দৌড়ে পালালেন ‘বালিশকাণ্ডে’র নির্বাহী প্রকৌশলী!
টানা প্রায় ৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের এড়াতে দৌড়ে পালালেন গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুল আলম। তার বিরুদ্ধে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে ‘বালিশকাণ্ড’সহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে বুধবার (৬ নভেম্বর) সকাল ১০টা থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত মাসুদুল আলমকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক মো. নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন অনুসন্ধান দল। দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের জবাব না দিয়ে মুখ ঢেকে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন মাসুদুল আলম।
মাসুদুল আলম ছাড়াও এদিন আরো ৬ প্রকৌশলীকে দুর্নীতির বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। তারা হলেন- পাবনা গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. তারেক, তাহাজ্জুদ হোসেন, মো. মোস্তফা কামাল, উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. কামারুজ্জামান, মো. আবু সাঈদ ও মো. ফজলে হক।
জানা যায়, গত ৩ নভেম্বর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক শৌকত আকবর ও উপ-প্রকল্প পরিচালক মো. হাসিনুর রহমানসহ ৩৩ জন প্রকৌশলীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে দুদক। যাদেরকে ৬, ৭, ১১, ১২ ও ১৩ নভেম্বর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাজির হতে বলা হয়।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে ‘বালিশকাণ্ড’সহ দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগের বিষয় গত ১৭ অক্টোবর দুদক কর্মকর্তা নাসির উদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়। অপর দুই সদস্য হলেন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আতিকুর রহমান ও উপ-সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান মিরাজ।
রূপপুর প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বসবাসের জন্য নির্মাণাধীন গ্রিন সিটি আবাসন প্রকল্পের ২০ ও ১৬ তলা ভবনের আসবাব ও প্রয়োজনীয় মালামাল কেনা ও ফ্ল্যাটে তুলতে অস্বাভাবিক ব্যয় নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে গত ১৯ মে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।
দুর্নীতির নমুনা তুলে ধরে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, সেখানে একটি বালিশের পেছনে ব্যয় দেখানো হয়েছে ৬ হাজার ৭১৭ টাকা। এর মধ্যে বালিশের দাম ৫ হাজার ৯৫৭ টাকা এবং সেই বালিশ ফ্ল্যাটে ওঠানোর খরচ দেখানো হয়েছে ৭৬০ টাকা।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দুই কমিটির তদন্তেই ৬২ কোটি ২০ লাখ ৮৯ হাজার টাকার অনিয়মের কথা উঠে আসে। হাইকোর্টের নির্দেশে গত জুলাই মাসে আদালতে জমা দেয়া ওই তদন্ত প্রতিবেদনে দুর্নীতির জন্য ৩৪ জন প্রকৌশলীকে দায়ী করা হয়।
গ্রিন সিটি আবাসন পল্লীর নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনা ও তা ফ্ল্যাটে তোলায় অনিয়ম নিয়ে গত ১৬ মে একটি দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। যেখানে প্রকল্পের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের থাকার জন্য গ্রিন সিটি আবাসন পল্লীতে ১১টি ২০ তলা ও ৮টি ১৬ তলা ভবন হচ্ছে। এরইমধ্যে ৮টি ২০ তলা ও একটি ১৬ তলা ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। ২০ তলা ভবনের প্রতিটি ফ্ল্যাটের জন্য প্রতিটি বালিশ কিনতে খরচ দেখানো হয়েছে ৫ হাজার ৯৫৭ টাকা। ভবনে বালিশ ওঠাতে খরচ দেখানো হয়েছে ৭৬০ টাকা।
শেয়ার করুন