নগদে ভাড়া নেওয়ার সুযোগ দিল উবার, চালকদের উদ্বেগ বাড়ছে নিরাপত্তা নিয়ে
নিউইয়র্কে কড়া নিরাপত্তায় মসজিদগুলো, ব্রঙ্কসে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে বন্দুকধারীদের হামলায় ৪৯ জন নিহতের ঘটনায় ইউরোপের ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের মসজিদগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য জানিয়েছে, ধর্মীয় স্থাপনাগুলোতে টহল জোরদার করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের মসজিদগুলোতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ১৫ মার্চ শুক্রবার থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের মসজিদগুলোতে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ। নিউইয়র্কের প্রধান প্রধান মসজিদগুলোর সামনে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ও ডগ স্কোয়াড নিয়ে পুলিশি পাহারা দেখা গেছে। কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে মুসলমানরা মসজিদে নামাজ আদায় করছেন। উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (১৫ মার্চ) নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে বন্দুকধারীর হামলা হয়। শহরের হাগলি পার্কমুখী সড়ক দীন এভিনিউতে আল নুর মসজিদ এবং লিনউডের আরেকটি মসজিদের কাছ থেকে গুলির শব্দ শোনা যায়। এই হামলায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৪৯ জন নিহতের কথা নিশ্চিত হওয়া গেছে। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ২০ জন। হামলার পর চার সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে এক অস্ট্রেলীয় নাগরিক রয়েছেন। খবর ইউএনএ’র।
এদিকে মুসলিম বিশ্ব, যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ নিউজিল্যান্ডে মসজিদে হামলার নিন্দা জানিয়েছে। পশ্চিম ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে মুসলিম মানুষের বাস ফ্রান্সে। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে ইসলামি জঙ্গিরা বড় ধরনের দুটি হামলা চালায়। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টোফ কাস্টানার শুক্রবার টুইটারে জানিয়েছেন, নিউ জিল্যান্ডে হামলায় ৪৯ নিহতের ঘটনায় ফ্রান্সের ধর্মীয় স্থাপনার কাছাকাছি স্থানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ধর্মীয় স্থাপনাগুলো ঘিরে টহল জারি থাকবে। যুক্তরাজ্যের স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড জানিয়েছে, লন্ডনের মসজিদগুলোকে ঘিরে টহলের ব্যবস্থা করা হবে।
অপরদিকে গত ১৫ মার্চ শুক্রবার জ্যামাইকায় বাংলাদেশীদের পরিচালিত নিউইয়র্কের সবচেয়ে বড় ইসলামী প্রতিষ্ঠান জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের সামনের সড়কটি জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার (জেএমসি ওয়ে)-এর নামকরণ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে নিউইর্য়ক সিটি পুলিশ কমিশনার জেমস ও’নীল বলেন, ক্রাইস্টচার্চ হত্যাকা-ের পর নিউইয়র্কের মসজিদগুলোতে বিশেষ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মুসলমানদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। শুক্রবার জুমার নামাজের পর জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ইউএস কংগ্রেসম্যান গ্রেগরি মিক্স ও কংগ্রেসওমেন গ্রেস মেংও ক্রইস্টচার্চ হত্যাকা-ের নিন্দা জানিয়ে নিউইয়র্কের মুসলমানদের পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। এছাড়াও স্টেট অ্যাসেম্বলিম্যান ডেভিট ওয়েপ্রিন, সিটি কাউন্সিলম্যান ল্যারি ল্যান্সম্যান ও ডেরিক মিলার তাদের বক্তব্যে নিউইয়র্কে সব ধর্মের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের বিষয়টি উল্লেখ করেন এবং মুসলমানদের নির্ভয়ে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।
কংগ্রেসওম্যান আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও’র নিন্দা: নিউজিল্যান্ডের ক্রাইটচার্চের মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন নিউইয়র্কের ১৪ কংগ্রেশনাল ডিষ্ট্রিক্ট থেকে নির্বাচিত কংগ্রেসওম্যান আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও। তিনি শুক্রবার জুম্মার নামাজের সময় ব্রঙ্কেসর বাংলা বাজার মসজিদে মুসল্লিদের সাথে এক মতবিনিয়ে অংশ নেন। এসময় তার সাথে চীফ অব স্টাফ সৈক চক্রবর্তী, সেক্রেটারী মিস নওরিন এবং বাংলা বাজার মসজিদের প্রেসিডেন্ট আলহাজ গিয়াসউদ্দিন সহ কমিউনিটির গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলা বাজার মসজিদে মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে ওকাসিও বলেন, আমি নিউইয়র্কে বসবাসরত মুসলমানদের প্রতি সহমর্মিতা জানাতে আজ এখানে এসেছি। নিউইয়র্কে যাতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেব্যাপারে প্রশাসন খুবই সতর্ক রয়েছে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে কাধে কাধ মিলিয়ে আমরা যেকোন সমস্যার মোকাবেলা করবো। তিনি নিহতদের আতœার শান্তি, আহতদের দ্রুত আরোগ্য এবং তাদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, আপনাদের যেকোন প্রয়োজনে আমি ও আমার অফিস সবসময় পাশে আছে। কে কোন ধর্ম বা জাতির, কে বৈধ বা অবৈধ তা আমাদের বিবেচ্য নয়। আমরা সকলের জন্য শর্তহীনভাবে কাজ করতে প্রস্তুত। তিনি যেকোন প্রয়োজনে তার সেক্রেটারীর সাথে যোগাযোগের আহ্বান জানান।
পরে একজন জুইস ব্যবসায়ী মি. ওবাদ নিউজিল্যান্ডে সন্ত্রাসী ঘটনার নিন্দা জানিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।
বাংলা বাজার মসজিদের সভাপতি আলহাজ গিয়াস উদ্দিন মুসলমানদের জন্য একটা ভিতিকর সময়ে মুসমানদের সাহস জানানোর জন্য কংগ্রেসওম্যান আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
অ্যাসেম্বলিওম্যান ক্যাটালিনা ক্রুজের নিন্দা: নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে কাপুরোষিত হামলায় হতাহতদের স্মরণে নিউইয়র্কে আয়োজিত আন্তঃধর্মীয় ও সর্ব কমিউনিটি প্রার্থনা ও সংহতি সমাবেশে নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলিওম্যান ক্যাটালিনা ক্রুজ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে নিউইয়র্কের মুসলিম কমিউনিটির সর্বোচ্চ নিরাপত্তার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, শুধু পুলিশ নয়, প্রত্যেক নিউইয়র্কবাসী মুসলমানদের পাশে রয়েছে। গত ১৬ মার্চ শনিবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের ডাইভার্সিটি প্লাজায় এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশের শুরুতে কোরআন থেকে তেলাওয়াতের পাশাপাশি অন্য সব ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে পাঠ করা হয়। পরে ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে নিহতদের নাম পড়ে শোনানো হয়।
ব্রঙ্কসে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ: অপরদিকে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইষ্টাচর্চের দুটি মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে গত ১৬ মার্চ শনিবার বিকেল তিনটায় সিটির ব্রঙ্কসে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ আমেরিকান কমিউনিটি কাউন্সিল (বিএসিসি) আয়োজিত এই সমাবেশে অংশ নেন নিউইয়র্ক ষ্টেট সিনেটর লুইস সেপুলভদা, সিটি কাউন্সিম্যান রুবিন দিয়াজ (সিনিয়ার) ও ফার্নান্দোজ ওভেরা, সাবেক পুলিশ কমিশনার জো রামোস, বিএসিসি’র সভাপতি এন মজমুদার, বাংলা বাজার জামে মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, আলহাজ গিয়াস উদ্দিন, মূলধারার রাজনীতিক আব্দুস শহীদ, বিএসিসি’র সাধারণ সম্পাদক নজরুল হক, বাফা’র সভাপতি ফরিদা ইয়াসমীন, ডা. নাহিদ খান, ব্রঙ্কস বাংলাদেশ এসোসিয়েশনের সভাপতি এস ইসলাম মামুন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান, নতুন প্রজন্মের হামি হাসান ও তার্কিস কমিউনিটির মিসে আয়েসা সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
সমাবেশে বক্তারা ক্রাইষ্টাচর্চের মসজিদে হামলার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী এবং নিহতদের মাগফেরাত ও আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন। এতে বিশেষ মুনাজত করা হয়। সমাবেশে বক্তারা নিউজিল্যান্ডে সন্ত্রাসী ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান এবং ঘাতকের দৃষ্টান্ত শাস্তি দাবী করেন।
এলএবাংলাটাইমস/এনওয়াই/এলআরটি
শেয়ার করুন