ব্যাংকের ভেতরে অচেতন হয়ে পড়ে ছিলেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, করছিলেন বমি
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের চ্যালেঞ্জে প্রাণ গেল ক্যালিফোর্নিয়ার কিশোরের
ছবিঃ এলএবাংলাটাইমস
দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার এক দম্পতি তাদের ১৩ বছর বয়সী ছেলেকে হারিয়ে শোকে ভেঙে পড়েছেন। পরিবারের দাবি, ছেলেটি একটি বিপজ্জনক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম চ্যালেঞ্জের শিকার হয়ে মারা গেছে।
নামদি ওহায়েরি জুনিয়র, যাকে ভালোবেসে সবাই “ডুস” বলে ডাকত, ছিল চার ভাইয়ের মধ্যে সবচেয়ে বড়। সে খেলাধুলা, বিশেষ করে ফুটবল খেলতে খুব ভালোবাসত এবং সংগীতের প্রতিও ছিল গভীর আগ্রহ। মুরিয়েটার একটি সামরিক পরিবারের সন্তান হিসেবে ডুস পরিবারিক কার্যক্রমে বেশ আনন্দ পেত এবং তার প্রিয়জনদের সঙ্গে সময় কাটানো ছিল তার অন্যতম শখ।
২ ফেব্রুয়ারি ছিল তাদের পরিবারের জন্য আরেকটি সাধারণ দিন।
“আমরা একসঙ্গে বাড়ি ফিরলাম, সবাই গোসল করল, তারপর আমরা একসঙ্গে গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডস দেখছিলাম। ডুস খুব উত্তেজিত ছিল, কারণ কেনড্রিক লামার অনেকগুলো পুরস্কার জিতছিল,” বলছিলেন তার বাবা নামদি ওহায়েরি সিনিয়র।
কিন্তু পরদিন সকালে ভয়াবহ এক দৃশ্যের সম্মুখীন হয় পরিবার। ডুসকে তারা তার ঘরে নিস্তেজ অবস্থায় পায়। তার মা সঙ্গে সঙ্গে সিপিআর দেওয়া শুরু করেন, আর বাবা দ্রুত ৯১১ নম্বরে কল করে পাশের বাড়ির সহায়তা চান।
কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। প্রথমে মনে হয়েছিল, হয়তো সে আত্মহত্যা করেছে।
তবে ডুসের আত্মহত্যার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছিল না তার পরিবার। সে সবসময় ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী ছিল, নতুন পরিকল্পনায় উচ্ছ্বসিত থাকত। তখনই তার বাবা-মা নিজেরাই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে শুরু করেন।
তদন্ত করতে গিয়ে তারা জানতে পারেন, ডুস হয়তো এমন একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম চ্যালেঞ্জে অংশ নিয়েছিল, যেখানে মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবে শ্বাসরোধ করে সংজ্ঞাহীন হওয়ার চেষ্টা করে।
“আমি শুনেছিলাম, কেউ এই ধরনের একটা চ্যালেঞ্জ করার পর আবার জ্ঞান ফিরে পেয়েছে,” বলছিলেন তার বাবা।
পরিবারের বিশ্বাস, এটাই সবচেয়ে যৌক্তিক ব্যাখ্যা।
তারা আরও জানান, ডুসের নিজের কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অ্যাকাউন্ট ছিল না, আর তার ফোনেও কড়া প্যারেন্টাল কন্ট্রোল দেওয়া ছিল। ফলে তারা ধারণা করছেন, সে হয়তো স্কুলের বন্ধুদের মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে জেনেছে।
টিকটকের “ব্ল্যাকআউট চ্যালেঞ্জ”-এর মতো বিপজ্জনক ট্রেন্ডের কারণে আগেও বহু শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এই চ্যালেঞ্জে অংশগ্রহণকারীরা যতক্ষণ না জ্ঞান হারায়, ততক্ষণ শ্বাস বন্ধ রাখার চেষ্টা করে। এর ফলে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।
এমন মর্মান্তিক ঘটনার শিকার হওয়া অনেক শিশুর পরিবারের মতো ওহায়েরি পরিবারও এখন শোকের মধ্যে রয়েছে, আর নিজেদের দোষারোপ করছে।
“আমি বারবার ভাবছি, আমরা কি আরও বেশি খেয়াল রাখার চেষ্টা করতে পারতাম? চার বছর আগে আমি যদি ওর প্রতি এতটা কঠোর না হতাম, তাহলে কি কিছু বদলাত?” বললেন ওহায়েরি সিনিয়র।
তবে তারা বিশ্বাস করেন, ডুসের গল্প অন্যদের জন্য একটি সতর্কবার্তা হয়ে উঠতে পারে।
“আমরা সবসময় সন্তানদের বলি, ‘ড্রাগ নিও না, ভালো সিদ্ধান্ত নাও।’ কিন্তু আমরা কখনও বলি না, ‘সোশ্যাল মিডিয়া ট্রেন্ডের পেছনে দৌড়াবে না বা বিপজ্জনক গেম খেলবে না।’ এখন মনে হচ্ছে, আমাদের এসব কথাও বলা উচিত,” বললেন শোকার্ত বাবা।
ডুসের শেষকৃত্যে তার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশীরা অংশ নেন। পরিবার জানিয়েছে, তারা যে ভালোবাসা ও সমর্থন পেয়েছে, তা তাদের শোক সামলাতে কিছুটা হলেও সাহায্য করছে।
তবে তাদের একটাই চাওয়া—অন্যান্য বাবা-মায়েরা যেন আরও সচেতন হন এবং তাদের সন্তানদের প্রতি আরও বেশি নজর রাখেন, যাতে এমন ট্র্যাজেডি আর কোনো পরিবারকে স্পর্শ না করে।
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
শেয়ার করুন