আপডেট :

        গাজা যুদ্ধ: ইইউ-এর ভূমিকা প্রকাশ্যে, দায়িত্ববিমুখতার নতুন অজুহাত উঠে আসছে

        ২৯ বছরের অপেক্ষা শেষ: সালমান শাহ হত্যা মামলায় পুলিশের প্রথম পদক্ষেপ ইস্কাটন ফ্ল্যাটে

        এমন ওপেনিং দেখা যায়নি অনেকদিন: তবু বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ ২৯৯-এ আটকে যায়

        উপদেষ্টা পরিষদ: ২ আইন চূড়ান্ত, ৩টির নীতিগত অনুমোদন

        ট্রাম্পের এশিয়ান ট্যুর শুরু: শি’র সঙ্গে 'ফ্যান্টাস্টিক ডিল' এর প্রত্যাশা বাড়ল

        সরকারি স্থবিরতায় আগামী মাসে ক্যালফ্রেশ সহায়তা বিলম্বিত হতে পারে: নিউজম

        সরকারি স্থবিরতায় খাদ্যসংকট মোকাবিলায় ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের ঘোষণা নিউজমের

        একই সফটবল দলের চার সদস্যের মরদেহ উদ্ধার, সন্দেহজনক ওভারডোজে মৃত্যু

        যুক্তরাষ্ট্রে পারিবারিক স্বাস্থ্যবিমার গড় খরচ প্রায় ২৭,০০০ ডলারে পৌঁছেছে

        ডাকাতি করতে গিয়ে নিজেই বিপদে, রেসলারের হাতে মার খেয়ে গ্রেপ্তার

        হোয়াইট হাউসের ইস্ট উইং ভেঙে নতুন বলরুম নির্মাণের ঘোষণা ট্রাম্পের

        প্রশান্ত মহাসাগরে সন্দেহভাজন মাদকবাহী নৌযানে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় হামলা, নিহত ৩

        লস এঞ্জেলেসে অভিবাসন অভিযানে গুলিবিদ্ধ টিকটক নির্মাতা ও মার্কিন মার্শাল

        দীপিকা-রণবীরের বেবি দুয়া: মায়ের চোখ নিয়ে ইন্টারনেটে ভাইরাল হচ্ছে ছবি

        সরকারে দলীয় কেউ থাকলে সরিয়ে দিতে হবে: রিজভী

        গ্রিন টি না কি লাল চা, কোনটিতে উপকার বেশি

        থাইল্যান্ড সীমান্তে স্টারলিংকের অবৈধ ব্যবহার: মিয়ানমার স্ক্যাম সেন্টারের নতুন শক্তি।

        নিউইয়র্কের পেন স্টেশনে নবজাতক ফেলে যাওয়া মা গ্রেপ্তার

        অভিষেকে ৫ উইকেট ‘বুড়ো’ আফ্রিদির

        উবার ও লিফট চালকদের জন্য বাধ্যতামূলক ইউনিয়ন আলোচনার আইন পাশ করলো ক্যালিফোর্নিয়া

নুসরাত হত্যার স্বীকারোক্তিতে লোমহর্ষক বর্ণনা

নুসরাত হত্যার স্বীকারোক্তিতে লোমহর্ষক বর্ণনা

ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির গায়ে আগুন ধরিয়ে হত্যার ঘটনায় দায় স্বীকার করে আরও একজন জবানবন্দি দিয়েছেন। বুধবার বিকালে ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম শরাফ উদ্দিন আহমেদের আদালতে আবদুর রহিম ওরফে শরিফ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এ নিয়ে তিনজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেন।

এর আগে ১৪ এপ্রিল ফেনীর আদালতে জবানবন্দি দেন দুই আসামি নুর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন সেলিম। তাদের বক্তব্যে জানা গেছে রাফির গায়ে আগুন দেয়ার ঘটনার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের আদ্যোপান্ত।

তিনজনের স্বীকারোক্তিতেই জানা গেছে, অধ্যক্ষের নির্দেশেই তারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটান। বিষয়টি নিয়ে তাদের দফায় দফায় বৈঠকও হয়। কারা কী করবেন সেটার পূর্ণাঙ্গ একটি ছকও আঁকেন। তাদের স্বীকারোক্তিতে নুসরাতের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়ার পাওয়া গেছে রোমহর্ষক বর্ণনা। এর আগে পিআইবিও জানিয়েছিল, অধ্যক্ষের নির্দেশেই নুসরাতের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।

সূত্র জানায়, নুর উদ্দিনের জবানবন্দিতে জানান, ২৭ মার্চ পিয়ন দিয়ে নুসরাতকে নিজের কক্ষে ডেকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন সিরাজ। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় কারাগারে যান অধ্যক্ষ সিরাজ।

সিরাজের সঙ্গে ফেনী কারাগারে দেখা করতে যান নুর উদ্দিন, হাফিজ, আফছার, আলাউদ্দিন, জনি, মাকসুদ। তারা দেখা করতে গেলে তাদের কিছু করার নির্দেশ দেন অধ্যক্ষ। আওয়ামী লীগ নেতা ও কাউন্সিলর মাকসুদকে জানানোর পর সিরাজউদ্দৌলা মুক্ত পরিষদ গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। যার আহ্বায়ক হন নুরউদ্দিন।

২৮ মার্চ অধ্যক্ষের পক্ষে মানববন্ধন করেন তারা। সিদ্ধান্ত হয় ৩০ মার্চ আবার মানববন্ধন করার।

১ এপ্রিল কারাগারে দেখা করতে যান সিরাজের দুই ছেলেসহ ১২ জন। দ্রুত কিছু করার নির্দেশ দেন সিরাজ। ৩ এপ্রিল তারা সবাই আবার দেখা করতে যান। প্রয়োজনে নুসরাতকে হত্যার জন্য সিরাজ আলাদা নির্দেশ দেন নুরউদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামিম, হাফেজ কাদের, জাবেদ ও জোবায়েরকে।

৪ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত চূড়ান্ত বৈঠক হয়। উপস্থিত ছিলেন নুর, শামিম, কাদের, জোবায়ের, জাবেদ, মহিউদ্দিন শাকিল, মো. শামিম, ইমরান, ইফতেখার ও শরীফ। হত্যার প্রস্তাব উত্থাপন করেন নুরউদ্দিন, শাহাদাত শামিম ও হাফেজ কাদের।

পরিকল্পনার কথা কাউন্সিলর মাকসুদকে জানালে ১০ হাজার টাকা দেন। এর আগে মাদ্রাসার ইংরেজি শিক্ষক সেলিম আরও পাঁচ হাজার টাকা দেন।

৬ এপ্রিল পরিকল্পনা মতো মাদ্রাসার গেটে অবস্থান নেন নুরউদ্দিনসহ পাঁচজন। নুসরাতের সঙ্গে আসা ভাই নোমানকে ঢুকতে দেননি নুরউদ্দিন। সাইক্লোন সেন্টারের নিচে পাহারা দেন মহিউদ্দিন শাকিল ও শামীম।

গায়ে আগুন নিয়ে সাইক্লোন সেন্টারের নিচে নেমে আসে নুসরাত। তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করে পরীক্ষার হলে থাকা পুলিশ কনস্টেবল ও মাদ্রাসার নিরাপত্তারক্ষীরা। গায়ে আগুন দেয়ার পর সে দৌড়ে নিচে এলে সবার সামনে পানি নিয়ে আসে নুরউদ্দিন। এমনকি হাসপাতালে নিতে সিএনজি অটোরিকশাও ঠিক করে দেন তিনি। পরে অন্যদের সঙ্গে কথা বলে, ময়মনসিংহে আত্মগোপন করেন নুরউদ্দিন।

নুসরাতের গায়ে আগুন দেয়ায় সরাসরি অংশ নেয়া শাহাদাত হোসেন শামীমের জবানবন্দিতে জানা যায়, দেড় মাস আগে নুসরাত জাহার রাফিকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হন তিনি। পুরনো ক্ষোভ থেকেই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের মামলার পর তাকে বাঁচাতে উদ্যোগী হন তিনি।

জবানবন্দিতে শামীম জানান, ৪ এপ্রিল রাতে সাড়ে ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত চূড়ান্ত বৈঠকে আগুনের পোড়ানোর প্রস্তাব উপস্থাপন করেন তিনি। কেরোসিন কেনার দায়িত্বও নেন তিনি। রাফিকে দ্বিধায় ফেলতে পপিকে শম্পা নামে ডাকারও সিদ্ধান্ত হয়। থানা ও মামলার বিষয় উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিন ও কাউন্সিলর মাকসুদ দেখবেন বলে নিশ্চয়তা পাওয়া যায়।

জবানবন্দিতে জানা যায়, পরিকল্পনা মতো, উম্মে সুলতানা পপি ডেকে আনবে রাফিকে, তিনজনের জন্য বোরকা আনবে কামরুন্নাহার মনি আর কেরোসিন কিনবে সে নিজেই।

বৈঠকের সিদ্ধঅন্ত জানানো হয় কাউন্সিলর মাকসুদ, ইংরেজি শিক্ষক সেলিম ও আফসার, অধ্যক্ষ সিরাজের দুই ছেলে মিশু ও আদনানসহ পপি এবং মনিকে। সবাই একমত হয়।

৬ এপ্রিল সকালে মাদ্রাসায় এসে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বোরকা পরে তৈরি হয় সবাই। সাড়ে ৯টার দিকে মনির আনা বোরকা পরে শামীম, জাবেদ ও জোবায়ের। পৌনে দশটায় পপি রাফিকে ডেকে আনে তার বান্ধবী নিশাতকে মারধর করা হচ্ছে বলে। দুজনের পেছনে ছাদে ওঠে চারজন। রাফিকে প্রথমে ধরে পপি ও মনি। শামীম মুখ চেপে ধরে। মাটিতে ফেলে ওড়না দিয়ে হাত পা বাঁধে জোবায়ের। পরে এক লিটার কেরোসিন ঢেলে ম্যাচের কাঠি দিয়ে আগুন দেয় জোবায়ের। যাতে লাগে প্রায় পাঁচ মিনিট।

ঘটনার পর স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিনকে ফোন করে বিস্তারিত জানায় শামীম। পরে আত্মগোপন করে মুক্তাগাছায়। সেখান থেকেই শামীমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

বুধবার আবদুর রহিম স্বীকারোক্তিতে বলেন, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার নির্দেশে ও পরামর্শে নুসরাতকে হত্যার জন্য গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগানো হয়। এ জন্য ২৮ ও ৩০ মার্চ দুই দফা কারাগারে থাকা মাদ্রাসার অধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করেন। ৪ এপ্রিল সকালে অধ্যক্ষ সাহেব ‘মুক্তি পরিষদের’ সভা করা হয়। রাতে ১২জনের এক সভায় হত্যার পরিকল্পনা চূড়ান্ত ও দায়িত্ব বণ্টন করা হয়। তার (রহিম) দায়িত্ব পড়ে মাদ্রাসার গেটে। সেখানে নুর উদ্দিন, আবদুল কাদেরও ছিলেন। মাদ্রাসার ছাদে বোরকা পরে ছিলেন শাহাদাত, জোবায়ের ও জাবের। এ ছাড়া ছাদে ছিলেন মণি ও পপি।

এলএবাংলাটাইমস/এন/এলআরটি

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত