২০২৪ এর জুলাই-আগস্টের বিপ্লবের কথা
অর্জিত সব জ্ঞান ব্যর্থ হয়ে যায় যদি না থাকে কাণ্ডজ্ঞান। তোমাদের ঘাটতি সেই জায়গাতে।
একবারও কি ভেবে দেখেছ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়া শতকরা ৯৫ জন বাঙালি স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পড়েনই নি? নিরক্ষর আনপড় কিষাণ-মজুর এবং তাদের সন্তানরা যুদ্ধে নেমেছিলেন নিজেকে বাঁচাতে, পিতা-মাতা, ভাইবোনকে বাঁচাতে। তারা জীবন থেকেই জেনেছিলেন পাকবাহিনী এবং তাদের দোসরদের পরাজিত না করতে পারলে নিজেদের বেঁচে থাকার কোনো সুযোগ নেই।
এবার ২০২৪ এর জুলাই-আগস্টের কথায় আসি। মানুষ রাস্তায় নেমেছিল দেশের বুকে জগদ্দল পাথরের মতো বসে থাকা হাসিনা-শাসনকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে। কেননা দেশকে বাঁচাতে সেই রেজিমের পতন ঘটানোর কোনো বিকল্প তাদের সামনে ছিল না। এত অবিচার আর নিতে পারছিল না মানুষ। হাসিনার বুদ্ধিজীবী-সমর্থকরা প্রচার করেছিল তাকে হঠালে দেশ যাবে মৌলবাদীদের হাতে। মানুষ কানে তোলেনি সেকথা। তাদের ভাষ্য ছিল আগে হাসিনা হঠাও, তারপরে যা হয় তখন দেখা যাবে। তাদের অন্তত ৮০ ভাগ মানুষ শহীদ মিনারের ঘোষণাপত্র শোনেনি। হৃদয়ঙ্গম করা দূরের কথা।
হাসিনার পতন ঘটেছে। মানুষ ফিরে গেছে নিজের নিজের কাজে। প্রায় সকল রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠন যোগ দিয়েছিল আন্দোলনে। তারাও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানার থেকে চলে গেছে নিজ নিজ দলীয় ব্যানারে।
এখন ২০ লাখ মানুষ আর পাবে না তোমাদের মিছিলে। ৩১শে ডিসেম্বর যে ২০ হাজার মানুষও পাওনি, তার কারণ খুঁজতে কাণ্ডজ্ঞান প্রয়োগ করতে হবে তোমাদের।
তোমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অংশ হয়েছ তা নিয়ে কেউ আপত্তি করেনি। সংস্কারের কথা বলছ, করছ, তা নিয়েও কেউ আপত্তি জানায়নি।
কিন্তু তোমরা হাত দিয়ে ফেলেছ হাজার বছরে বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন মুক্তিযুদ্ধের গোড়ায়। এই কাণ্ডজ্ঞান দেখাতে পারোনি যে স্বাধীনতা-পরবর্তী শেখ মুজিব বা পরবর্তী সকলের শাসনকাল দিয়ে মুক্তিযুদ্ধকে অর্থহীন প্রমাণ করা বা মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্ব নির্ধারণ করার চেষ্টা তোমাদেরকে পাকবাহিনী এবং রাজাকার-আলবদর বাহিনীর সমতলে নামিয়ে আনবে। তোমরা ইনিয়ে-বিনিয়ে সেই ধারাতেই কথা বলছ। তোমাদের সাথে কোনো কোনো ছাগল একথাও ঘোষণা দিচ্ছে যে ১৬ই ডিসেম্বরকে সে বিজয় দিবস হিসাবে মানে না। চিরকালের ঘৃণিত জামায়াত-শিবিরের সাথে তোমাদের দহরম-মহরম মাখামাখি মানুষ ভালো চোখে দেখছে না। আশা করি তোমরা নিজেরাও জানো যে জামায়াত আগামী ১৫১ বছরেও সংসদ নির্বাচনে ১৫১টি আসনে জিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হতে পারবে না। যাদের সাথে নিয়ে চিরকালের গোলাম টেলিভিশনগুলোর টকশো ফাটিয়ে চলেছ, ইউটিউবে চেঁচিয়ে শোরগোল তোলার চেষ্টা করছ, এবি, বিসি, সিডি, জিজেড দল সবগুলো একসাথে নামলেও নির্বাচনে একটি আসনেও জিততে পারবে না।
মানুষ নেই তোমাদের সাথে। এই কথা মেনে নিলে তোমাদের কাণ্ডজ্ঞান ফিরে আসতে পারে।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন