আপডেট :

        ব্যাংকের ভেতরে অচেতন হয়ে পড়ে ছিলেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, করছিলেন বমি

        কোচ হতে চান মাহমুদ উল্লাহ-মুশফিক, জানান আমিনুল

        রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপ শুরু হবে সোমবার

        লস এঞ্জেলেসে গোপন নাইটক্লাবে অভিযান, ৩৬ জন চীনা ও তাইওয়ানি নাগরিক আটক

        ক্যালিফোর্নিয়ার ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড ফাইনালে ট্রান্সজেন্ডার অ্যাথলেটের জয়

        বাবা-মা হলেন তারকাজুটি পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় ও পিয়া চক্রবর্তী

        চার বছর ধরে মায়ের ভুল কবরস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদন, পরিবারের মামলা

        নর্থ হলিউড মেট্রো স্টেশনের বাইরে ছুরিকাঘাত ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় ৩ জন হাসপাতালে

        ব্যাল্ডউইন পার্কে বন্দুকধারীর গুলিতে এক পুলিশ কর্মকর্তা নিহত, অপরজন হাসপাতালে

        মমতা বাংলাদেশিদের জন্য পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত খুলে রেখেছেন: অমিত শাহ

        ট্রাম্পের পররাষ্ট্র নীতিতে হতাশা বাড়ছে

        যুক্তরাজ্যের নাগরিকের বিরুদ্ধে মার্কিন সামরিক প্রযুক্তি রপ্তানির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ

        শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ৮০০০ পাতার অভিযোগ

        ইরানকে পারমাণবিক চুক্তির প্রস্তাব পাঠিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র

        বিসিআই-এর আয়োজনে রিভারসাইড কাউন্টির পেরিস শহরে বাৎসরিক বৈশাখী মেলা ২০২৫

        পিএসজির ঐতিহাসিক চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ে প্যারিসে আনন্দের বন্যা

        প্রথমবারের অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘নজরুল রক কনসার্ট’

        আজ নয় আগামীকাল নতুন টাকা পাবেন গ্রাহকরা

        সিলেটে বিপৎসীমা ছাড়িয়ে গেছে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি

        ইরানকে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক চুক্তির প্রস্তাব

ইটন আগুনে পুড়ে গেছে মসজিদ, রমজানে একত্রিত থাকার সংকল্প মুসল্লিদের

ইটন আগুনে পুড়ে গেছে মসজিদ, রমজানে একত্রিত থাকার সংকল্প মুসল্লিদের

ছবিঃ এলএবাংলাটাইমস

অল্টাডেনার মসজিদ আল-তাকওয়া এখন শুধুই একটি সাইনবোর্ড।

৪২ বছর ধরে স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য আশ্রয় হিসেবে থাকা মসজিদটি চলতি বছরের জানুয়ারিতে লস এঞ্জেলেসের ভয়াবহ ইটন অগ্নিকাণ্ডে সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। এই ঘটনায় ১৭ জন প্রাণ হারান, হাজারো বাড়ি ভস্মীভূত হয় এবং ১৪,০০০ একর এলাকা পুড়ে যায়। মসজিদ হারানোর শোকে ভেঙে পড়া মুসল্লিরা রমজান মাসে কোথায় নামাজ আদায় করবেন ও ইফতার করবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন।

কিন্তু সম্প্রতি এক শনিবার, প্রায় ২০ জন মুসল্লি ও তাঁদের কয়েকটি পরিবার নিউ হরাইজন ইসলামিক স্কুলের একটি কক্ষে একত্রিত হন—এটি ছিল আগুনের পর তাদের প্রথম সম্মিলিত প্রার্থনা ও খাবার ভাগাভাগির আয়োজন। অনেকেই এখনো পরিবার ও হোটেলে আশ্রয় নিয়ে আছেন, কারণ তাঁদের বাড়িও আগুনে পুড়ে গেছে।

রমজান শুরু হওয়ার আগেই তাঁদের জন্য সুখবর নিয়ে আসেন স্বেচ্ছাসেবী ইমাম জুনাইদ আসি। সাদা জুব্বা, কালো জ্যাকেট ও টুপি পরা আসি একটি ছোট কারাওকে মেশিন হাতে নিয়ে মসজিদের সাবেক মুসল্লিদের উদ্দেশে ঘোষণা করেন, নিউ হরাইজন ইসলামিক স্কুল তাদের জন্য প্রতি সপ্তাহে চার দিন নামাজ পড়ার জায়গা দেবে। খবরটি শুনে মুসল্লিদের চোখে-মুখে স্বস্তির ছাপ ফুটে ওঠে, অনেকে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ উচ্চারণ করেন।

“রমজান শুধু প্রার্থনার সময় নয়, বরং একে অপরকে সাহায্য ও সহানুভূতি দেখানোর সময়ও বটে,” বলেন আসি। “এই বছর, যখন অনেকেই এত কিছু হারিয়েছেন, তখন এটি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।”

মসজিদের স্বেচ্ছাসেবী ইমাম হিসেবে ২৫ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করে আসা আসি বলেন, আগুনে পুড়ে যাওয়ার পরও তিনি বারবার মসজিদের জায়গায় যান। সেখানে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করলে এখনো সবকিছু আগের মতো দেখতে পান—উযুর জায়গা, পুরু কার্পেটে মোড়ানো নামাজের স্থান, কুরআনের প্রতিলিপি, এমনকি মসজিদের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা একটি তেঁতুল গাছও।

“এখনো বিশ্বাস করতে পারি না যে সব শেষ হয়ে গেছে,” বলেন তিনি।

মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান বোর্ড সভাপতি অ্যারন আবদুস-শাকুর এই অগ্নিকাণ্ডে নিজের বাড়ি, ব্যবসার ভবন এবং অল্টাডেনায় বিনিয়োগ করা বেশ কয়েকটি সম্পত্তি হারিয়েছেন। তিনি বলেন, ১৯৭০-এর দশকে নেশন অব ইসলাম সদস্যদের মিলনকেন্দ্র হিসেবে শুরু হলেও পরবর্তীতে মসজিদটি একটি বহুজাতিক মুসলিম সম্প্রদায়ের কেন্দ্র হয়ে ওঠে। ১৯৯৭ সালে এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘মসজিদ আল-তাকওয়া,’ যার অর্থ ‘ধর্মপ্রাণ ও আল্লাহ-সচেতন’।

"আমরা সবসময় ভালো নাগরিক হিসেবে থেকেছি," বলেন আবদুস-শাকুর। "আমাদের দরজা সবার জন্য খোলা ছিল, এবং আমরা সবসময় সম্প্রদায়ের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে চেয়েছি।"

মসজিদের নিয়মিত মুসল্লিদের মধ্যে রয়েছেন সালাহ এদ্দিন বেনাতিয়া, একজন আলজেরীয় অভিবাসী, যিনি মাত্র তিন মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন। তিনি অনলাইনে আল-তাকওয়া মসজিদের খোঁজ পান এবং নিয়মিত বাসে করে সেখানে নামাজ পড়তে যেতেন।

"এখানে আমাকে অনেক আপন করে নেওয়া হয়েছে," বলেন বেনাতিয়া। "বিশেষ করে রমজানের সময় আমার নিজের বাড়ির কথা খুব মনে পড়ে। মসজিদটি পুড়ে যাওয়ার খবর শুনে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম, কিন্তু এখানে আসতে পেরে মনে হচ্ছে আমি পরিবারের সঙ্গেই আছি।"

ফারজানা আসাদুজ্জামান ২০১৬ সাল থেকে এই এলাকায় বসবাস করছেন। তাঁর মতে, রমজান মাসে মসজিদটি ছিল একটি পারিবারিক মিলনস্থল।

"সবাই খাবার নিয়ে আসত, একসঙ্গে রোজা রাখতাম, একসঙ্গে ইফতার করতাম," বলেন তিনি। "শিশুরা উনো খেলত, শিল্পকর্ম তৈরি করত, ঈদের উপহার ব্যাগ বানাত। বাইরে হিটার বসিয়ে আমরা চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে গভীর রাত পর্যন্ত গল্প করতাম।"

তবে এবারের রমজান অন্যবারের মতো হবে না। ফারজানার পরিবারও আগুনে তাদের বাড়ি হারিয়েছে। "আমাদের মসজিদ হয়তো নেই, আমাদের পাড়া-প্রতিবেশীরাও ছড়িয়ে গেছে, কিন্তু আমাদের সম্প্রদায় এখনো শক্তিশালী," বলেন তিনি। "রমজানে আমরা অবশ্যই একত্রিত হবো, যেখানেই হোক না কেন।"

মোহাম্মদ আল-দাজানি, দ্বিতীয় বর্ষের এক মেডিকেল ছাত্র, মসজিদের কাছেই থাকতেন। আগুনে তাঁর কন্ডোমিনিয়ামও পুড়ে গেছে।

"এই মসজিদটিই ছিল এখানে থাকার অন্যতম কারণ," বলেন আল-দাজানি। "এটি আমাকে এই সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংযুক্ত রেখেছিল।"

মসজিদটি বিভিন্ন জাতীয়তার মানুষের জন্য একটি কেন্দ্রস্থল ছিল—আরব, আফ্রিকান আমেরিকান, আফগান, ভারতীয়, বাংলাদেশি, তুর্কি ও উত্তর আফ্রিকার মুসলিমরা এখানে একত্রিত হতেন।

গত রমজানে মসজিদের তরুণরা জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদের একটি দেয়ালচিত্র এঁকেছিল। ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত আল-দাজানি বলেন, এটি তাকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছিল, বিশেষ করে যখন গাজায় সহিংসতা চলছিল।

"আমি প্রথমে মসজিদের ধ্বংসাবশেষের ছবি দেখি, তারপর জানতে পারি আমার ঘরও পুড়ে গেছে," বলেন তিনি। "আমার বুক ধক করে উঠেছিল।"

সাকিানাহ আলীর সন্তানরা পাশের এলিয়ট ম্যাগনেট মিডল স্কুলে পড়ত, যা আগুনে ধ্বংস হয়েছে।

"স্কুলে বসেই তারা জোহরের আযান শুনতে পেত, যা খুবই বিশেষ কিছু ছিল," বলেন তিনি। "আগুন লাগার সময় বাইরে গিয়ে দেখি, পুরো এলাকা আগুনে ছেয়ে গেছে, গাড়িগুলো জ্বলছে, চারপাশে বিস্ফোরণের শব্দ হচ্ছে—বুম, বুম।"

তবে তিনি বিশ্বাস করেন, তাঁদের সম্প্রদায় টিকে থাকবে।

"মূল বিষয় হলো আমাদের একসঙ্গে থাকা," বলেন আলী। "আমরা আমাদের নামাজ চালিয়ে যাব, যুক্ত থাকব, এবং ধৈর্য ধরে এগিয়ে যাব। আমরা অবশ্যই আবার গড়ে তুলব আমাদের মসজিদ।"

এলএবাংলাটাইমস/ওএম

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত