হস্তলিখিত নোটে প্রাণ রক্ষা: ক্যালিফোর্নিয়ার বন থেকে মা ও ছেলে উদ্ধার
ছবিঃ এলএবাংলাটাইমস
ক্যালিফোর্নিয়ার সিয়েরা নেভাদা পাহাড়ি জঙ্গলে পথ হারিয়ে যাওয়া এক মা ও তাঁর ৯ বছর বয়সী ছেলেকে উদ্ধার করা হয়েছে হস্তলিখিত একাধিক নোটের মাধ্যমে। ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে তারা সেখানে আটকে ছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত একটি স্বেচ্ছাসেবী উদ্ধার দলের চোখে পড়ে তারা উদ্ধার পান।
৪৯ বছর বয়সী ওই মা ও তাঁর ছেলে ১২ জুলাই উদ্ধার পান ক্যালাভেরাস কাউন্টি ভলান্টিয়ার সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ টিমের মাধ্যমে। তারা আগেই ওই এলাকায় প্রশিক্ষণের কাজে অবস্থান করছিলেন। উদ্ধারকারীদের খুঁজে পাওয়ার আগ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি ছোট ছোট নোট তিনি পাথরের নিচে রেখে গিয়েছিলেন, যার একটিতে লেখা ছিল:
"HELP. Me and my son are stranded with no service and can't call 911."
(“সাহায্য করুন। আমি এবং আমার ছেলে আটকে গেছি। মোবাইল সিগন্যাল নেই, ৯১১-এ কল করতে পারছি না।”)
ঘটনার বিস্তারিত ক্যালাভেরাস কাউন্টি শেরিফ অফিস তাদের ফেসবুক পেজে পোস্ট করে জানায়, ১১ জুলাই দুপুর ১১টা ৩০ মিনিটে (স্থানীয় সময়) ক্যম্প উলফেবোর উদ্দেশ্যে যাত্রা করা মা ও ছেলে রাতে না ফেরায় উদ্বেগ ছড়ায় এবং পুলিশকে অবহিত করা হয়।
মা তামি স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ABC10 কে জানান, এটি ছিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে ভয়ের একটি অভিজ্ঞতা। মোবাইলে সিগন্যাল না থাকায় কাউকে ফোন করা সম্ভব হয়নি এবং তাঁর ছেলে স্টার্লিং বারবার কিউব স্কাউট হুইসেল বাজিয়ে সাহায্যের জন্য সঙ্কেত দেয়।
তামি বলেন, তিনি মূলত তাঁর ছেলেকে একটি ক্যাম্পে নামিয়ে দিতে গিয়েছিলেন। গাড়ি নিয়ে পাহাড়ি রাস্তা ধরে যাত্রার এক পর্যায়ে জিপিএস কাজ করা বন্ধ করে দেয়, ফলে পথ হারিয়ে ফেলেন তারা।
উদ্ধার দলের ফেসবুক পোস্টে বলা হয়, প্রশিক্ষণের জন্য আগে থেকেই আশেপাশে অবস্থানরত উদ্ধার কর্মীরা দ্রুত একটি কমান্ড পোস্ট স্থাপন করে এবং জটিল, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা রাস্তাগুলোর মানচিত্র তৈরি করে অনুসন্ধান শুরু করেন।
একদল ক্যাম্পার একটি ইমার্জেন্সি নম্বরে মেসেজ পাঠিয়ে জানান, তারা নিখোঁজ গাড়ির মতো দেখতে একটি গাড়ি দেখেছেন। এরপর উদ্ধারকারীরা প্রথম নোটটি খুঁজে পান, যাতে লেখা ছিল,
“We are ahead, up the road to the right. Please call 911 to get help for us. Thank you!”
(“আমরা সামনের দিকে, ডানদিকে রাস্তায় আছি। দয়া করে ৯১১-এ কল করে আমাদের জন্য সাহায্য আনুন। ধন্যবাদ!”)
পরবর্তী এক কিলোমিটার অগ্রসর হলে উদ্ধারকারীরা আরেকটি নোট খুঁজে পান, যেখানে নিখোঁজদের নাম ও ফোন নম্বর লেখা ছিল। এরপরই তারা মা-ছেলেকে খুঁজে পান।
উদ্ধারের মুহূর্তটি স্মরণ করে তামি বলেন, “আমি পিছনে তাকিয়ে দেখি একটি ট্রাক আমাদের দিকে আসছে। তখন মনে হয়েছিল, এটাই জীবনের সবচেয়ে স্বস্তির মুহূর্ত।”
তারা গাড়িতেই রাত কাটিয়েছিলেন বন্য প্রাণীর হাত থেকে বাঁচার জন্য এবং ভাগ্যক্রমে কিছু খাবার সঙ্গে ছিল বলেও জানান তিনি।
পরে উদ্ধারকারীরা গাড়িটি উদ্ধার করে এবং মা-ছেলেকে নিরাপদে পরিবারের কাছে পৌঁছে দেন।
এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করলো, সৃজনশীলতা ও ধৈর্য্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ – এমনকি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণেও।
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
শেয়ার করুন