ব্র্যাক ব্যাংকে জালিয়াতি থেমে নেই, জড়িত কর্মকর্তারাই
বেসরকারি খাতের ব্যাংক ব্র্যাকে একের পর এক জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে। তবে এ
ধরনের জালিয়াতির সঙ্গে খোদ ব্যাংকটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জড়িত খাকার
অভিযোগ তুলেছেন অর্থনীতিবিদরা।
রোববার (০৮ মার্চ) রাজধানীর গুলশান
ব্র্যাক ব্যাংকের শাখা থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে স্থায়ী আমানতের ৯০ কোটি
টাকা উত্তোলন করতে গিয়ে ধরা পড়েছে প্রতারক চক্র।
১১ সদস্যের ওই
প্রতারক চক্রটি আমানতকারীর নকল আমমোক্তার তৈরি করে ব্যাংকের অ্যাডভাইসের
ফটোকপি দিয়ে টাকা তুলতে এসেছিল। অ্যাডভাইসের ফটোকপির কপি দেখে সন্দেহ হলে
পরবর্তীতে তাদের পুলিশে সোর্পদ করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
গ্রাহকের
টাকা লেনদেনের জন্য অ্যাডভাইসের কপি ব্যাংকের এক শাখা থেকে অন্য শাখায়
পাঠানো হয় ব্যাংকের নিজস্ব লোকের মাধ্যমেই। কিন্ত ব্র্যাক ব্যাংকের
অ্যাডভাইসের কপি সাধারণ মানুষের হাতে গেলো কি করে?
এ বিষয়ে জানতে
চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. সালেহ উদ্দিন বলেন, এফডিআরের টাকা
তোলার জন্য যেসব কাগজপত্র তৈরি করা প্রয়োজন, একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে তা
করা সম্ভব নয়।
ড. সালেহ উদ্দিন আরও বলেন, এ ধরনের কাজ ব্যাংকের
লোকজনই করে দেয়। তারা এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত রয়েছে। এদেরকে দ্রুত আইনের
আওতায় আনা দরকার। না হলে আরও বাড়তে পারে জালিয়াতি।
রাকিবুল হাসান,
ব্র্যাক ব্যাংকের হিসাব নম্বর ১৫০১১০২৩৬৯৬৭৭০০১। রাকিবুল ব্র্যাক ব্যাংকের
প্রতারণার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ২০১৩ সালের ২৩ নভেম্বর গুলশান-১ এর নিকেতনে
ব্র্যাক ব্যাংকের এটিএম বুথে কার্ড দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা আটকে যায়। ব্যাংক
কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা তিন কর্মদিবসের মধ্যে এসে কার্ড নিয়ে যেতে বলেন।
টাকা
আমার টাকা খুব জরুরি হওয়াতে চেক দিয়ে ১ লাখ টাকা তুলে বাসায় চলে আসি।
আনুমানিক রাত ১২টার দিকে ইমেইলে ব্যালেন্স চেক করতে গিয়ে দেখি পাসওয়ার্ড
চেইঞ্জ করা হইছে ৩০ ঘণ্টা আগে।
রাতেই ব্র্যাক ব্যাংকের কাস্টমার
কেয়ারে (১৬২২১) ফোন করে সংক্ষেপে আগের পুরো কাহিনী তাদের জানালাম। আমার
হিসাবের সবধরনের লেনদেন বন্ধ করে দেওয়া ও কতটাকা রয়েছে তা জানতে চাইলে এত
রাতে ব্যালেন্স বলার সিস্টেম নাই বলে জানানো হয়।
দু’দিন পর
ব্যাংকে গিয়ে ব্যালেন্স জানতে চাইলে ব্যাংক কর্মকর্তা বললেন, স্যার আপনার
অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্সতো জিরো। আমার সবগুলো টাকা তুলে নেওয়া কোনো ভাবেই
ব্যাংক কর্মকর্তা ছাড়া অন্য কারও দ্বারা সম্ভব নয়।
কারণ যে মোবাইল
নম্বরটা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করি এটা সাধারণ মানুষের পক্ষে জানা
জানা সম্ভব নয়। হিসাবের অন্য তথ্যগুলোও একমাত্র ব্যাংক কর্মকর্তারা জানে।
এখান থেকে বোঝা যায় ১০০% ব্যাংক কর্মকর্তা এই জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত।
২৩-১১-১৩
ও ২৪-১১-১৩ দুই দিনে ব্র্যাক ব্যাংকের জালিয়াতি চক্র আমার অ্যাকাউন্টে ৮টি
ট্রানজেকশন করে ১ লাখ ১৫ হাজার ৬৩৩ টাকা হাতিয়ে নেয়।
সাবেক
ব্যাংকার মামুন রশিদ জানান, একজন প্রবাসী গ্রাহকের ৮০-৯০ কোটি টাকা এফডিআর
করা রয়েছে, এটা ব্যাংক কর্মকর্তারা জড়িত না থাকলে জানা সম্ভব না।
ব্র্যাক
ব্যাংকের মিরপুর শাখার গ্রাহক ওবায়দুর রহমানের হিসাব থেকে ২৫ হাজার টাকা
খোয়া গিয়েছিল। ব্র্যাক তার টাকা ফেরত দেয়নি। পরবর্তীতে বাংলাদেশ ব্যাংকে
অভিযোগ করলে তদন্তের পর টাকা ফেরত পান ওবায়দুর।
এছাড়াও রাজিবুল
হোসাইন, রকিবুল হাসান ও খোরশেদ আলমের হিসাব থেকে ২লাখ ২২হাজার ৩৬৩টাকা অন্য
হিসাবে স্থানান্তর হওয়ার পর অভিযোগ করেছিলেন।
বহুদিন ঘোরানোর পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অভিযোগ করলে ১৮লাখ ৭৩ হাজার ৮৭১ টাকা ফেরত দেয় ব্র্যাক ব্যাংক।
ব্র্যাক
ব্যাংক লিমিটেডের হেড অব কমিউনিকেশনস জারা জাবীন মাহবুব এঘটনার সঙ্গে
ব্যাংকের কেউ জড়িত কিনা জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করেতে রাজি হননি।
অ্যাডভাইস
তৈরির ব্যাপারে তিনি বলেন, অনলাইন থেকে কেউ ব্র্যাক ব্যাংকের লোগো ডাউনলোড
করে অ্যাডভাইস তৈরি করেছে। আগের ঘটনাগুলোর বিষয়ে জানাতে তিনি জানান, এ
ঘটনাগুলোর বিষয়ে খোঁজ নিয়ে বিস্তারিত পরে জানাতে পারবো।
শেয়ার করুন