আপডেট :

        আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোট উপলক্ষে ১৪১টি উপজেলায় ব্যাংক বন্ধ থাকবে

        ব্যারিস্টার সুমনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি মুজিবুল হক চুন্নুর

        ভুড়িভোজের আয়োজন, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

        যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর এক সেনা সার্জেন্টকে গ্রেপ্তার করেছে রাশিয়া

        জেলেনস্কিকে হত্যার ষড়যন্ত্র, দুই ইউক্রেনীয় কর্নেল আটক

        দক্ষিণ আফ্রিকায় বহুতল ভবনধস, এখনো নিখোঁজ ৪৮

        ভবিষ্যতে আদালতের নির্দেশ লঙ্ঘন করলে কারাদণ্ড হতে পারে ট্রাম্পের বিচারক

        পুলিৎজার পেল রয়টার্স, ওয়াশিংটন পোস্ট

        ছয় বছরের রাষ্ট্রপতির মেয়াদের জন্য পঞ্চমবারের মতো শপথ নিয়েছেন পুতিন

        গাজা থেকে মিসরে যাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ রাফাহ ক্রসিংয়ের নিয়ন্ত্রণ

        মালদ্বীপ বয়কটের ডাক দেন ভারতীয়রা

        হাসপাতালেই স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করলেন এক ব্যক্তি

        হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল

        ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল

        কম বয়সে উচ্চ রক্তচাপ

        নিরপেক্ষভাবে সেবা প্রদানের জন্য নবীন পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা প্রদান করেছেন আইজিপি

        দেশের পশ্চিমাঞ্চলের চেয়ে পূর্বাঞ্চলে রেল দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে

        সিরাজগঞ্জে মূলহোতাসহ ৫ প্রিজাইডিং অফিসার গ্রেপ্তার

        ভারতের লোকসভা নির্বাচনের তৃতীয় দফার ভোট আজ

        মাসজুড়ে টানা তাপপ্রবাহে নতুন রেকর্ড গড়েছে চলতি বছরের এপ্রিল মাস

প্রবাসে হঠাৎ চোখে বাংলাদেশ!

প্রবাসে হঠাৎ চোখে বাংলাদেশ!

বিশ্বের সবচেয়ে বাসযোগ্য শহরে
এসেছে বসন্ত। সূর্য উঠেছে ঝলমলিয়ে।
শহরের শতাব্দী প্রাচীন ফ্লিন্ডার্স
স্ট্রিট স্টেশনের গম্বুজে ঝিলিক
দিচ্ছে রোদ। আকাশচুম্বী অট্টালিকার
ওপর দিয়ে উড়ে গেল একটা গাংচিল।
আনন্দ আর পানভোজনের জায়গা
হিসেবে সুখ্যাত মেলবোর্নের
সাউথব্যাংক এলাকায় ঢল নেমেছে
নানা দেশি পর্যটকের। পুরো দৃশ্যটা
আপনি দেখছেন ‘বাংলাদেশ’ লেখা
ঢাউস কাচের পর্দার ভেতর দিয়ে।
একজন বাংলাদেশির জন্য
অস্ট্রেলিয়ার মতো দূরদেশে এর চেয়ে
চমৎকার দৃশ্য আর কী হতে পারে!
ঘটনাটা খুলেই বলা যাক।
গত মাসের মাঝামাঝি। পথ ভুলে চলে
এসেছি সাউথব্যাংক এলাকায়। সেই
ভুল এমন আশীর্বাদ হয়ে উঠবে কে জানত।
ফ্লিন্ডার্স স্ট্রিট স্টেশনে নেমে
যাওয়ার কথা সোয়ানস্টন স্ট্রিট। ভুল
করে বেরিয়ে গেছি সাউথব্যাংক
বহির্গমন দিয়ে। সামনের সংযোগ
সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে ভাবছি ঘুরপথে
আবার না কতখানি হেঁটে যেতে হয়।
তখনো জানি না আর মাত্র কয়েক কদম
সামনেই আমার জন্য অপেক্ষা করে
আছে ‘বাংলাদেশ’।
দুপুর বারোটা মতো বাজে। বসন্ত
বাহারে মুখরিত শহর মেলবোর্ন। রোদ
ঝিলিক দিচ্ছে ইয়ারা নদীর
পানিতে। খানিক দূরেই আকাশ ছুঁয়ে
দাঁড়িয়ে বিখ্যাত ক্রাউন ক্যাসিনো।
নদীর পাড়ে সবুজ ঘাসের জমিনে অলস
শুয়ে-বসে আছে অনেকে। নদীতে ঢেউ
তুলে একটা পর্যটকনৌকা চলে গেল।
ফিরতি রাস্তা খুঁজতে খুঁজতে
এগোচ্ছি, এর মধ্যেই আচমকা ব্রেক কষতে
হলো। সামনে ডান পাশ লেখা
‘বাংলাদেশ’। না, স্রেফ কোনো
দেয়াললিখন নয়। কেউ হুট করে আঁকিবুঁকি
কেটে গেছে তেমন তো নয়ই। ইয়ারা
নদীর উত্তর আর দক্ষিণ পাড়কে একসঙ্গে
বেঁধেছে এই সেতু। সেতুর বেষ্টনী
ঘিরে রেখেছে ঝকমকে স্বচ্ছ কাচের
পর্দা। সেই কাচের পর্দা বা দেয়ালেই
বড়সড় ইংরেজি হরফে লেখা
‘বাংলাদেশ’। ঘটনা সেখানেই শেষ
নয়। নিচে আবার আরেকটু ছোট হরফে
বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরের নাম
লেখা—ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট,
ময়মনসিংহ...। কী অভাবনীয় ব্যাপার!
দেখিবামাত্র যেন গৌরবের ক্ষুধাটা
মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। এ সময়কার
একটা জনপ্রিয় বিজ্ঞাপনচিত্রে
দেখেছি একজন প্রবাসী
বাংলাদেশি বলছে, পেটের ক্ষুধা
ছাড়াও আরও একটা বড় ক্ষুধা আমাদের
আছে। সেটা ‘গৌরবের ক্ষুধা রে ভাই,
গৌরবের ক্ষুধা।’ সেই গৌরবের ক্ষুধার
বশেই দাঁড়িয়ে যাওয়া। বিশ্বের
সবচেয়ে বাসযোগ্য শহরের
প্রাণকেন্দ্রে এমন যত্ন করে লেখা
বাংলাদেশের নাম, গৌরব করার মতো
ব্যাপার তো বটেই।
বাংলাদেশের নাম
চলচ্চিত্র নির্মাণ-বিষয়ক কোর্স করতে
তিন মাসের জন্য মেলবোর্ন শহরে
এসেছি। যাওয়ার কথা এসিএমআই
(অস্ট্রেলিয়ান সেন্টার ফর মুভিং
ইমেজ) ভবনে। সেটা তোলা থাকল।
মনের খুশিতে বিনা কারণেই ব্রিজে
দু-তিনটে চক্কর দিয়ে ফেললাম। পথ
চলতি নানা রঙা মানুষজন কী ভাবল
কে জানে।
মেলবোর্ন নগরীতে দ্বিতীয়বারের
মতো এসেছি। আগে শুনিনি,
বাংলাদেশিদের জন্য এমন দারুণ একটা
উপহার ভিক্টোরিয়া রাজ্য সরকার
রেখে দিয়েছে মেলবোর্ন শহরের
প্রাণকেন্দ্রে। শুরু করলাম খোঁজখবর। মূল
ভরসা মেলবোর্ন শহরের অফিশিয়াল
ওয়েবসাইট।
১৮৫১ সালে স্বর্ণ খনির সন্ধান মেলার
পর থেকে অস্ট্রেলিয়া হয়ে ওঠে
সারা বিশ্বের মানুষের জন্য লোভনীয়
এক ভূ-খণ্ড। ভিক্টোরিয়া রাজ্যের
ইতিহাস বলছে, ইস্পাতের তৈরি এই
সেতু প্রথম চালু হয়েছিল আজ থেকে
প্রায় ১২৭ বছর আগে। সেতুটি তৈরি
করেছিলেন ডেভিড মুনরো। বয়সের
ভারে অকেজো হয়ে যাওয়ার পর এই
সেতুটি নতুনভাবে তৈরির দাবি ওঠে
বছর বিশেক আগে। ২০০৬ সালে নতুনরূপে
চালু হয় এই সেতু।
স্যান্ডরিজ সেতুর ১২৮টি কাচের পর্দা
অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত বিভিন্ন
দেশের অভিবাসীদের প্রতিনিধিত্ব
করে। দেশের নামের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে
শহরের নামও। বাংলাদেশ অংশে
শহরগুলোর নামের মধ্যে আছে—ঢাকা,
চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা,
নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও খুলনা।
সেতুর কাচের পর্দায় দেওয়া তথ্যমতে,
১৯৯০ সাল থেকে ব্যাপক হারে
অস্ট্রেলিয়ায় আসতে শুরু করেন
বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশিদের
বড় অংশ এখানে পাড়ি জমিয়েছেন
ছাত্র এবং পেশাজীবী হিসেবে।
কাচের পর্দায় লেখা আছে সেই তথ্যও।
২০০১ সাল পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায়
অভিবাসী বাংলাদেশির সংখ্যা ৯
হাজার ৭৮। সংখ্যাটা খুব কম মনে হলো।
সে কারণেই পরে শরণাপন্ন হয়েছিলাম
ডক্টর মুনির আহমদ খানের। মেলবোর্নে
বসবাসরত এই বাংলাদেশি মোনাশ
বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ ফেলো।
তাঁর গবেষণার উল্লেখযোগ্য
জায়গাজুড়ে আছে অভিবাসন। তিনি
জানালেন, অস্ট্রেলিয়ায়
বাংলাদেশিদের সংখ্যা এখন প্রায়
৫৫ হাজার।
নানা রঙের অভিবাসী
বাঙালি কিংবা আইরিশ, ইংরেজ
অথবা চৈনিক—কত জাতের, কত রঙের
মানুষ যুগে যুগে এসে মিশেছে
অস্ট্রেলিয়ার জনস্রোতে। সেই সব
বহুবিধ মানুষের প্রতীক হিসেবে
স্যান্ডরিজ সেতুতে যুক্ত হয়েছে ভাস্কর্য
‘ট্র্যাভেলস’ বা ভ্রমণার্থী। খ্যাতিমান
লেবানিজ ভাস্কর নাদিম করম
অভিবাসীদের এই বৈচিত্র্যের কথা
মাথায় রেখে তৈরি করেছেন
ইস্পাতের সিরিজ ভাস্কর্য। নানা
আকৃতি আর নানা ভঙ্গিমার ১০টি
ভাস্কর্যের প্রথমটির নাম গায়িপ। সেটি
প্রতিনিধিত্ব করে অস্ট্রেলিয়ার আদি
বাসিন্দা বা এবরজিনাল
অস্ট্রেলিয়ানদের এখানে বসবাস শুরুর
সময়কে। ধারণা করা হয়, ৫০ বা ৭০
হাজার বছর আগে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস
শুরু করেন তাঁরা। ১৯৭৫-২০০৫ পর্যন্ত সময়কে
বিবেচনা করা হয়েছে এশিয়া ও
মধ্যপ্রাচ্যের মানুষের অভিবাসনের সময়
হিসেবে। যাদের একটি বড় অংশ
শিক্ষার্থী ও পেশাজীবী।
গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ, সিডনি হারবার
ব্রিজ, গ্রেট ওশান রোড, ফিলিপ
আইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ায় দেখার মতো
জায়গা বা স্থাপনার তালিকা যেন
শেষ হওয়ার নয়। কিন্তু তিন মাসের
অস্ট্রেলিয়া সফরে অন্যতম আনন্দময়
অভিজ্ঞতা হয়ে থাকল মাত্র ১৭৮
মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু। গায়ে
সগৌরবে ঝলমল করছে বাংলাদেশের
নাম। এর চেয়ে বড় দর্শনীয় স্থান একজন
প্রবাসীর কাছে আর কোনটা হতে
পারে?
তথ্যসূত্র: সিটি অব মেলবোর্নের
অফিশিয়াল ওয়েবসাইট ওনলি
মেলবোর্ন ডট কম

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত