ইমিগ্রেশন অভিযানে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য সংকট: ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপোর্ট
ছবিঃ এলএবাংলাটাইমস
যুক্তরাষ্ট্রে আগ্রাসী ইমিগ্রেশন আইন প্রয়োগের কারণে শিশুদের মধ্যে মারাত্মক মানসিক স্বাস্থ্য সংকট তৈরি হচ্ছে বলে নতুন এক গবেষণা রিপোর্টে সতর্ক করা হয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রিভারসাইড (UCR) থেকে প্রকাশিত এই রিপোর্টটি Psychiatric News-এ প্রকাশিত হয়েছে।
ইউসিআরের স্কুল অব মেডিসিনের মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, আটক, বহিষ্কার এবং কর্মস্থলে অভিযান শিশুদের মধ্যে ব্যাপক মানসিক আঘাত সৃষ্টি করছে। এ প্রভাব পড়ছে শুধু অভিবাসী শিশুদের উপর নয়, যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া শিশুদের ওপরও।
“মনোরোগবিদ্যা একটি ক্লিনিক্যাল শাখা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আর বাইরে থাকতে পারে না,” লেখকরা উল্লেখ করেছেন। “এখন সময় এসেছে কাঠামোগত ও প্রজন্মান্তরের ট্রমা কীভাবে বোঝা, নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয়—তা পুনর্বিবেচনা করার।”
গবেষণায় বলা হয়েছে, পরিবার বিচ্ছেদের ভয়ে শিশুরা দীর্ঘস্থায়ী উদ্বেগ, বিকাশজনিত ব্যাঘাত ও শিক্ষাগত সমস্যার শিকার হচ্ছে। নবজাতক ও অল্পবয়সী শিশুদের মধ্যে সংযুক্তি (attachment) সমস্যার ঝুঁকি বাড়ছে, স্কুলগামী শিশুদের মধ্যে ভয় ও উদ্বেগ বেড়ে যাচ্ছে, আর কিশোররা “parentification” নামে পরিচিত অকাল প্রাপ্তবয়স্ক দায়িত্ব নিচ্ছে।
“আমরা দীর্ঘস্থায়ী ভয়, বিচ্ছিন্ন সংযুক্তি ও প্রজন্মান্তরের ট্রমার ভয়াবহ প্রভাব প্রত্যক্ষ করছি,” বলেছেন ড. লিসা ফোরচুনা, ইউসিআরের সাইকিয়াট্রি ও নিউরোসায়েন্স বিভাগের প্রধান। “অভিভাবকের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ভয় বা বাস্তবতা একটি শিশুর বিকাশ ও মানসিক স্বাস্থ্যের ধরণ পুরোপুরি বদলে দেয়।”
রিপোর্টে গণমাধ্যম, নীতিনির্ধারক ও চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে যেন তারা ইমিগ্রেশন নীতির এই “মানবিক মূল্য” সরাসরি স্বীকার করে এবং সবচেয়ে ছোট ও ঝুঁকিপূর্ণ শিশুদের মানসিক সুস্থতাকে অগ্রাধিকার দেয়।
সহলেখক ড. কেভিন গুতিয়েরেজ বলেন, “বর্তমান প্রয়োগপদ্ধতিকে মানবিক বলা কঠিন। এসব কর্মকাণ্ড শিশুদের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী চাপ ও মানসিক আঘাত তৈরি করছে, যা PTSD-এর পর্যায়ে পৌঁছায়।”
রিপোর্টে কমিউনিটি তথ্য ও কেস স্টাডিও যুক্ত করা হয়েছে, যেখানে গবেষকরা দেখিয়েছেন—দারিদ্র্য, বর্ণবৈষম্য এবং অব্যাহত অভিযানের হুমকির কারণে ট্রমা এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়ছে।
গ্রীষ্মের শুরু থেকে শুরু হওয়া নতুন ইমিগ্রেশন অভিযানের ঢেউ আইনি চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও চলছে। দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় একের পর এক অভিযান চালানো হচ্ছে। এর মধ্যে লস অ্যাঞ্জেলেসে এই সপ্তাহে পরিচালিত একটি অভিযানের সময় ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম ভাষণ দেন।
এখন পর্যন্ত এসব অভিযানে অন্তত দুজনের মৃত্যু হয়েছে—গত জুলাইতে ক্যামারিলোতে এক কৃষিশ্রমিক গ্রীনহাউস থেকে পড়ে মারা যান এবং বৃহস্পতিবার মনরোভিয়ায় হোম ডিপো থেকে পালানোর সময় এক ব্যক্তি গাড়িচাপায় নিহত হন।
লস অ্যাঞ্জেলেস ইউনিফায়েড স্কুল ডিস্ট্রিক্ট এই সপ্তাহে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু উদযাপন করলেও তা দ্রুত ম্লান হয়ে যায়, যখন আরলেটা হাই স্কুলের বাইরে এক ১৫ বছর বয়সী প্রতিবন্ধী কিশোরকে আটক করা হয়।
“এ ধরনের ঘটনা আমাদের কমিউনিটিকে গভীরভাবে আঘাত করে; এটি পুনরাবৃত্তি হতে দেওয়া যাবে না,” সংবাদমাধ্যমকে বলেন স্কুল সুপারিনটেনডেন্ট আলবার্তো কার্ভালো।
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার করুন