        ভয়ংকর খেলনা নিয়ে তোলপাড়! ক্যালিফোর্নিয়ায় যুবক গ্রেপ্তার

        ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে মেক্সিকান টমেটোতে ১৭% শুল্ক, যুক্তরাষ্ট্রে দাম বাড়ার আশঙ্কা

        ৫.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল ফিলিপাইন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার

        বিদ্যুৎ খাতে স্বচ্ছতা: আইপিপি চুক্তি পর্যালোচনায় অর্থ উপদেষ্টার ভূমিকা

        মিষ্টির বন্যায় জিপিএ ৫, সৎ কাজে কেন শান্তি?

        ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের ট্রফি কেন ট্রাম্পের হাতে? উঠছে প্রশ্ন

        আগস্ট থেকে সাশ্রয়ী মূল্যে চাল: ৫৫ লাখ পরিবারের জন্য সুখবর

        শিক্ষক নিয়োগে নতুন নীতি: সহকারী শিক্ষক পদ বিলুপ্ত

        ১০০ বছরে ম্যারাথন জয়ী ফৌজা সিং ১১৪ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করলেন

        মহানায়ক ছাড়া দেড় দশক: বাঙালির হৃদয়ে অমলিন স্মৃতি

        বাংলাদেশের জ্বালানি সরবরাহ জোরদার: কাতার থেকে আসছে এক কার্গো এলএনজি

        পপ তারকা জাস্টিন বিবারের চার বছরের বিরতি ভেঙে নতুন অ্যালবামের ঘোষণা

        চেলসির সোনার ছেলে: কোল পালমারের গোল-অ্যাসিস্টে উৎসব!

        জোহরান মামদানির বিজয়: নিউইয়র্কের রিয়েল এস্টেট খাতে উত্তেজনা

বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা ও একজন আইনজীবীর কান্না

বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা ও একজন আইনজীবীর কান্না

সেদিন সুপ্রিমকোর্টের একজন নামকরা আইনজীবী আদালত থেকে ফিরে অঝোরে কান্না করছিলেন। খবর পেয়ে অনেকেই তাকে দেখতে গেলেন। কেউ তাঁর কান্না থামাতে পারেনি। কান্নার কারণ শুনে ন্যুনতম দেশপ্রেম আছে, এমন কেউ অশ্রু ধরে রাখতে পারেনি। তাঁর মক্কেলদের জানানো হয়, তিনি আদালতে যাবেন না। তারা হতাশায় ভেঙে পড়েন।
আইনজীবী মহোদয় অনেক বড় মানের। আইনের দিগি¦দিক তাঁর জানা। তিনি কোনো মামলায় হারেননি। আদালতে তাঁর নামডাক সফলদের শীর্ষ সারিতে। বিচারকগণও তাকে একইভাবে চেনেন। কখনো তাঁর বিপক্ষে রায় দেবার সুযোগ পাননি। কিছুদিন আগে মাননীয় প্রধান বিচারপতি একটি মামলায় তাঁর বিপক্ষে গিয়ে সরাসরি স্বীয় অক্ষমতা প্রকাশ করেন। বলেন, “আমাদের কিছু করার নেই। গভর্নমেন্ট গেছে পাগল হয়ে। তারা একটি রায় চায়।” একথা বলেই রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের প্রদত্ত যুক্তি সংশোধন করেন এবং বলেন, “এটি সংশোধন করুন, তা না হলে আসামিকে ফাঁসি দেয়া যাবেনা।” এ কর্মকান্ডে আইনজীবী মহোদয় বিস্মিত হন। তাঁর মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। অজান্তেই চোখের পানিতে পোশাক ভিজে যায়। ভগ্ন-হৃদে আদালত ত্যাগ করেন। বাসায় ফিরে প্রধান বিচারপতির অক্ষমতার কথা ভেবে অনুশোচনা করেন এবং নিজেকে সান্ত¦না দেন।
সম্প্রতি আরেকটি মামলায় তিনি হেরেছেন। তাঁর মক্কেল প্রধান আসামির চেয়ে দ্বিগুণ সাজা পেয়েছে। সে ছিল সহযোগী আসামি। বিচারশুনানির ৬৩২ পৃষ্ঠা রায় বিবরণীতে সে মূল অপরাধী সাব্যস্ত হয়নি। তাই আইনজীবী মহোদয় ভেবেছিলেন, নিশ্চয়ই তাঁর মক্কেল প্রধান আসামির চেয়ে কম সাজা পাবে। কারণ, পৃথিবীতে প্রধান অপরাধীর চেয়ে সহযোগীর অধিক সাজাদানের নজির নেই। অথচ আদালত প্রধান আসামিকে বিশেষ বিবেচনায় ৫ (পাঁচ) বছর আর সহযোগীদের ১০ (দশ) বছর সাজা দেন। তিনি রায় শুনে অবাক হন। বিচারকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, “এ রায় কি আইনসম্মত হল?” বিচারক রীতিমতো হুমকি দেন। বলেন, “আপনার সাহস তো কম নয়। আপনি আদালত অবমাননা করছেন। সবসময় আইনের দোহাই দেবেননা। বুঝতে হবে, এটি রাজনৈতিক মামলা।” তিনি নিশ্চুপ হয়ে যান। বুঝে নেন, রাজনৈতিক মামলায় আইনের সঠিক প্রয়োগ প্রযোজ্য নয়। তিনি এতে খুবই কষ্ট পান। আইনি পেশা ছেড়ে দেবার মনস্থির করেন। আদালতেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
বাসায় ফিরে ডুকরে কাঁদতে থাকেন। তাঁর স্ত্রী ও সন্তান সান্ত¦না দেন। তারা বলেন, মামলা দুটো নেয়াই ভুল ছিল। একথা শুনে তিনি শক্ত হন এবং বলেন, এ দুটো মামলাতেই আইনের সর্বোচ্চ অপপ্রয়োগ হয়েছে। এটি দেশ ও জাতির জন্য অশনি সংকেত। বিচারবিভাগ যেভাবে কলুষিত হয়েছে, তাতে জাতির ধ্বংস অনিবার্য।
এরপর ব্যর্থ মামলা দুটি বর্ণনা করেন। প্রথম মামলাটি, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে। বাঙ্গালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজেই তা সমাধা করে গেছেন। তাঁর শাসনকালে ১৯৭১ সালে সংঘটিত জঘন্য অপরাধের জন্য ১৯৫ পাকসেনা মূল অপরাধী স্বীকৃত ছিল। এরপরও বিশেষ মহলের চাপে তিনি দালাল আইনে বিচার শুরু করেছিলেন। বহু বাঙ্গালিকে আটক করেছিলেন। বিচারে চিকন আলি নামে একজনের ফাঁসিও কার্যকর হয়েছে। পরবর্তীতে পাকিস্তানে আটক বাঙ্গালিদের ফেরত আনতে উক্ত ১৯৫ যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দেন। তখনই দালাল আইনে প্রচলিত বিচার বাতিল করেন এবং বলেন, “প্রধান অপরাধীদের ছেড়ে আমি আমার যুদ্ধবিধ্বস্থ অসহায় নাগরিকদের অপরাধী সাব্যস্ত করা সঠিক মনে করিনা।” একথা বলে বিচারের সকল কাগজপত্র নিশ্চিহ্ন করেন। কোলাবরেটরস বা দালালের সংজ্ঞাও পরিবর্তন করেন। লেখক মঈদুল হাসান ‘মুলধারা ৭১’ গ্রন্থে (পৃষ্ঠা-৪১) উল্লেখ করেন, “দেশ মুক্ত হওয়ার পর বেসামরিক প্রশাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন বিষয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে মন্ত্রিসভা এই অভিমত প্রকাশ করেন যে, অধিকৃত অঞ্চলে সরকারী অফিসার ও কর্মচারী যারা দৃশ্যত পাকিস্তানীদের সাথে সহযোগীতা করে চলেছেন, তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই প্রাণের ভয়ে তা করতে বাধ্য হয়েছেন এবং প্রকৃতপক্ষে তারা স্বাধীনতার গোপন সমর্থক।” এভাবে বঙ্গবন্ধু স্বীয় জামাতাসহ মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তান সরকারে কর্মরত সবাইকে দায়মুক্তি প্রদান করেন। বাংলাদেশে দালাল আইনের কার্যকারিতা চিরতরে শেষ হয়।
মুক্তিযুদ্ধকালে এদেশের মানুষ নিতান্তই অসহায় ছিল। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা আত্মরক্ষার জন্যই পাকবাহিনীকে সহযোগীতা করেছিল। তাই প্রধান অপরাধী ১৯৫ পাকসেনার বিচার ব্যতিরেকে যুদ্ধবিধ্বস্থ বাংলাদেশিদের বিচার মোটেও আইনসম্মত নয়। এতে পাকিস্তানিদের পরিবর্তে বাংলাদেশিরাই ঘাতক, খুনি, ধর্ষণকারী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী সাব্যস্ত হয়। বাংলাদেশে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারে তা সুস্পষ্ট হয়েছে। বিশ্ববাসী এখন পাকিস্তানিদের যুদ্ধাপরাধী মনে করেনা, বাংলাদেশিদেরকেই তা জানে। এতে বাংলাদেশের বিচারবিভাগের মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়েছে। অবিচারের বিজয় আর সুবিচারের পতন হয়েছে।
অন্য মামলাটি আরো স্পষ্ট। তাতে প্রধান আসামি বেগম জিয়া। মামলার বিশাল ডকুমেন্টে তা প্রমাণ হয়েছে। অন্যরা সহযোগী। বিচারে প্রধান আসামির চেয়ে সহযোগীর অধিক সাজা অবৈধ। প্রধান আসামির জামিন হলে, সহযোগীরও তা নিশ্চিত। প্রধান আসামি বিশেষ বিবেচনায় যা পায়, সহযোগীরা তার চেয়ে বেশি পায়। এটিই আইনি বিধান। অথচ আদালত বেগম জিয়াকে ৫ (পাঁচ) বছর ও সহযোগীদের ১০ (দশ) বছর সাজা দিলেন। আমার মক্কেল দ্বিগুণ সাজা পেল। এ অবৈধ রায় বিচারবিভাগকে কলঙ্কিত করেছে। এতে আমার ব্যর্থতার কিছু নেই। আমরা আইনজীবীরা নিরূপায়। বাংলাদেশে বিচারক অভিসংশন বা বিচারিক শুদ্ধ-অশুদ্ধতা বিশ্লেষণের প্রকাশ্য মাধ্যম নেই। আফসোস, আমি এ বিচারবিভাগে কেন এতোদিন ছিলাম! একথা বলে আইনজীবী মহোদয় আবার কাঁদতে থাকেন।


লেখক : শিক্ষানবিস আইনজীবী, ঢাকা।

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত