লস এঞ্জেলেসের দাবানলে অংশ নেওয়া কিছু দমকলকর্মীর রক্তে ‘চিরস্থায়ী রাসায়নিক’ শনাক্ত
ছবিঃ এলএবাংলাটাইমস
লস এঞ্জেলেসের ইটন এবং প্যালিসেডস দাবানলে অংশ নেওয়া কিছু দমকলকর্মীর রক্তে উচ্চ মাত্রায় ‘চিরস্থায়ী রাসায়নিক’ (Forever Chemicals) পাওয়া গেছে বলে প্রাথমিক পরীক্ষায় উঠে এসেছে।
তবে গবেষকরা বলছেন, এই আগুনগুলোর প্রভাব ঠিক কীভাবে তাদের স্বাস্থ্য এবং দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার সাধারণ মানুষের ওপর ফেলেছে, তা জানতে এখনো বহু বছরের গবেষণা প্রয়োজন।
"অনেকেই তাদের রক্ত পরীক্ষার বিষয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন," বলেন ব্যাটালিয়ন চিফ অ্যারন গুগেনহেইম, যিনি লস এঞ্জেলেস ফায়ার ডিপার্টমেন্টের ওয়েলনেস সেকশন পরিচালনা করেন।
উল্লেখযোগ্য যে, কিছু LAFD দমকলকর্মী আগে থেকেই ফেডারেল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি (FEMA)-এর তহবিলায়িত একটি ক্যান্সার গবেষণার আওতায় স্ক্রিনিংয়ের মধ্যে ছিলেন।
গুগেনহেইম জানান, ওই গবেষণায় জানুয়ারির শেষ দিকে আবারও তাদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়—অর্থাৎ দাবানলের কয়েক সপ্তাহ পর।
PFOS ও PFNA মাত্রা বেড়েছে
"শহরের এই দাবানলগুলোর পর যেসব দমকলকর্মীরা সাড়া দিয়েছিলেন, তাদের রক্তে PFOS এবং PFNA নামক দুই ধরনের 'চিরস্থায়ী রাসায়নিকের' মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে," জানায় Fire Fighter Cancer Cohort Study-এর প্রাথমিক ফলাফল।
গুগেনহেইম বলেন, “গবেষকরা এটিকে ‘পরিসংখ্যানগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ’ বলছেন—অর্থাৎ এটি নিছক কাকতালীয় নয়।”
তবে এখনো নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না যে এই রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসায় ভবিষ্যতে তাদের স্বাস্থ্যে কী প্রভাব পড়বে।
চিরস্থায়ী রাসায়নিক কী?
এই ‘চিরস্থায়ী রাসায়নিকগুলো’ PFAS নামেও পরিচিত। এগুলো হচ্ছে per- and polyfluoroalkyl substances, যা পরিবেশে দীর্ঘদিন ধরে থেকে যেতে পারে এবং শরীরে জমে থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (CDC) জানায়, PFAS-এর উচ্চমাত্রায় সংস্পর্শে আসলে ক্যান্সার, উচ্চ কোলেস্টেরল এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
ভালো খবর: ভারী ধাতু মেলেনি
গুগেনহেইম জানান, LAFD সদস্যদের রক্তে ভারী ধাতুর উপস্থিতি পাওয়া যায়নি, যা একটি স্বস্তির খবর।
তবে ৭ অন ইয়োর সাইড ইনভেস্টিগেটসের মার্চ মাসের রিপোর্ট অনুযায়ী, হার্ভার্ড হেলথের একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে, দাবানলের কয়েক দিনের মধ্যে যেসব নর্দার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার দমকলকর্মী এলএ দাবানলে অংশ নিয়েছিলেন, তাদের রক্তে সীসার মাত্রা ছিল পাঁচ গুণ বেশি এবং পারদের মাত্রা ছিল তিন গুণ বেশি, তুলনামূলক একটি নিয়ন্ত্রণ দলের চেয়ে।
মানসিক স্বাস্থ্যের প্রভাবও স্পষ্ট
গুগেনহেইম আরও বলেন, শুধু শারীরিক নয়, মানসিক প্রভাবও পড়েছে অনেক দমকলকর্মীর ওপর—অনেকে মৃত্যুর মুখোমুখি পরিস্থিতির মধ্যে ছিলেন।
তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের সহায়তায় তিনি সাইকোলজিস্ট ও থেরাপি কুকুরের ব্যবস্থাও করছেন বলে জানান।
ফায়ারফাইটাররা আশা করছেন, গবেষকরা দীর্ঘ মেয়াদে এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত থাকবেন, যাতে ভবিষ্যতে তাদের স্বাস্থ্যের ওপর সম্ভাব্য প্রভাবগুলো বোঝা সম্ভব হয়।
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
শেয়ার করুন